খুলনার স্টেম ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
বৈজ্ঞানিক গবেষণার পদ্ধতি মেনে বাস্তবিক সমস্যা সমাধান ও ব্লক বেজড কোডিংয়ের মাধ্যমে আরডুইনো রোবোটিকসের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা দিতে খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারে গতকাল শনিবার আয়োজিত হলো দুই দিনব্যাপী অ্যাডভান্সড স্টেম ক্যাম্প। স্টেম অ্যান্ড আইসিটি স্কিলস ফর দ্য গার্লস অব কোস্টাল এরিয়া প্রকল্পের আওতায় উপকূলের রামপাল, তালা ও সাতক্ষীরা উপজেলার ছয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৬০ শিক্ষার্থী দুই দিনব্যাপী এই আবাসিক ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করছে।
স্টেম প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সাল থেকে তিনটি উপজেলার এ ছয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে–কলমে ব্যবহারিক পরীক্ষা–নিরীক্ষাসহ প্রোগ্রামিং ও রোবোটিকসের ওপর হাতে–কলমে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তিনটি উপজেলায় মোট ছয়টি স্টেম ফেস্ট আয়োজিত হয়, যেখানে দক্ষতার ভিত্তিতে ৬০ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে এই অ্যাডভান্সড স্টেম ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
দুই দিনের বাস্তবিক সমস্যা সমাধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কীভাবে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত করতে হয় এবং একটি গবেষণাপত্র বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা পোস্টার তৈরি করা যায়, তা নিয়ে প্রথম দিন একটি বিস্তারিত সেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড ও সায়েন্স কংগ্রেসের একাডেমিক কো–অর্ডিনেটর তানভির উল ইসলাম, মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগারের সমন্বয়ক ফারজানা লিমা ও কুয়েট রিসার্চ সোসাইটির সভাপতি নাফিস আহমেদ। প্রথম দিনের দ্বিতীয় ভাগে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে নিজেরা একটি বাস্তবিক সমস্যা খুঁজে বের করে, ডেটা সংগ্রহ করে ও গবেষণার পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি বৈজ্ঞানিক পোস্টার তৈরি করে। দিনের শেষ ভাগে ক্যাম্পের বিচারকদের সামনে নিজ নিজ গবেষণা পোস্টার উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পের প্রথম দিন শেষ হয়। ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ও ব্লক বেজড কোডিংয়ের খুঁটিনাটি জানার মধ্য দিয়ে। এরপর ব্লক বেজড কোডিংকে আরডুইনো কিটের সঙ্গে যুক্ত করে একটি রোবোটিকস এক্সপেরিমেন্ট হাতে–কলমে তৈরি করে শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষতার প্রাথমিক ধারণাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, প্রোগ্রামিং ও রোবোটিকসের ওপর আরও গভীরে জ্ঞান অন্বেষণে উৎসাহিত করা। দুই দিনব্যাপী এই ক্যাম্পে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে হাতে–কলমে অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পে আসা কমরেড রতন সেন কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ কুমার সাহা বলেন, ‘এ রকম ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীদের যদি হাতে–কলমে প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত রাখা সম্ভব হয়, তাহলে উপকূল থেকেও প্রযুক্তিতে দক্ষ লোকবল তৈরি করা সম্ভব হবে। আমাদের শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে আমরা আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারব।’ ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া বশরী জানায়, ‘উপজেলার বিজ্ঞান উৎসবে আমরা যখন বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে অংশগ্রহণ করি, তখন সেই সমস্যা নিয়ে এত গভীরে ধাপে ধাপে চিন্তা করার কথা আমরা কখনোই ভাবিনি। এই ক্যাম্পে বিজ্ঞান গবেষণার নির্দেশনা পেয়ে মনে হয়েছে, গবেষণার এই ধাপগুলো আমার বিজ্ঞান প্রকল্পকে আরও সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট করতে সাহায্য করবে।’
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মকাণ্ডে মেয়েদের, বিশেষ করে উপকূলের পিছিয়ে পড়া ও কম সুবিধাপ্রাপ্ত মেয়েশিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা মালালা ফান্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের তিনটি উপকূলীয় উপজেলা খুলনার রূপসা, বাগেরহাটের রামপাল ও সাতক্ষীরার তালার মোট ছয়টি মাধ্যমিক স্কুলের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মেয়েশিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান, গণিত, প্রোগ্রামিং ও রোবোটিকসের ওপর দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক। বিজ্ঞপ্তি