সংঘর্ষের পেছনে চাঁদাবাজি

স্থানীয় লোকজনের হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ফাইল ছবি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষের পেছনে ছাত্রলীগের দুই নেতার চাঁদা চাওয়াকে দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামের এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করার অভিযোগও করেছেন তাঁরা। ঘটনাটি স্থানীয় সাংসদকে জানিয়ে প্রতিকারও চাওয়া হয়েছে। সাংসদ পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টরকে তা অবহিত করেছেন। কিন্তু অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়নি।

অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডল ও কার্যনির্বাহী সদস্য পিয়াস ইজারদার চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবি, ক্রিকেট খেলার সময় ঘটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দারা ছাত্রদের মেসে হামলা চালায়। এতে অন্তত ৩৫ শিক্ষার্থী আহত হন।

এরপরই ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্ররা নিরাপদ নন—এই কারণ দেখিয়ে পরদিন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ঢুকে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পর ঢাকা, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমে পড়েন। গত রোববার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৬টি হলের সাতটিতেই ছাত্ররা অবস্থান করছিলেন।

গেরুয়া গ্রামের ১৯ তারিখের ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতার চাঁদা দাবির বিষয়টি সামনে এসেছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হয়ে আসছেন। এর শুরু ২০০৩ সালে। তখন নির্যাতনের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। ক্ষমতার পালাবদলে ১১ বছর ধরে সেই জায়গা দখল করেছে ছাত্রলীগ। উৎপাতকারী এই ছাত্রের সংখ্যা ৩০-৪০ জনের বেশি নয় বলে তাঁরা জানান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত ঘেঁষে গেরুয়া গ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি ফটক দিয়ে গ্রামের সংযোগ। সেই ফটকের পাশেই গড়ে উঠেছে একটি বাজার। শিক্ষার্থীদের অনেকেই গ্রামটিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে ভাড়া বাসায় থাকা ছাত্রের সংখ্যা আরও বেড়ে
যায়। গ্রামের বাসিন্দারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করেন।

গেরুয়া গ্রামটি সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান সরদার গতকাল প্রথম আলোর কাছে পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, এখানকার বাসিন্দারা এখন অতিষ্ঠ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদেরকে অনেকে বাসা ভাড়া দিতে চান না। চুন থেকে পান খসলে গ্রামের লোকজনকে মারধর করেন। বাড়ি তুলতে গেলে চাঁদা চান। বাজারের দোকান থেকে চাঁদা নেন। জায়গা দখলে আসেন। গ্রামের কিছু লোকও শক্তি দেখাতে তাঁদের ডেকে আনেন। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভ থেকেই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে।

চাঁদা দাবি থেকে সংঘর্ষ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি মাসের শুরুর দিকে গেরুয়া বাতিঘর ক্লাব একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। এতে নিরন্তর নামে গেরুয়া গ্রামেরই আরেকটি ক্লাবের হয়ে খেলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পিয়াস ইজারদার। ১১ ফেব্রুয়ারি টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় পার্শ্ববর্তী ভাটপাড়ার ভাইকিং ক্লাবের মুখোমুখি হয় নিরন্তর ক্লাব। খেলার একদম শেষের দিকে পিয়াসের সঙ্গে ভাইকিং ক্লাবের খেলোয়াড়দের হাতাহাতি হয়। পিয়াসের ডাকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মাঠে এসে চেয়ার ভাঙচুর করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মণ্ডলও সেখানে ছিলেন।

ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজকদের একজন গেরুয়া বাতিঘর ক্লাবের মো. নজরুল ইসলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ এলাকায় তাঁর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা আছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি অস্বাভাবিক দেখে আমরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যাই। অভিষেক ও পিয়াস তখন আমাদের খোঁজে বাড়িতে তাঁদের ‘ছোট ভাই’দের পাঠান। ভয়ে আমিসহ আয়োজক কমিটির পাঁচজন আট দিন বাড়ির বাইরে ছিলাম। এর মধ্যে খেলা আয়োজক কমিটির সদস্য কাওসার আহমেদের দোকানে তালা লাগিয়ে দেন তাঁরা।’

নজরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি যখন খারাপের দিকে যেতে থাকে, তখন তাঁরা মীমাংসার জন্য অভিষেক ও পিয়াসের সঙ্গে বসার চেষ্টা করেন। এলাকার মেম্বার তাঁদেরকে নিয়ে স্থানীয় সাংসদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের কাছে যান। প্রতিমন্ত্রী তাঁদের পুলিশ সুপারের কাছে পাঠান। পুলিশ সুপার পাঠান আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে। ওসি বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন উপপরিদর্শক (এসআই) হারুণ উর রশিদকে। এসআই হারুণ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মেহেদী সরদারকে জানান। এর মধ্যেই ১৭ ফেব্রুয়ারি নজরুলের বন্ধু ও খেলা কমিটির সদস্য মারুফকে ডেকে নিয়ে যান ছাত্রলীগ নেতা অভিষেক ও পিয়াস। তাঁরা দুই লাখ টাকা দিলে সমস্যার সমাধানের কথা ভাববেন বলে মারুফকে জানান।

মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের সামনে পিয়াসের সঙ্গে দেখা করি। পিয়াস শুধু আমার বিষয়টি দেখবেন বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। আর খেলা আয়োজক কমিটির পর পাঁচজনের সবার বিষয় সমাধানে দুই লাখ টাকা চান। ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটার মধ্যেই টাকা নিয়ে যেতে বলেন।’

নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, বিষয়টি তাঁরা গ্রামের মুরব্বিদের জানান। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে তিনি বাড়ি ফেরেন। খবর পেয়ে অভিষেক ও পিয়াস তাঁদের ‘ছোট ভাইদের’ তাঁর বাড়িতে পাঠান। চারটি মোটরসাইকেলে তাঁরা আটজন আসেন। তাঁরা নজরুলকে পেটাতে পেটাতে গেরুয়া বাজারে অভিষেক ও পিয়াসের ভাড়া বাসায় ঢোকান। যা দেখতে পান বাজারে থাকা লোকজন। চাঁদা দাবির বিষয়টি তত দিনে স্থানীয় অনেকেই জানতেন। পরে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে নজরুলকে উদ্ধারে বাসাটি ঘিরে ফেলেন।

ওই পরিস্থিতিতে পিয়াস তাঁদের উদ্ধারের জন্য ফেসবুকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’–এ পোস্ট দেন। তা দেখে গেরুয়া ও আশপাশের গ্রামে ভাড়া থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও গেরুয়া বাজারে এসে জড়ো হন। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যায়।

চাঁদা দাবির বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা অভিষেক মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রায়ই আমাদের কাছে আসেন। আমরা সেগুলোর সমাধান করে দিই। অথচ ক্রিকেট খেলার ওই সমস্যার সমাধানে তাঁদের বারবার ডেকেও পাওয়া যায়নি। সংঘর্ষের পর এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসী মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছেন। তাই বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাঁদাবাজির গল্প ফাঁদছেন। এর কোনো সত্যতাও নেই।’

পিয়াস ইজারদারও চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে তাঁদের ওপর গ্রামবাসী পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে বলে তিনি দাবি করেন। খেলার আয়োজক নজরুলকে তুলে নিয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁকে তুলে আনা হয়নি। মীমাংসার জন্য কথা বলতে নিয়ে আসা হয়েছিল।’

গ্রামবাসীর ক্ষোভ বহুদিনের

গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ২০০৩ সালে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গেরুয়া বাজারে হামলা করেছিলেন। বাজারের একটি হোটেলে খেতে আসা এক ছাত্রীর গায়ে ইচ্ছাকৃত হাত দেওয়ার অভিযোগে সেই হামলা করা হয়। তখন তিনটি দোকান পুড়িয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ঘটনা সামাল দিতে এসে পুলিশ উল্টো আব্দুল মালেক নামের এক ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি করে।

আব্দুল মালেক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গুলি খেয়ে তাঁর পায়ে পচন ধরে। তাঁর সেই পা এখনো ঠিক হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে সময় তাঁকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কথা রাখেনি।

তুচ্ছ ঘটনায় দোকানে তালা

গেরুয়া বাজারে মা টেলিকমের দোকান বন্ধ রয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। দোকানের মালিক হাশমত আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কানন সরকার সেদিন তাঁদের দোকানে এসেছিলেন। তাঁকে একটু অপেক্ষা করতে বলায় দোকানে থাকা তাঁর ভাগনে নাহিদকে গালিগালাজ করেন। এরপর আরেক ছাত্রকে ডেকে এনে দোকান বন্ধ করতে বলেন। এরপর থেকে দোকান বন্ধ আছে।

কানন সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য দোকানটিতে গিয়েছিলেন। ছোট একটি ঘটনা নিয়ে দোকানদার তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তাই ইউপি মেম্বারের উপস্থিতিতে বিষয়টির সমাধান হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি দোকান বন্ধ রাখতে বলেছেন।

জায়গা দখলে মদদ

গেরুয়ার বাসিন্দারা বলেন, এলাকায় কোনো পক্ষের বা ব্যক্তির আধিপত্য বিস্তারেও যুক্ত ছাত্রদের একটা অংশ। আবু বকর সিদ্দিক নামের গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, জায়গা নিয়ে মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব ছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি সেই জায়গা দখল করতে তাঁর মামাতো ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে আসেন। তাঁরা নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে সেখানে দেয়াল তুলতে শুরু করেন। তিনি নিরুপায় হয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দিলে আশুলিয়া থানা থেকে পুলিশ আসে। এরপর ছাত্ররা চলে যান। ওই ছাত্রদের পরিচয় তাঁর জানা নেই।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যা বললেন

গ্রামবাসীর এসব অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি জায়গাতেই এমন ২৫-৩০ জন থাকে, যারা নানান রকম ঘটনা ঘটায়। গ্রামবাসীদের যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী এ রকম উত্ত্যক্ত করে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে শিক্ষার্থীদের ওপর দল বেঁধে হামলা চালাল। ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো।’

ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গেরুয়াবাসী যেসব অভিযোগ করছে, সেগুলোর সত্যতা তাদের উপস্থাপন করা উচিত। শুধু অভিযোগ করলেই তো হবে না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই বছরে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। ভবিষ্যতে যদি কোনো অভিযোগ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসী দেয়, তাহলে বিবেচনা করা হবে।’

কী করেছিল প্রশাসন

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমন্ত্রী তাঁকে একবার ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর গন্ডগোলের বিষয়টি দেখতে বলেছিলেন। তিনি আশুলিয়া থানার থানার ওসিকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আশুলিয়া থানার ওসি কামরুজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন উর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের আগের দিন গ্রামবাসীকে নিয়ে ইউপি সদস্য থানায় এসেছিলেন। তাঁরা ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের কথা বলেন। তিনি (এসআই হারুন) এসব অভিযোগ লিখিত আকারে দিতে বলা হয়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মেহেদী ইকবালকেও জানিয়েছিলেন তিনি। এর পরদিনই সংঘর্ষের খবর পায় পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মেহেদী ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১ ফেব্রুয়ারি খেলা নিয়ে যে ঝামেলা হয়, সেই ঝামেলার বিষয়টি ১৭ ফেব্রুয়ারি আমাকে জানান এসআই হারুন। তিনি বলেছিলেন যে, শিক্ষার্থীরা এলাকাবাসীকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তাঁকে জানাই, ক্যাম্পাসে এলে সবাই বসে বিষয়টি মীমাংসা করা যাবে, আমি সহযোগিতা করব। এরপর বসার আগেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’