শিক্ষায় অনেক পরিবর্তন, মান বাড়ছে কতটা

গত তিন দশকে শিক্ষায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নে বড় ঘাটতি থাকছে, আছে সমন্বয়হীনতা।

ধারণাগতভাবে এবং সময়ের বিবেচনায় নতুন শিক্ষাক্রম ভালো। কিন্তু ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা না গেলে সেই ‘ভালো’ কতটা কাজে দেবে, সেটাই প্রশ্ন
ছবি: প্রথম আলো

দেড় দশক আগে মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। দীর্ঘ সময়েও এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা তো দূরের কথা, শিক্ষকদের বড় অংশই তা ঠিকমতো রপ্ত করতে পারেননি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) গত বছরের একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৩৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পুরোপুরিভাবে এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এখন এই পদ্ধতি বাদ যাচ্ছে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম।

যদিও প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রস্তুতির পর চালু হওয়া এই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। শিক্ষাবর্ষ চালুর প্রায় দেড় মাসের মধ্যে দুটি শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার করেছে সরকার। আরও তিনটি বই সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সম্প্রতি বলেছেন, শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে পরিবর্তন রাতারাতি হয় না, সময় লাগে। কিন্তু যদি খুব ভালোভাবে করতে পারেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে শিখতে শুরু করবে। এর মধ্য দিয়ে একটা বড় পরিবর্তন আশা করা যায়।

আরও পড়ুন

তবে শিক্ষামন্ত্রী আশার কথা শোনালেও গত তিন দশকে শিক্ষায় যেসব পরিবর্তন এসেছে, তার অনেক বিষয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি বাস্তবায়নেও গলদ ছিল। শিক্ষার নানা পর্যায়ে অনেক পরিবর্তন এলেও মান কতটা বেড়েছে, তা নিয়ে শিক্ষাবিদদের মধ্যে
প্রশ্ন রয়েছে।

শিক্ষাবিদদের পর্যবেক্ষণ হলো শিক্ষার নানা স্তরে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে পরিবর্তনগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় অনেক পরিবর্তনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে শেখার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকছে। তাই তাঁদের পরামর্শ হলো, যুগের চাহিদা অনুযায়ী, শিক্ষায় পরিবর্তন করতেই হবে। আর তা না হলে বর্তমানে দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর অনেকে পিছিয়ে থাকবে। পরিবর্তনের বিষয়টি দেশের বাস্তবতায় কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

* শিক্ষায় নানা ধরনের পরিবর্তন হলেও শিক্ষার্থীদের শেখায় ঘাটতি থাকছে।
* শিক্ষাবর্ষের আড়াই মাস হতে চললেও নতুন শিক্ষাক্রমের তিন বই সংশোধন করতে পারেনি এনসিটিবি।
* প্রত্যাহার করা দুটি বই কীভাবে পড়ানো হবে, তা–ও অস্পষ্ট।
* কমছে না কোচিং–প্রাইভেটের চাপ।

শিক্ষায় সরকারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ইতিবাচক। যেমন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই দেওয়া, প্রায় সব শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করা, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ভর্তিতে ছেলে-মেয়ের সংখ্যাগত সমতার বিষয় বড় অর্জন। লটারির মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি, অনলাইনে ভর্তির কাজ সম্পন্ন করার মতো কিছু সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ফল দিচ্ছে।

আরও পড়ুন

‘সর্বনাশের’ শুরু যখন

দেশে মাধ্যমিকে ১৯৯২ সালে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) ব্যবস্থা চালু করা হয়। কিন্তু দেশে এই পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারায় কার্যত শিক্ষার ‘সর্বনাশের’ শুরুটা তখন থেকেই হয়। তখন ‘প্রশ্নব্যাংক’ নামে এমন এক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যাতে প্রতিটি বিষয়ে ৫০০টি এমসিকিউ মুখস্থ করলেই ৫০ নম্বর পাওয়া নিশ্চিত ছিল। ‘প্রশ্নব্যাংক’ বাতিল হলেও এখনো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রশ্নপত্রের কিছু অংশ এমসিকিউ এবং কিছু অংশ সৃজনশীল পদ্ধতিতে হয়। কিন্তু দেশে এমসিকিউ এমনভাবে করা হয়, তাতে অনেক ক্ষেত্রেই নোট-গাইড বই পড়লেই উত্তর দেওয়া সহজ হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান মাধ্যমিক স্তরের ৩৬ জন শিক্ষকের ওপর করা একটি গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বেশ কিছু শিক্ষকের ক্ষেত্রে দেখেছেন সঠিকভাবে প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না। এমনকি নোট–গাইড বই থেকেও সঠিক প্রশ্ন নিতে পারেন না কিছু শিক্ষক। তিনি বলেন, সারা বিশ্বেই এমসিকিউ পদ্ধতিতে মূল্যায়নে নির্ভরযোগ্যতা বেশি। কিন্তু দেশে সঠিকভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমসিকিউয়ের আরেকটি সমস্যা হলো, পরীক্ষার হলে সহজেই উত্তর বলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

জিপিএ পদ্ধতি

২০০১ সালে পাবলিক পরীক্ষায় নম্বর বা শ্রেণিভিত্তিক সনাতন পদ্ধতির ফলাফল–ব্যবস্থা বাদ দিয়ে জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ) পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ শুরু হয়। এতে প্রথম দিকে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক (জিপিএ–৫) পাওয়া ছিল যেন ‘সোনার হরিণ’। প্রথম বছর ৭৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছিল। বছর বছর বেড়েছে জিপিএ–৫। ২২ বছর ধরেই এই পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ শিক্ষার্থী।

অবশ্য এতসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থী শিক্ষার পরবর্তী স্তরে অনেক সময় ধারাবাহিকতা রাখতে পারছে না। উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষায়ও অনেকে ভালো করতে পারেন না।

হঠাৎ পরিবর্তনের চাপ শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে

২০০৯ সালে অনেকটা হঠাৎ করেই দেশে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা নামে একটি পাবলিক পরীক্ষা চালু করে সরকার। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। একই সঙ্গে অভিভাবকদের ঘাড়ে বাড়তি খরচের বোঝা চাপে।

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণায় দেখা যায়, পিইসি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দেশের ৮৬ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হতো। আবার ৭৮ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে এই পরীক্ষার জন্য কোচিং ছিল বাধ্যতামূলক।

১১ বছর পর ২০২০ সাল থেকে পিইসি পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শিক্ষাবিদদের মত উপেক্ষা হঠাৎ করেই গত বছরের শেষ দিকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে পরীক্ষার বোঝা শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে রয়েই যায়। এটি নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

আবার এই বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়েও সমস্যা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ফল প্রকাশের পর তা ভুলের কারণে তা স্থগিত করা হয়। সংশোধিত ফলে যারা বৃত্তি পেয়েছিল, তাদের অনেকেই বাদ পড়ে। এ নিয়ে শিশুদের ওপর যেমন প্রভাব পড়েছে, সেই সঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও ক্ষুব্ধ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীর পরামর্শ হলো, বৃত্তি পরীক্ষার পরিবর্তে উপবৃত্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সিদ্ধান্তহীনতা, গাফিলতি

গত জানুয়ারিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণিতেও তা শুরু হবে। কিন্তু বিতর্কের মুখে শিক্ষাবর্ষ শুরুর ১ মাস ১০ দিন পর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি পাঠ্যবই প্রত্যাহার করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। একই সঙ্গে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েরও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি।

কিন্তু শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় আড়াই মাস হতে চললেও প্রত্যাহার করা ওই দুটি বই কীভাবে পড়ানো হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এনসিটিবি। তেমনি অপর তিনটি বইয়ের সংশোধনীও দিতে পারেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা একধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছেন।

পাঠ্যবই সংশোধন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করেছিল। কিন্তু প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই দুটি বই প্রত্যাহার হয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম গতকাল রোববার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা কাজ করছেন।

নতুন শিক্রাক্রমে প্রথাগত পরীক্ষা কমে যাচ্ছে, জিপিএর পরিবর্তে ফলাফল হবে তিন স্তরে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় পড়ানো হবে, বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে দুটি পরীক্ষা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে বড় অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ধারাবাহিকভাবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের রেকর্ড সংক্ষরণ করা হবে।

অনেক অভিভাবকের আশঙ্কা, ২০০৬ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে যখন বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন (এসবিএ) ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, তখন শিক্ষকদের প্রাইভেট-টিউশনি বেড়ে গিয়েছিল। আবার ধারাবাহিক মূল্যায়নের রেকর্ড সংরক্ষণ করেন না বিপুলসংখ্যক শিক্ষক। যেমন গত বছরের মাউশির একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৬ হাজার ৭৮৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ধারাবাহিক মূল্যায়নের রেকর্ড পূর্ণাঙ্গভাবে সংরক্ষণকারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৫১ জন। আংশিকভাবে সংরক্ষণকারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৭১৪ জন। রেকর্ড সংরক্ষণ করেন না এমন শিক্ষকের সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৬৭ জন। অর্থাৎ বিদ্যমান বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়নব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ করছে না।

এখন বিদ্যমান কোচিং-প্রাইভেট বন্ধ না করলে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়েও এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এখনই নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষকদেরও কেউ কেউ প্রাইভেট-টিউশনি করাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ধারণাগতভাবে এবং সময়ের বিবেচনায় নতুন শিক্ষাক্রম ভালো। কিন্তু ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা না গেলে সেই ‘ভালো’ কতটা কাজে দেবে, সেটাই প্রশ্ন।

কোচিং–প্রাইভেটের চাপ

মুখস্থবিদ্যার বদলে শিক্ষার্থীরা বুঝে পড়বে, শিখবে, নোট-গাইড বা অনুশীলন বই থাকবে না—এমন নানা আশার কথা শুনিয়ে ২০০৮ সালে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। ২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষা থেকে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে প্রথম পরীক্ষা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোচিং-প্রাইভেট বেড়েছে। এমনকি শিক্ষকদের কোচিং-প্রাইভেট নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০১২ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা করলেও অধিকাংশ শিক্ষক তা মানছেন না। নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও পড়াচ্ছেন।

রাজধানীর একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, অবস্থাটি এমন হয়েছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছেই সন্তানদের পড়াতে হয়।

সমন্বয়হীনতা

প্রধানত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা নিয়ে বৃত্তির ব্যবস্থা চালু করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বন্ধই থাকছে। ২০১০ সাল থেকে জেএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে এই বৃত্তি দেওয়া হতো। ২০২০ সাল থেকে এই পরীক্ষা বন্ধ। তবে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার অবস্থান ধরে রাখলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তা মানছে না।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়েও শুরু থেকেই দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা চলছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মূল্যায়নে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখার কথা থাকলেও অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতেও পরীক্ষা বহাল রেখেছে। সমন্বয়হীনতা এমন স্তরে গিয়েছে যে প্রাথমিক মন্ত্রণালয় এখন চাইছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এনসিটিবির মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরে বই না ছাপিয়ে নিজেদের উদ্যোগে ছাপাতে।

এমন উদাহরণ আরও আছে। ২০১০ সালে করা জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি মূলত দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে।

শেখায় ঘাটতি

এত এত পরিবর্তন হলেও শিক্ষার্থীদের শেখানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। মাউশি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইংরেজিতে অবস্থা খারাপ। একই শ্রেণিতে গণিতে ৪৩ শতাংশের খারাপ বা গড়পড়তা অবস্থা। দেশে প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ইংরেজি বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হয়। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করার পরেও ইংরেজিতে সাধারণ যোগাযোগেও হিমশিম খান। এতে কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আছে। আবার শিক্ষার অনেক পরিবর্তন দেশের বাস্তবতায় পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্যও নয়। নতুন শিক্ষাক্রমও অনেক বেশি আশাবাদী। এমনকি ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমও ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে শিক্ষার মানে প্রভাব পড়ছে।