বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ বেশি শিক্ষার্থীদের

শিক্ষা মেলায় বৃত্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়
ছবি: দীপু মালাকার

মো. রেজাউল হক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ১৯৮৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর বিদেশে পড়তে যেতে চেয়েছিলেন। তবে রাজধানীর মগবাজারে পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণে অনেক টাকা খরচ হচ্ছিল বাবার। তাই তিনি ছেলেকে (রেজাউল হক) বিদেশে পাঠাতে পারেননি। এখন ছেলে–মেয়ের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছেন রেজাউল হক।

আজ শনিবার রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত শিক্ষা মেলায় রেজাউল হক এসেছিলেন মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহাকে নিয়ে। খোঁজ করছিলেন বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ আছে কতটা। তাঁর মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।

রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে টরন্টোতে একটি স্কুলে পড়ছে। কোভিডের সময় গেছে। সংক্রমণের ভয়ে ওই সময় এ রকম মেলার আয়োজন না হওয়ায় খুব বেশি খোঁজ করতে পারেননি। মেলায় এসে ভালো লাগছে যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক তথ্য পাচ্ছেন।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও নানা কর্মসূচির বিষয়ে ৩৫টির মতো স্টল রয়েছে। স্টলগুলোর সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলায় আসা অনেক শিক্ষার্থী বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সিয়াম আহমেদ ও স্কলাস্টিকার এ লেভেলের ছাত্র ফারহান রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘুরে দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী ধরনের সুযোগ–সুবিধা দিচ্ছে। আগামী বছর তাঁদের আবেদন করতে হবে। এ কারণে আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মেলায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও নানা কর্মসূচির বিষয়ে ৩৫টির মতো স্টল আছে
ছবি: দীপু মালাকার

এজি চার্চের শিক্ষার্থী নুজহাত জারিন তাসনিম তৌমি, কিডস টিউটোরিয়ালের সুমাইয়া কামাল চৌধুরী ও মোবাশ্বেরা সুমেরা একসঙ্গে এসেছিলেন মেলায়। তাঁরা বললেন, আন্ডার গ্র্যাজুয়েশনে পূর্ণ বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ কম। তবে কিছুটা বৃত্তি কীভাবে পাওয়া যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সে রকম সুযোগ আছে কি না, সেটা তাঁরা খোঁজ করছেন। কারণ, বৃত্তি না পেলে তাঁদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া কঠিন হবে।

দিনব্যাপী মেলায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন অধিবেশন ছিল। সেই অধিবেশনগুলোতে বসার স্থানও ছিল পরিপূর্ণ। সেখানে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন ও গ্র্যাজুয়েশনে ভর্তির জন্য বৃত্তি কীভাবে পাওয়া যায়, কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়, কোন বিষয়টিকে ভর্তির সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়া হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর ভিসা প্রক্রিয়া কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কেও মেলায় ধারণা দেওয়া হয়।

একটি অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসা নারিসা নাশিন, যায়নাব মাঈনুদ্দিন ও নাভিদ হায়দার তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছিলেন। তাঁরা বলেন, শুধু ভালো রেজাল্ট হলেই বিদেশে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়, বৃত্তি পাওয়া যায়—বিষয়টি তেমন নয়। যুক্তরাষ্ট্রে যাঁরা ভর্তি নেন, তাঁরা বাংলাদেশের কোন স্কুল–কলেজ নামকরা, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না। তাঁরা মূলত দেখেন, শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদনের জন্য অল্প কথায় নিজেকে কতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলে ধরতে পারলেন। শিক্ষার্থীর অন্যান্য বিষয়ে যেমন খেলাধুলা, গানবাজনা, রান্না ইত্যাদি কোন বিষয়ে কতটা আগ্রহী, কতটা দক্ষতার সঙ্গে নিজের আগ্রহের বিষয়গুলো বর্ণনা করতে পারেন। এই লেখাগুলো থেকেই শিক্ষার্থীর মান সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের তাঁরা আরও বলেন, একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। থেমে গেলে বা হতাশ হলে হবে না। অনেকের লক্ষ্য থাকে শুধু বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ে লিবারেল আর্টস নিয়ে পড়লে সুবিধা বেশি। সেখানে প্রয়োজনে বিষয় পরিবর্তন করাও সহজ। বৃত্তি পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আরও বাড়তি কিছু পাওয়া যেতে পারে। তাই আরও কোনো সুযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে, আরও সুযোগ চাইতে হবে।

মেলার স্টলগুলোর সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়
ছবি: দীপু মালাকার

আরেকটি সেশনে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল স্কলাস্টিকার শিক্ষক জেরিন সাবরিনা চৌধুরী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, অনেক অভিভাবক সন্তানদের ইচ্ছেমতো বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজ করতে বলেন। পরে দেখা যায়, সন্তান এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজ করে, যেখানে ভর্তির বাজেট নেই অভিভাবকের। তাই অভিভাবকদের এ নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। বাজেট জানাতে হবে। যাতে সন্তানেরা সেই বাজেটের মধ্যে বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ খোঁজে। অনেক সময় কিছু সংস্থা বিদেশে নানা সুযোগ–সুবিধা দিয়ে ভর্তির চটকদার বিজ্ঞাপন দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

মেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েস প্রোগ্রাম’ নিয়ে জানতেও শিক্ষার্থীরা স্টলের সামনে ভিড় করছিলেন। শিক্ষার্থী বিনিময়ের এই কর্মসূচিতে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারেন। যাচাই–বাছাইয়ের পর নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে ১০ মাসের জন্য পড়ার সুযোগ পায়। সেপ্টেম্বর মাসে নতুন আবেদন নেওয়া হবে। স্টলে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কর্মসূচি নিয়ে জানাচ্ছিলেন এস এম রাফসান মাহমুদ নামের একজন শিক্ষার্থী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গত বছর তিনি এই কর্মসূচিতে নির্বাচিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে পড়েছেন। শুধু ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায় বলে ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের। তিনি নিজে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আরও পড়ুন