রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অবৈধ’ নিয়োগ: আলোচনায় প্রশাসন, সাংসদ ও নিয়োগপ্রাপ্তরা

ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের শেষ দিনে ‘অবৈধভাবে’ অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তরা কয়েক দিন ধরেই স্বপদে যোগদানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। গত শনিবার সকালে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, সিনেট ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়েছিলেন। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন গতকাল রোববার রাতে তাঁরা রুটিন উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহার বাসভবনসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভবনের তালা খুলে দেন। আন্দোলনকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন। আজ সোমবার দুপুরে প্রশাসনের সঙ্গে চাকরিপ্রাপ্তদের সমস্যা নিয়ে নেতারা কথা বলবেন—এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী গতকাল রাতে তালা খুলে দেন।

এদিকে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ মো. আয়েন উদ্দিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তিনি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান।

পরে তিনি প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স কক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আলোচনায় রয়েছেন রুটিন উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা ও সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া। তবে প্রশাসনের আর কে কে আলোচনায় বসেছেন, তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। আলোচনা শুরুর পর এক পর্যায়ে অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্তদেও ডেকে নেওয়া হয়।

সাংসদ আয়েন উদ্দিন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, একটা সমাধানের জন্য তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁকে ঢাকা থেকেও এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে অচল অবস্থার সৃষ্টি না হয়। এভাবে নয়, তাঁরা যাতে বৈধভাবে নিয়োগ পান, তাঁদের সেই চেষ্টাটাই করা উচিত। এটাই তাঁদের জন্য ভালো হবে বলে তিনি মনে করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থবছরের শেষ ফাইন্যান্স কমিটি হওয়ার কথা ছিল। সেদিন সকাল ১০টায় সভা হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টার মধ্যেই চাকরিপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, সিনেট ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনে তালা দেন। এতে সেদিনের সভা স্থগিত হয়ে যায়। নিয়োগপ্রাপ্তরা পদায়নের দাবিতে গতকাল রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তালাবদ্ধ রাখেন।

নিয়োগপ্রাপ্তরা বলছেন, ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভা রয়েছে। তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই সভায় তাঁদের নিয়োগ একেবারে বাতিল করা হবে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। যে পর্যন্ত তাঁদের চাকরিতে যোগদান করা হবে না, সে পর্যন্ত তালাবদ্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন তাঁরা। গতকাল কোষাধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর দপ্তরে এলেও আর কোনো প্রশাসনিক ব্যক্তি আসেননি।
চাকরিতে যোগদানের জন্য আন্দোলনকারী আতিকুর রহমান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সমস্যার কথা স্থানীয় আওয়ামী লীগ অবগত। আজ সাংসদ আয়েন উদ্দিন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এ বিষয়ে প্রশাসনের ও তাঁদের সঙ্গে বসবেন। তিনি আরও বলেন, নিয়োগটা অস্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু অবৈধ নয়। এটি নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রশাসন তাঁদের নিয়োগের যোগদান আটকে রেখেছে। তাঁরা চান, এর একটি স্থায়ী সমাধান হোক। তিনি আবার দুপুর সাড়ে ১২টা দিকে প্রথম আলোকে বলেন, আয়েন ভাই ও ডাবলু ভাই আলোচনায় বসেছেন। তাঁরা বের হলে বোঝা যাবে আলোচনা কেমন হলো।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘আজকে একটা সভা আছে এ বিষয়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন ছাত্র আয়েন উদ্দিন আসবেন।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে আবদুস সোবহান উপাচার্য হিসেবে শেষ কর্মদিবসে (৬ মে) ১৩৮ জনকে অ্যাডহকে (অস্থায়ী) নিয়োগ দিয়ে পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সেদিন এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে সেদিনই বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তদন্ত করে গত ২৩ মে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। শেষ অবৈধ নিয়োগে তদন্ত কমিটি বিদায়ী উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে। আবদুস সোবহানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর মধ্যেই নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যোগদানের জন্য ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন।