দৃষ্টান্ত স্থাপন করল রাজশাহীর অগ্রণী স্কুল ও কলেজ

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশনাটি হলো, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা ব্যয় করা না হলে তা আবার শিক্ষার্থীদের ফেরত দিতে হবে। ওই নির্দেশনা মেনে শিক্ষার্থীদের ২৯ লাখ ২৯ হাজার ৩৩০ টাকা ফেরত দিয়েছে রাজশাহী নগরের অগ্রণী স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা শিক্ষার্থীদের ছাড় দিয়েছে। নগরের আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরত বা টিউশন ফির সঙ্গে অব্যয়িত টাকা সমন্বয় করেছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি।

গত বছর ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে জেলা শিক্ষা কার্যালয়গুলোতে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না বা করা হলে তা ফেরত দেবে। অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। এ ছাড়া অন্য কোনো ফি যদি অব্যয়িত থাকে, তা একইভাবে ফেরত দেবে বা টিউশন ফি এর সঙ্গে সমন্বয় করবে।

ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, একইভাবে ২০২১ সালের শুরুতে যদি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন কোনো ফি—যেমন টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন গ্রহণ করবে না, যা ওই নির্দিষ্ট খাতে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করতে পারবে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় আগের মতো সব ধরনের যৌক্তিক ফি গ্রহণ করা যাবে।

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী জেলায় ৫৩৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শুধু মহানগরের মধ্যে রয়েছে ৯৮টি। অধিদপ্তরের চিঠি তাঁরা এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পাঠিয়ে বিষয়টি অবগত করিয়েছেন। কিন্তু কেউ ফেরত দিয়েছে কি না, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই।

তবে রাজশাহী নগরের অগ্রণী স্কুল ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি ছাড়া খেলাধুলা খাতে ৮০ টাকা, লাইব্রেরি ৬০ টাকা, ম্যাগাজিন ২৫ টাকা, নিষ্কৃতি ১০ টাকা, গৃহনির্মাণ ৬০০ টাকা, ছাত্রকল্যাণ ৩০ টাকা, আসবাব ৩০ টাকা, ল্যাব ফি ১৫০ টাকা, পরিচয়পত্র ৪০ টাকা, বিদায় ১৫ টাকা ও রেড ক্রিসেন্ট খাতে ১৫ টাকা করে মোট ১ হাজার ৫৫ টাকা ফি আদায় করে থাকে। গত বছরের এই আদায় করা অর্থ থেকে অধিদপ্তরের নির্দেশনা পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৭২৪ জন সাধারণ ছাত্রের কাছ থেকে আদায় করা ২৮ লাখ ৭৩ হাজার ৮২০ টাকা ও পোষ্য কোটার ১২২ জনের ৫৫ হাজার ৫১০ টাকা ফেরত দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় এবার ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা শিক্ষার্থীদের ছাড় দিয়েছে।

এই প্রতিষ্ঠানে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শাপলা খাতুন বলেন, গত বছর কিছু টাকা স্কুল থেকে ফেরত দিয়েছে। তবে কত টাকা ঠিক মনে নেই। এবার ওই সব খাতে কোনো টাকা স্কুল থেকে নেয়নি।

অগ্রণী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হক বলেন, অধিদপ্তরের চিঠির আলোকে তাঁরা গত বছরের অব্যয়িত টাকা ফেরত দিয়েছেন এবং এ বছরের ফি আদায় করেননি।