‘মূলত শিক্ষা ও গবেষণাটা কোন পদ্ধতিতে, কত সহজে সমৃদ্ধ করা যায়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবে “এআই”, অর্থাৎ পদ্ধতিগত উন্নতির পথ দেখাবে। এটি কখনোই সৃজনশীলতা ও মানবিকতার জায়গা থেকে মানুষকে রিপ্লেস করতে পারবে না। কারণ, “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)” কখনো “ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সকে (ইআই)” রিপ্লেস করতে পারবে না।’
শিক্ষার ক্ষেত্রে ‘এআই’ ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক নওজিয়া ইয়াসমিন এ কথা বলেন।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ছিল ‘আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য ‘এআই ও শিক্ষা: প্রযুক্তির যুগে মানবিক ক্ষমতা রক্ষা’। দিবসটি উপলক্ষে প্রথম আলো ডটকমের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ টক শো: ‘উচ্চশিক্ষায় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সাফল্যগাথা’। মাহবুবা সুলতানার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি গত শুক্রবার সকাল ১০টায় একযোগে প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার বৈশ্বিক তাৎপর্য, চ্যালেঞ্জ, সুযোগ, উচ্চশিক্ষায় ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র প্রভাব এবং বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই এবারের আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসের গুরুত্ব ও প্রতিপাদ্য নিয়ে কথা বলেন নওজিয়া ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘এআইয়ের উৎকর্ষ বর্তমানে বিশ্বে ব্যাপক। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তাই এটিকে যদি শিক্ষায় প্রয়োগ করা হয়, তবে শিক্ষাকে সহজতর করতে আরও বেশি সাহায্য করবে। এসব কথা মাথায় রেখেই মূলত আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবসের প্রতিপাদ্যে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা”কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
এ পর্যায়ে উপস্থাপক প্রায় ২৩ বছরের পথচলায় উচ্চশিক্ষার প্রসারে স্টেট ইউনিভার্সিটির সাফল্যগাথা শুনতে চান। নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে আমাদের যাত্রা। শুরু থেকেই আমরা দুটি জিনিসের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি—মানসম্মত শিক্ষা ও বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা। মানসম্মত শিক্ষার ক্ষেত্রে, মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম অনুসরণ করছি। যেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষক দিয়ে বাস্তবমুখী এবং মানবিক মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের তৈরি করছি। তারই ধারাবাহিকতায়, প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে “স্কুল অব হেলথ সায়েন্স” চালু করেছি, যার অধীনে ২০০৩ সাল থেকে পাবলিক হেলথ এবং ২০০৪ সাল থেকে ফার্মেসি বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে। এটি ২৩ বছরের সুদীর্ঘ পথচলার অন্যতম গৌরব।’
উপস্থাপক জানতে চান, শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে প্রযুক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে? আর স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ কতটুকু প্রযুক্তিবান্ধব শিক্ষা দিচ্ছে?
উত্তরে নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছি। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির যে অনুষঙ্গগুলো রয়েছে, সেগুলোকেই আমরা সুন্দরভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। উদাহরণস্বরূপ আমাদের স্কুল অব হেলথ সায়েন্সের অনেক শিক্ষার্থী বরিশালের ভাসানচর থেকেও অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস করছে। অনেকের আর্থিক সমস্যা এবং প্রযুক্তি বা ডিভাইসে সে পিছিয়ে থাকতে পারে। আমরা সবার সমস্যাগুলো শুনে, সে অনুযায়ী সমাধান দিয়ে একটি “ব্লেন্ডেড ক্লাসরুম” গড়ার চেষ্টা করছি। এ কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই শিক্ষার্থীবান্ধব এবং প্রযুক্তিবান্ধব হতে পেরেছে।’
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা লাভে শিক্ষার্থীদের বর্তমানে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে? এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনার প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভূমিকা রাখছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য সবাই চেষ্টা করে। তবু কিছু প্রতিবন্ধকতা থেকে যায়। যার মধ্যে অর্থের অভাব, ভালো শিক্ষকের অভাব এবং প্রযুক্তির অভাব অন্যতম। আমাদের স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ রেখেছি। আর্থিক অভাবের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কিস্তির মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে। অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। এত কিছুর উদ্দেশ্য হলো, কোনো প্রকার চ্যালেঞ্জের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনা যেন থেমে না যায়।’
বাস্তবমুখী শিক্ষাদানে স্টেট ইউনিভার্সিটি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা প্রসঙ্গে নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ বিষয়ে “আউটকাম বেইজ কারিকুলাম” গঠনের গুরুত্ব দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। তার অংশ হিসেবে ফ্যাকাল্টি মেম্বার, অ্যালামনাই এবং স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটা যোগাযোগ রক্ষা করি। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা, জব ফেয়ার এবং “অন স্পট রিক্রুটমেন্ট”-এর মতো ব্যবস্থা রেখেছি। যেখানে তাঁদের কর্মজীবনে প্রবেশের পথটা সুগম হয়। পাশাপাশি তাঁদের মানবিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কোর্সের ব্যবস্থা রেখেছি। সুতরাং শিক্ষার্থীদের শুধু শিখিয়ে সার্টিফিকেট দিই না, বরং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কর্মের ব্যবস্থা করে দিই। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। এ বিষয়টি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের আলাদা করে।’
এ ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উদ্যোগ উল্লেখ করতে গিয়ে নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো সমস্যায় ওয়ান–স্টপ সলিউশন দিয়ে থাকি। যেটাকে মেন্টরশিপ বলি। মানে একজন শিক্ষকের অধীনে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী থাকেন। তিনি তাঁদের পরিবার থেকে শুরু করে অর্থনৈতিকসহ সামগ্রিক অবস্থা জানবেন। সে অনুয়ায়ী শিক্ষার্থীকে সমাধান দেবেন। তাই সহজেই সব শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা সমতা খুব নিশ্চিত করতে পারি।’
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য এবং উপকারী করতে নীতিনির্ধারকেরা এবং আপনার প্রতিষ্ঠান কীভাবে সহযোগিতা করতে পারেন?
উপস্থাপক মাহবুবা সুলতানার এমন প্রশ্নে নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, ‘আপনি দেখবেন আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়কে সেভাবে দেখা যায় না। এখানেই নীতিনির্ধারকদের সহায়তার প্রয়োজন। তাই আর্থিকভাবে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে এ খাতকে তারা সমৃদ্ধ করতে পারে। আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক ধরনের সহায়তার প্রয়োজন হয়। সেই সহযোগিতা যদি করতে পারি, তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশে হোক বা বিদেশে—তাদের প্রতিভাটা দেখাতে পারবে। সম্প্রতি স্টেট ইউনিভার্সিটি “ই স্পোর্টস কার্নিভ্যাল” প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেটার মাধ্যমে কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্ভাবনগুলো সঠিকভাবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করতে পারবে, যা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করবে। কারণ, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক শিক্ষায় অনেক নতুন বিষয় সংযোজিত হবে বা হচ্ছে। তাই আমরা চাই সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ দেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নওজিয়া ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘স্টেট ইউনিভার্সিটি সব সময় তাদের শিক্ষার্থীদের কর্মমুখর ও বাস্তবমুখী শিক্ষা দিয়ে থাকে, যা আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষক ও আধুনিক শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে নিশ্চিত করে থাকি। তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হলে আপনি শুধু একজন দক্ষ মানবসম্পদ নয়, বরং আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় পারদর্শী একজন মানুষ হিসেবে প্রস্তুত হবেন।’