পাহাড়ে প্রাথমিকের পর ঝরে পড়ে ৪০ শতাংশ শিশু

পার্বত্য অঞ্চলে কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় অনেক দূরে। ফলে এখানে শিশুরা প্রাথমিক পার হলেও মাধ্যমিক থেকে ওপরের দিকে পড়ার সুযোগ পায় কম। এ কারণে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রাথমিকের পরই ঝরে যায়।

স্কুলে যাচ্ছে জুমচাষি পরিবারের দুই শিক্ষার্থী। সম্প্রতি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক উদয়পুর গ্রামে
ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন কাচালং বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী লিমা চাকমা। তার বাড়ি স্কুল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম গবছড়ি এলাকায়। বাড়ির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নেই। তাই প্রতিদিন গবছড়ি থেকে কাচালাং স্কুলে যাওয়া–আসা সম্ভব নয়। লিমা বাঘাইহাটে একজনের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তার তিন ভাইবোনের লেখাপড়া প্রাথমিকের পর বন্ধ হয়ে যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে এভাবে অনেক শিশু মাধ্যমিকের নাগাল পায় না। তাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায় প্রাথমিকেই। এই সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। কাছাকাছি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকা, দারিদ্র্য, আয়রোজগারের চাপ এবং সচেতনতার অভাবে পঞ্চম শ্রেণি পার হতে না হতেই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। কিছু শিক্ষার্থী অবশ্য পাশের জেলায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে কিংবা নিজ জেলায় মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। আবার মাদ্রাসা থেকেও অনেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

পার্বত্য এলাকা বাদে সারা দেশে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে যেতে যেতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার গড় হার প্রায় ২০ শতাংশ। আবার ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার মধ্যবর্তী সময়েও হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের শিশুরা। মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির পর এসএসসি পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ ঝরে পড়ে। এ হারও সমতলের চেয়ে অনেক বেশি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের চার বছরের প্রতিবেদন তুলনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি (এপিএসসি) থেকেও প্রতিবেদন তৈরির জন্য তথ্য নেওয়া হয়। তথ্য নেওয়া হয় বাংলাদেশ এডুকেশন স্টাডিজ থেকেও। এপিএসসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১৮ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৬।

■ পার্বত্য এলাকায় মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির পর এসএসসি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ঝরে পড়ে।

■ মাধ্যমিক স্কুল তুলনামূলক কম, দূরদূরান্ত থেকে এসে পড়তে চায় না।

■ খাগড়াছড়িতে প্রাথমিক ৫৯৬ ও অথচ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১৪টি।

■ মাধ্যমিকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিয়েও স্কুলে আনা কঠিন।

■ প্রাথমিকের পর শিশুরা রোজগারে নামে, মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।

■ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় দারিদ্র্যের হার প্রায় ৫০ শতাংশ।

তথ্য অনুযায়ী, সমতলের অনেক জেলায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী কিছুটা বেড়ে যায়। পার্শ্ববর্তী জেলা ও মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থী এসে এখানে ভর্তি হয়। যেমন চট্টগ্রামে ২০২২ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ১১১। ২০২৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার। আগের বছরও প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে বেশি ভর্তি হয়।

চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা সদ্য খাগড়াছড়ি থেকে বদলি হয়ে এখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সমতলে বাইরের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থী এসে ভর্তি হয়। পাহাড়ে দারিদ্র্য ও দূরত্ব ইত্যাদির কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পঞ্চমের চেয়ে কমে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় রয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয় তো আর সেভাবে নেই।

খাগড়াছড়ির চিত্র

খাগড়াছড়ি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৯৬। ৯টি উপজেলায় এই স্কুলগুলো ছড়ানো। এখানে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। জেলায় মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১১৪টি। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের অবস্থান উপজেলা সদরের কাছাকাছি। এ কারণে দুর্গম এলাকা থেকে এসব বিদ্যালয়ে এসে পড়ালেখা করা কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তাই পঞ্চম শ্রেণির পর পড়ালেখা আর এগোয় না পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ কিশোরের।

খাগড়াছড়ি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। বর্তমানে এর শিক্ষার্থী ৩৩০ জন। তাদের অর্ধেকের বেশি আসে পাঁচ মাইল পথ পায়ে হেঁটে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিতালী ত্রিপুরা তিন ঘণ্টা হেঁটে ছোট খাগড়াছড়ি থেকে গাড়ির রাস্তায় ওঠে। এরপর গাড়িতে করে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে।

মিতালী বলল, তারা তিন ভাইবোন। সবাই বাড়ির কাছাকাছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছে। কাছাকাছি কোনো উচ্চবিদ্যালয় নেই বলে এক ভাইয়ের পড়ালেখা আর এগোয়নি। সে এখন চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় কাজ করে। কাজের পাশাপাশি দশম শ্রেণিতে পড়ছে।

খাগড়াছড়ি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অং ফু মারমা প্রথম আলোকে বলেন, মাধ্যমিকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হয়। এরপরও শিক্ষার্থীদের দূরদূরান্ত থেকে স্কুলে আনা কঠিন হয়। অনেকে রোজগারে নেমে পড়ে। অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় স্কুলে পড়তে পড়তেই। এ কারণে পঞ্চম শ্রেণির পর অনেকের পক্ষেই স্কুলে থাকা সম্ভব হয় না।

আরও পড়ুন

খাগড়াছড়ি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল ১৪ হাজার ৪৯১ জন। ওই শ্রেণিতে পাসের হার পুরো জেলায় ৯৮ শতাংশের বেশি। অথচ ২০২২ সালে পুরো জেলায় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী কমে দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজার। এ সংখ্যা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর তুলনায় ৬৪ শতাংশ কম। এর মধ্যে কিছু কিছু শিক্ষার্থী যদি অন্য কোনো জেলার বিদ্যালয় বা মাদ্রাসায় চলেও যায়, সেটাও ৫ শতাংশের বেশি কোনোভাবেই হবে না।

এর আগে ২০২১ সালে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। ২০২৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে মোট এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৮ হাজার ২৮৯ জন। এবারের পরীক্ষার্থীরা ২০১৮ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছিল। ওই বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে জেলায় মোট শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ১০ হাজার। ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত ঝরে পড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আবার ২০১৭ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার। ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে যেতে পারেনি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দুর্গম এলাকাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সব শিশুকেই প্রাথমিকের আওতায় আনার চেষ্টা থাকে। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয় সেভাবে নেই। এ ছাড়া দারিদ্র্যও এখানে বড় সমস্যা। এসব কারণে প্রাথমিকের পর অনেকে কাজে নেমে পড়ে। এ কারণে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ে অনেকে।

খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম মোসলেম উদ্দিন প্রথম আলোকে বললেন, কাছাকাছি বিদ্যালয় না থাকায় অনেকে দূরে গিয়ে পড়তে চায় না। এ ছাড়া পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নারীদের ওপর নানা নির্যাতনের ঘটনায়ও কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।

রাঙামাটির চিত্র

রাঙামাটি জেলায় ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক কম। ২০১৮ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষার্থী ছিল। অথচ আগের বছর পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ১৩ হাজার। সে হিসাবে পরের বছর ঝরে পড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে ৭ হাজার ২৪৯ জন এবার রাঙামাটি জেলা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে হিসাব করা হলে ঝরে পড়েছে ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এই জেলায় ২০২১ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল ১১ হাজার ৩৩০ জন। পরের বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৭ হাজার ৮৩৫ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৬৯ শতাংশ ভর্তি হয়। ২০২১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ৮১ শতাংশ। করোনার আগে ২০১৯ ও ২০২০ সালে ওই শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ৭৬ শতাংশ করে শিক্ষার্থী।

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির কাচালং বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভদ্রসেন চাকমা বলেন, অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসে মাধ্যমিকে পড়তে চায় না। উপবৃত্তি দিয়েও তাদের স্কুলমুখী করা যায় না। তাদের কর্মমুখী হয়ে যেতে হয়। অনেকের বিয়েও হয়ে যায়।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৃদুলকান্তি তালুকদার বলেন, স্কুলের দূরত্ব, দারিদ্র্য, জলাভূমি পাড়ি দেওয়ার কষ্ট—এসব মিলিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী কমে যায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে বাল্যবিবাহ ও জুমচাষে যুক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণও রয়েছে।

বান্দরবানের চিত্র

বান্দরবানে ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয় ৪ হাজার ৬৯৭ জন। জেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওই জেলায় মোট শিক্ষার্থী ছিল প্রায় আট হাজার। অথচ ২০১৭ সালে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১২ হাজার ৫৩৯ জন। সে হিসাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সময় ঝরে গেছে ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। আবার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম পর্যন্ত ঝরে গেছে ৪০ শতাংশ।

একই জেলায় ২০২১ সালে ১২ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণিতে ছিল। ওই বছর সমাপনী পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী পরের বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার শিক্ষার্থী। ঝরে পড়ে ৩৮ শতাংশ।

জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, পাহাড় আর সমতলের হিসাব আলাদা। পাহাড়ে প্রতিবন্ধকতা অনেক। তাই ওপরের দিকে শিক্ষার্থী কম হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র্যের তীব্রতা

দারিদ্র্যের সঙ্গে শিক্ষার একটি বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে দারিদ্র্য গভীর প্রভাব ফেলে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পাহাড়ে বহু কারণের মধ্যে শিক্ষার আলো না পৌঁছার অন্যতম কারণ দারিদ্র্যের কশাঘাত।

খাগড়াছড়ির শিক্ষাবিদ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রীলা তালুকদার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক। কিন্তু মাধ্যমিক পুরোপুরি অবৈতনিক নয়। কিছু উপবৃত্তি থাকলেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পক্ষে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করা অনেক কঠিন। তাঁরা প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগে ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় এ হার প্রায় ৫০ শতাংশ।

২০২১ সালে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এবং যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে একটি সমীক্ষা করে। সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে গরিব জেলা কুড়িগ্রাম। এর ৫৪ শতাংশ মানুষই হতদরিদ্র। দ্বিতীয় স্থানে আছে বান্দরবান। এর ৫০ শতাংশ হতদরিদ্র। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা জেলার শীর্ষে রয়েছে রাঙামাটি। উপজেলা ভিত্তিতে দেশে সবচেয়ে গরিব হলো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম। এ ছাড়া বান্দরবানের লামা, থানচি, খাগড়াছড়ির সদর উপজেলা, পানছড়ি, মানিকছড়িও দরিদ্র উপজেলার তালিকায় রয়েছে।

আরও পড়ুন

আবার ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর মধ্যে চাকমাদের ৭১, সাঁওতালদের ৪৮ দশমিক ৮, মারমাদের ৬৫, ত্রিপুরাদের ৭৭, গারোদের ৪৭, ম্রোদের ৯৮, খাসিয়াদের ১৭ এবং মণিপুরিদের ৮ শতাংশ হতদরিদ্র।

শিক্ষাবিশেষজ্ঞ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে মোটামুটি সহনীয় দূরত্বে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি। উঁচু–নিচু পাহাড়ি পথ পেরিয়ে স্কুল থেকে ফিরতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেখানকার নিরাপত্তা নিয়েও ভীতি কাজ করে। এ কারণে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী, বিশেষ করে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম। এ ছাড়া জুমচাষের সময় কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদের মাঠে কাজ করতে হয়। একসময় সরকার পাহাড়ে জুমের সময় স্কুল বন্ধ রেখে রমজান মাসে খোলা রাখার চিন্তা করেছিল। যাতায়াত–সংকট, স্কুলের দূরত্ব, নিরাপত্তা শঙ্কা ও শিক্ষক–সংকট দূর করার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সুফল আসতে পারে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন– বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, বান্দরবান; জয়ন্তী দেওয়ান, খাগড়াছড়িসাধন বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি]