শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে করোনার টিকা দেওয়ার দাবি ছাত্র ইউনিয়নের

করোনার টিকা
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার রোডম্যাপ ঘোষণা করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন। শিক্ষা খাতের ‘ভয়ংকর দুর্দশা’ দূর করতে নিজেদের দাবিগুলোকে ‘আশু করণীয়’ বলে মনে করেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ বন্ধে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, ফলে তাঁদের আবারও শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরত আনা সহজসাধ্য হবে না। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে ছাড়াই পাঠ-কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকা, ইন্টারনেটের মন্থর গতি ও ডিভাইসের অভাবে অধিকাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীই অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমে যথাযথ অংশগ্রহণ করতে পারেননি। শতভাগ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করেই চলছে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো টিউশন ফি আদায় করার ঘৃণ্যতম চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। অ্যাসাইনমেন্টের নামে নেওয়া হচ্ছে নামে-বেনামে ফি।

ফয়েজ উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একদিকে কর্মসংস্থানের সংকট, অন্যদিকে ফুরিয়ে যাচ্ছে চাকরির বয়সসীমা। সেশনজটের ভয়াবহ চাপ সামাল দিতে একেবারেই প্রস্তুত নয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাই ঝুঁকি নিয়েও একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে চান। এমন অবস্থায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সিলেবাস পূরণ না করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেও হল খুলে দিতে রাজি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল দখল করে আছেন অছাত্ররা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা না পারছেন প্রস্তুতি নিতে, না পারছেন আবাসন-সংকট দূর করতে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন সুবিধা পর্যন্ত দিতে রাজি নয়। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই সময়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া প্রয়োজন। এই মহামারির মধ্যেও বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধ নেই। অতিরিক্ত লাভের আশায় ও নিয়মিতদের পাঠ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দেদার চলছে বাণিজ্যিক কোর্সের কার্যক্রম।

দাবিগুলো হলো করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন-ফি মওকুফ, অ্যসাইনমেন্টের নামে আদায় করা ফি ফেরত দেওয়া; নামে-বেনামে ফি আদায় করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার রোডম্যাপ ঘোষণা; সেশনজট রোধে দ্রুত এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া; পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ করা; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবাসিক হল খুলে দিয়ে আবাসনের ব্যবস্থা করে পরীক্ষা নেওয়া ও অছাত্র-সন্ত্রাসীদের হল থেকে বিতাড়ন; সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক কোর্স বন্ধ করা এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া।

আট দফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে আছে ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ২৫ জানুয়ারি সারা দেশে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক মতবিনিময় সভা ও ২৭ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে ৮ দফা দাবির সমর্থনে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি। ফয়েজ উল্লাহ জানান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি দেবে ছাত্র ইউনিয়ন।