উপবৃত্তির টাকা পেতে শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রির সময় বাড়ল

সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০২৩ সালের ষষ্ঠ শ্রেণিতে, বিশেষ ক্ষেত্রে নবম শ্রেণি ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত উপবৃত্তি যোগ্য শিক্ষার্থী নির্বাচন ও তথ্য অন্তর্ভুক্তি চলছে।

গতকাল রোববার পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য এইচএসপি এমআইএস সার্ভারে এন্ট্রি করার সুযোগ ছিলো। সে সময় আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠানো তথ্য যাচাই ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া জন্য এইচএসপি পিএমইএটিতে পাঠাতে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

উপবৃত্তির তথ্য এন্ট্রির সময় বাড়ানোর বিষয়টি উপজলা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি।

রোববার পাঠানো চিঠিটিতে বলা হয়েছে,  ২০২৩ সালের ষষ্ঠ, নবম (বিশেষ ক্ষেত্রে) এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তথ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসপি-এমআইএসে এন্ট্রি ও উপজেলায় পাঠানোর সময়সীমা ১৯ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত ছিলো।

বিশেষ বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায় থেকে এইচএসপি-এমআইএসে শিক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি এবং উপজেলায় পাঠানোর সময়সীমা আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসপি-এমআইএসে তথ্য এন্ট্রি এবং পাঠানোর অপশন ২৭ মার্চ রাত ১২ টায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

সব উপজলো বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসপি-এমআইএসে উপজেলায় পাঠানো তথ্য যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এইচএসসি-পিএমইএটিতে পাঠানোর সময়সীমা ৩০ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।

সব উপজেলা ও থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিষয়টি জানিয়ে তথ্য এন্ট্রি মনিটর করতে বলা হয়েছে চিঠিতে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য এন্ট্রির কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সৃষ্ট যেকোনো সমস্যার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন।

যেভাবে শিক্ষার্থী নির্বাচন

উপবৃত্তি পেতে কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। দারিদ্র্য ও প্রক্সি মিন্স টেস্টিং যৌথ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তথ্য যাচাই–বাছাই এবং একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। শুধু ষষ্ঠ ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আওতায় উপবৃত্তি পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।

তবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যারা উপবৃত্তি কর্মসূচির বাইরে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নতুন ভর্তি হয়েছে, তারা উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

তবে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে না। শিক্ষার্থী অন্য কোনো সরকারি উৎস থেকে উপবৃত্তি বা অভিভাবক শিক্ষা ভাতা গ্রহণ করলে উপবৃত্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এ ছাড়া শিক্ষা বোর্ড থেকে মেধা বা সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

শিক্ষার্থী নির্বাচন কীভাবে

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নীতিমালা ও গাইডলাইন অনুসরণের মাধ্যমে সারা দেশে ষষ্ঠ, নবম ও একাদশ শ্রেণির উপকারভোগী শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে। দারিদ্র্য নিরূপণের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ব্যবহৃত প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে একটি নমুনা আবেদনপত্রের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের ফরম্যাট প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক ও উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার উপদেষ্টা কমিটি শিক্ষার্থীর আবেদনের তথ্যের সত্যতা যাচাই–বাছাই করবে। আবেদনপত্রের তথ্য যাচাই–বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এইচএসপি-এমআইএসে এসব তথ্য এন্ট্রি করতে হবে। তথ্য এন্ট্রির পর প্রতিষ্ঠান থেকেই তথ্য অনলাইনে উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে।

উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপবৃত্তির জন্য উপজেলা বা থানায় পাঠানো সব আবেদনপত্র উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার উপদেষ্টা কমিটির বিবেচনার জন্য পেশ করবেন এবং অ্যাডভাইজরি কমিটির অনুমোদন নিয়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তথ্য উপজেলা বা থানা থেকে এইচএসপি বা প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে পাঠাবেন।

সারা দেশের উপবৃত্তি উপকারভোগী শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট অফিসের এমআইএস সেলের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এইচএসপি ইউনিটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। লৈঙ্গিক ভিত্তিতে নয়, বরং দারিদ্র্যের ভিত্তিতে উপকারভোগী শিক্ষার্থী নির্বাচন হবে। ফলে, এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমবেশি হতে পারে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম যথাযথ যাচাই–বাছাইয়ের পর সরাসরি এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেওয়া  সনদ বা প্রত্যয়নপত্রের সত্যায়িত কপি এমআইএসে সংযুক্ত এবং সংরক্ষণ করতে হবে। সব শিক্ষার্থীর ১৭ সংখ্যার অনলাইন জন্মসনদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীর তথ্য এইচএসপি-এমআইএসে এন্ট্রি করলেই উপবৃত্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। আবেদনকারী শিক্ষার্থী দেওয়া তথ্য এইচএসপি-এমআইএসের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের কমিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আবেদনপত্রের তথ্য যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করবে।

কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর বাড়ি পরিদর্শন করে আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করবেন।

সত্যতা যাচাই শেষে শিক্ষার্থীদের তথ্য এইচএসপি-এমআইএসে এন্ট্রি করে ‘আবেদনপত্রের সব তথ্য সঠিক আছে’ মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠাবেন এবং আবেদনপত্রের হার্ড কপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করবেন।

তবে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ের কমিটিতে উপকারভোগী নির্বাচনে কোনো অসত্য তথ্য দিলে বা অনিয়ম করা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো সময় সভায় মিলিত হতে পারবে।

উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ

সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বা বেতন মওকুফ থাকবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনুকূলে স্কিম ডকুমেন্ট মোতাবেক নির্ধারিত হারে টিউশন ফি বা বেতন দেওয়া হবে। উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই টিউশন ফি বা বেতন আদায় করা যাবে না।

তথ্য অন্তর্ভুক্তি যেভাবে

শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো মধ্যে আছে একাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে একই অ্যাকাউন্ট নম্বর বা মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করা যাবে না, একই অ্যাকাউন্ট নম্বর বা মুঠোফোন নম্বর কেবল একজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ব্যবহার করা যাবে। শিক্ষার্থীর জন্মসনদ নম্বর অবশ্যই ১৭ ডিজিটের হতে হবে।

বাবা, মা বা অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (১০ অথবা ১৭ সংখ্যা) অবশ্যই এন্ট্রি করতে হবে। ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে প্রথমে জন্মের বছর বসিয়ে ১৭ সংখ্যায় রূপান্তর করতে হবে। শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেকোনো বৈধ বা সচল অনলাইন ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক হবেন বাবা বা মা। কেবল মা–বাবার অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে (ভাই বা বোন বা দাদা বা দাদি বা নানা বা নানি) অভিভাবক হিসেবে নির্বাচন করা যাবে। তথ্য এন্ট্রির সময় বাবাকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসেবে বাবার নাম এন্ট্রি করতে হবে। অভিভাবক হিসেবে মাকে নির্বাচিত করলে মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসেবে মায়ের নাম এন্ট্রি করতে হবে।

মা–বাবার অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসেবে তাঁর নাম এন্ট্রি করতে হবে। স্কুল ব্যাংকিং বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে যাঁর নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, হিসাবধারীর নাম হিসেবে তাঁর নাম এন্ট্রি করতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ব্যবহৃত আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে এইচএসপি-এমআইএসে লগইন করতে না পারলে ‘পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন’ বাটনে ক্লিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরে ওটিপি পাঠানোর মাধ্যমে পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করতে হবে।

সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ইউজার প্রোফাইলে নাম ও মোবাইল নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। এছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে তে আবেদন পাঠিয়েও পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করা যাবে।