মেয়েদের আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বনির্ভর করাই লক্ষ্য

ঢাকার হাটখোলার রোডে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্ সিটির ক্যাম্পাসছবি: সংগ্রহীত

সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। রাজধানীর হাটখোলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাস। নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক বেগজাদী মাহমুদা নাসির। নারীশিক্ষা আন্দোলনে আমৃত্যু নিরলস কাজ করে গেছেন তিনি।

পুরান ঢাকায় মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। এখানকার মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কেবল মেয়েদের জন্য সীমিত না রেখে ছেলেদেরও ভর্তি করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা হয়তো অনেক বেড়ে যেত। কিন্তু সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই তাদের আদর্শে অটল ছিল। মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে দেশের শিক্ষা খাতে ও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য। তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতা নিশ্চিত করতে রয়েছে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, প্রোগ্রামিং ল্যাব, নেটওয়ার্কিং ল্যাব, ইলেকট্রিক্যাল ডিজিটাল সার্কিট ল্যাব, ফিজিকস ল্যাব ও মিডিয়া ল্যাব।

কেবল ‘পাস করিয়ে দেওয়া’ নয়, শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে আলাদা করে শিক্ষার্থীদের যত্ন নেওয়া হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষে সনদ পাওয়ার মতো যোগ্যতা নিশ্চিত করা যায়। অর্থের অভাবে মেয়েদের পড়ালেখায় যেন বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকেও থাকে কড়া নজর।

মেয়েদের আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে কালচারাল ক্লাব, ফিল্ম ক্লাব, জেন্ডার ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব, ইংলিশ ক্লাব, সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার ক্লাব, মিডিয়া ক্লাব, ডিবেট ক্লাব ও স্পোর্টস ক্লাবের আয়োজনে ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ নানা সহশিক্ষা কার্যক্রম চলে সারা বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ লাইব্রেরিতে রয়েছে নানা বিষয়ের রেফারেন্স বই, নানা দেশের ও নানা ভাষার সাহিত্যের বই। পাশাপাশি এখানে মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশলও শেখানো হয়।

প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের কথা

আয়েশা সিদ্দিকা

আয়েশা সিদ্দিকা, ট্রেইনি প্রোগ্রামার, সিসনোভা ইনফরমেশন সিস্টেমস লিমিটেড

বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে ছিল বাসার মতো। এখানকার শিক্ষকদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও তাঁদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আমার চলার পথকে সহজ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাওয়ার কারণে আমার পরিবারকে কোনো চাপের সম্মুখীন হতে হয়নি। আজ আমার মতো হাজারো ছাত্রী তাদের গন্তব্যের পথে, যাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।

শামীমা সুলতানা

শামীমা সুলতানা

সহকারী প্রযোজক ও উপস্থাপক, দীপ্ত টিভি

ব্যক্তিগত কারণে শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তখন আশার আলো হয়ে আসে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি। ২০১১ সাল। টিনশেডের তিনটি ক্লাসরুম, একটি লাইব্রেরি, একটি কম্পিউটার ল্যাব আর আমরা চার–পাঁচজন সহপাঠী। এই নিয়ে শুরু হয়েছিল যাত্রা। ২০১৫ সালে স্নাতক শেষ করার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় কর্মজীবন শুরু করি বেসরকারি টিভি চ্যানেল দীপ্ত টিভিতে। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে।

ইসরাত কবির

ইসরাত কবির

শিক্ষার্থী, বিবিএ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমার বাসা থেকে অনেক দূরে। তার ওপর ভালো মানের পড়ালেখা হয় কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তখন জানলাম সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির কথা। ভর্তি হয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে আমার সব ভয় কেটে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, অনুষ্ঠান করেছি। এখন আমি আরও আত্মবিশ্বাসী।

এক নজরে ভর্তিপ্রক্রিয়া

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ–২.৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা স্নাতকে ভর্তির জন্য ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ–৫ এবং ইংরেজি মাধ্যমে ‘ও’ লেভেলে ন্যূনতম পাঁচটি বিষয়ে জিপিএ–২.৫ ও ‘এ’ লেভেলে ন্যূনতম দুটি বিষয়ে জিপিএ–২ থাকা ছাত্রীরা সরাসরি ভর্তি হতে পারবেন। বিস্তারিত: admission.cwu.edu.bd

বৃত্তি বা বিশেষ সুবিধা

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সব কটি বিষয়ে জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের (গোল্ডেন জিপিএ–৫) ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ টিউশন ফি ছাড়ের সুবিধাও আছে। সেমিস্টারে চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে ছাত্রীদের ২৫ শতাংশ থেকে শতভাগ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড় দেওয়া হয়, বছরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা। ছাত্রীরা কমপক্ষে তিনটি কিস্তির মাধ্যমে টিউশন ফি জমা দিতে পারেন।

পাঠদানের বিষয়

স্নাতক পর্যায়ে: বিবিএ, ইংলিশ অ্যান্ড মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেস, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ এবং সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ।

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে: এমবিএ, ইংরেজি এবং সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ।

যোগাযোগ: ৬ হাটখোলা রোড, ঢাকা-১২০৩। ফোন: ৯৫৯১৫৫১, ৯৫৬৭৪৯৯, ০১৯৮৮৮১৯০১০, ০১৯৮৮৮১৯০১১। ওয়েবসাইট: cwu.edu.bd