ঢাবিতে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠেনি: উপাচার্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ গড়তে পারেননি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেক কিছুরই ঘাটতি থাকে। যা যা শিক্ষার্থীদের পাওয়া উচিত—যে পরিবেশ, আবাসন, পরিবহন, লাইব্রেরি-সেমিনার, চিকিৎসা–সুবিধা ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই আমাদের সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত নয়, ঘাটতি আছে।’


আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কার্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমের আবেদন-প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন উপাচার্য। আগামী ২১ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত পাঁচটি ইউনিটের অধীনে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। ভর্তির অনলাইন আবেদনপ্রক্রিয়া ৮ মার্চ থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।


উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার সামগ্রিক মানের জন্য হয় শিক্ষার্থীদের উপযোগী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সংযোজন লাগবে। এখনো শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ আমরা গড়তে পারিনি। সেই ঘাটতির নেতিবাচক প্রভাব শিক্ষার সামগ্রিক গুণগত মানের ওপর পড়বে। উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন আছে, আমাদের উৎসাহিতও করতে হবে। তবে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা ও মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য নানাবিধ আয়োজন ও প্রয়াস লাগবে। সেগুলো নিশ্চিত করার জন্য নানা প্রয়াস আমরা ইতিমধ্যে নিয়েছি।’


ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে উপাচার্য বলেন, আগামী ২১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক ইউনিট, ২২ মে কলা অনুষদভুক্ত খ ইউনিট, ২৭ মে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ ইউনিট, ২৮ মে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিট ও ৫ জুন চারুকলা অনুষদভুক্ত চ ইউনিটের বহুনির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আর অঙ্কন পরীক্ষা হবে ১৯ জুন। প্রতিটি ইউনিটের পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। অনলাইনে প্রার্থীদের ভর্তির আবেদনপ্রক্রিয়া ৮ মার্চ বিকেল (আজ) থেকে শুরু হয়ে ৩১ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে। টাকা জমা দেওয়া যাবে ১ এপ্রিল বিকেল চারটা পর্যন্ত। রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করেও এবার টাকা জমা দেওয়া যাবে।

উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান
ফাইল ছবি

আখতারুজ্জামান বলেন, ক, খ, গ ও ঘ ইউনিটে মোট ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হবে। এ ক্ষেত্রে ৬০ নম্বরের বহুনির্বাচনী ও ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। উত্তর দেওয়ার জন্য ৪৫ মিনিট করে সময় থাকবে।

চ ইউনিটে ৪০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষা হবে। সময় ৩০ মিনিট। এর ফলাফলের ভিত্তিতে পরে মেধাক্রম অনুযায়ী ১ হাজার ৫০০ জন ৬০ নম্বরের অঙ্কন পরীক্ষায় অংশ নেবেন। অঙ্কন পরীক্ষার জন্য ৪৫ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকবে। পাঁচটি ইউনিটেই প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ওপর ১০ করে মোট ২০ নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।

ক ইউনিটে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ–৩.৫সহ মোট ৮.৫; খ ইউনিটে আলাদাভাবে জিপিএ–৩সহ মোট ৮; গ ইউনিটে আলাদাভাবে জিপিএ–৩.৫-সহ মোট ৮ থাকতে হবে। বিভাগ পরিবর্তনের ঘ ইউনিটে নিজ নিজ ইউনিটে যোগ্যতাপূরণ সাপেক্ষে আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া চ ইউনিটে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে আলাদাভাবে জিপিএ–৩-সহ মোট ৭ থাকতে হবে।

উপাচার্য বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের ভর্তি পরীক্ষা হবে ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে। বিভাগীয় পর্যায়ের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ক্ষেত্রে আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে। সেখানে আমাদের প্রতিনিধিও যাবেন। আসনবিন্যাসের সিদ্ধান্তটি তাঁরা সম্মিলিতভাবেই নেবেন। আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা পছন্দ অনুযায়ী কেন্দ্র নির্বাচন করতে পারবেন। তবে আবেদনকারীদের আমরা নিজ নিজ শহরকে কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিতে চাই।’

ভর্তির আবেদন-প্রক্রিয়া উদ্বোধনের এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. ইমদাদুল হক, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন মুহাম্মাদ আবদুল মঈন, অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মাহমুদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে হওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পাঁচটি ইউনিটেই আবেদন ফি এবার ৬৫০ টাকা। গত শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এটি ছিল ৪৫০ টাকা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহ-উপাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নিতে হচ্ছে বলে এ বছর পরীক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার খরচ অনেক বেড়েছে। তাই আবেদন ফি ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষেও এই মডেলে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে এ খাতের জন্য নিশ্চয়ই বরাদ্দ রাখা হবে। তখন ফি কিছুটা কমে আসবে।

ভর্তিবিষয়ক যাবতীয় তথ্য ও নির্দেশনা পাওয়া যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (https://admission.eis.du.ac.bd)৷