সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকের পদ বাড়ছে

অবশেষে দেশের সরকারি কলেজগুলোতে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত শিক্ষকের পদ বাড়ছে। চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে কলেজগুলোর প্রতিটি বিষয়ে শিক্ষকের পদ হবে কলেজের শ্রেণি অনুযায়ী ১০ থেকে ১৬টি পর্যন্ত।

তবে বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে পদসংখ্যা আরও একটি করে বেশি হবে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়েও পদসোপান ঠিক করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরসহ (মাউশি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে কলেজগুলোতে পদ সৃষ্টি হবে এই কাঠামো অনুযায়ী।

ইতিমধ্যে বড় ১১টি কলেজের পদ সৃষ্টির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নতুন কাঠামো অনুযায়ী পদ সৃষ্টি হলে কলেজগুলোর পাঠদানে বিদ্যমান সংকট দূর হবে। এর ফলে শিক্ষার মানও বাড়বে।

দেশে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে সাড়ে ছয় শর বেশি সরকারি কলেজ রয়েছে। পুরোনো জনবলকাঠামো অনুযায়ী সরকারি কলেজ ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের মোট সৃষ্ট পদ আছে ১৫ হাজারের মতো। যদিও অনেক পদ শূন্য। ফলে অনেক কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের কলেজগুলোতে সমস্যা তীব্র।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব নিয়ে কয়েক বছর ধরে কেবল আলোচনা ও তথ্য বিনিময় হয়েছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকের মত হচ্ছে একসঙ্গে এত পদ সৃষ্টি বাস্তবসম্মত নয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় আগের মতো আলাদা কলেজ হিসাব করে পদ সৃষ্টি হবে।

তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা বিভাগ থেকে দেশের বড় ১১টি সরকারি কলেজে (রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, খুলনার ব্রজ লাল কলেজ, সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজ, রাজশাহী কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ, রংপুরের সরকারি কারমাইকেল কলেজ, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ ও কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ) প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯৩টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়। সেটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, সভায় ১৯৮৭ সালে গঠিত তৎকালীন সমীক্ষা কমিটির তৈরি করা পদসোপান (স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ বা প্যাটার্ন) নিয়ে আলোচনা হয়। জনপ্রশাসনের পদ সোপান অনুসারে যেকোনো ক্যাডারে নিচের দিকে পদসংখ্যা বেশি থাকে, ওপরের দিকে পদসংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৭ সালের ‘স্টাফিং প্যাটার্ন’ কিছুটা পরিবর্তন করে পদসোপান অনুমোদন করা হয়েছে।

সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস ও সাবসিডিয়ারি), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলোকে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ শ্রেণিতে ভাগ করে পদ (পদসোপান) সৃষ্টি হবে। ভাগটি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে তারা সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস ও সাবসিডিয়ারি), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানো হয়—এমন কলেজে একেকটি বিষয়ে মোট পদ হবে ১৬টি। এর মধ্যে ২টি অধ্যাপক, ৩টি সহযোগী অধ্যাপক, ৫টি সহকারী অধ্যাপক এবং ৬টি পদ হবে প্রভাষকের।

উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস ও সাবসিডিয়ারি) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানো হয়—এমন কলেজগুলোর একেকটি বিষয়ে পদ হবে ১০টি। সমসংখ্যক (১০টি) পদ হবে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস ও সাবসিডিয়ারি) ও স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে পড়ানো হয় এমন কলেজগুলোর একেকটি বিষয়ে।

তবে যেসব কলেজে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি রয়েছে, সেসব কলেজে ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে আরও একটি করে প্রভাষকের অতিরিক্ত পদ যুক্ত হবে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ের পদ হবে কলেজের শ্রেণি অনুযায়ী ৩ থেকে ৭টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতিমধ্যে ১১টি সরকারি কলেজে পদ সৃষ্টির বিষয়ে সংশোধন করে প্রস্তাব করা হয়েছে।

নিয়মানুযায়ী পদ সৃষ্টির বিষয়ে প্রথমে মাউশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত শেষে সেটি পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে সেটি যাবে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায়। মাউশির কর্মকর্তারা আশা করছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতিবাচক হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিও ইতিবাচক হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জেলা শহরে অবস্থিত বড় কলেজগুলোতে নতুন এই কাঠামো অনুযায়ী পদ সৃষ্টি করা হবে। তারপর বাস্তবতার নিরিখে অন্যান্য কলেজে পর্যায়ক্রমে এই কাঠামো অনুযায়ী পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই কাঠামো অনুযায়ী পদ সৃষ্টি হলে কলেজগুলোর সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।