স্মার্টফোন কিনতে ৮ হাজার করে ঋণ পাবেন ৪১৫০১ শিক্ষার্থী

স্মার্টফোন কিনতে ৪১ হাজার ৫০১ অসচ্ছল শিক্ষার্থী বিনা সুদে আট হাজার টাকা করে ঋণ পাচ্ছেন
ছবি: রয়টার্স

করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষার জন্য স্মার্টফোন (মোবাইল) কিনতে দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ হাজার ৫০১ জন অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে বিনা সুদে আট হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর অথবা অধ্যয়নকালীন চারটি কিস্তিতে বা এককালীন আসল টাকা শিক্ষার্থীরা পরিশোধ করতে পারবেন।

আজ বুধবার ইউজিসির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইউজিসির অন্যান্য সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি থাকবে। অনিশ্চিত এই পরিস্থিতিতে গত ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক সভায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর জুলাই থেকে দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু ক্লাস শুরুর পর শিক্ষকেরা দেখতে পান, বিভাগভেদে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন না।

করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষার জন্য স্মার্টফোন কিনতে বিনা সুদে আট হাজার টাকা করে ঋণ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য বলছে, ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের সমস্যার কারণেই মূলত শিক্ষার্থীদের বড় অংশ ক্লাসে যোগ দিচ্ছেন না। অনেকের অনাগ্রহও আছে। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যার কারণে ঠিকমতো ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না। এ ছাড়া অনলাইনে কেবল ক্লাস হচ্ছে, পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেশনজট হচ্ছেই।

এমন পরিস্থিতিতে যেসব শিক্ষার্থীর ডিভাইস ও ইন্টারনেট খরচের সামর্থ্য নেই, তাঁদের তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ইউজিসি। এ জন্য যেসব শিক্ষার্থীর ডিভাইস কেনার আর্থিক সক্ষমতা নেই, সেসব শিক্ষার্থীর নির্ভুল তালিকা গত ২৫ আগস্টের মধ্যে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলেছিল ইউজিসি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোট ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠায় ইউজিসিতে। প্রথমে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তাতে গড়ে প্রায় ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর এই সুবিধা ছিল না বলে জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পরে অতি প্রয়োজন বিবেচনায় এই হার ১৫ শতাংশের মধ্যে করে তালিকাটি সংশোধন করে দিতে বলে ইউজিসি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংশোধিত তালিকা পাঠায়।

ইউজিসি জানিয়েছে, ওই তালিকা অনুযায়ী আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৮ হাজার ৫৫৬ জন অসচ্ছল। মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় এই হার ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪৩ হাজার।

অন্যদিকে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থী সবচেয়ে কম খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অসচ্ছল শিক্ষার্থীর হার ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, ১৫ শতাংশ বা তার বেশি অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনায় অবস্থিত শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ১০ শতাংশের বেশি এবং ১৫ শতাংশের কম অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় আছে ২০টি। আর ১০ শতাংশের কম অসচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হয়েছে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

বর্তমানে সারা দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইউজিসি জানিয়েছে, এগুলোর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য তাদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী প্রয়োজন নেই। বাকি ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয় অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের তালিকা দিয়েছে। সচ্ছল ও অসচ্ছল মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৮৬ জন।