কভার লেটারেও ব্যাখ্যা করেছিলাম কী চাই

নিকি চিয়াং
ছবি: ফেসবুক

যুক্তরাজ্যের শেভেনিং স্কলারশিপের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে গত ৩ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শেভেনিং বৃত্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পড়ছেন। এ বছরের বৃত্তির আবেদনের শেষ দিন আগামী ৩ নভেম্বর। এবার ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্বের ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী বৃত্তি পাবেন। যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয় এ বৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছিলেন মালয়েশিয়ার নিকি চিয়াং। মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করেছেন তিনি। স্কলারশিপের জন্য আবেদনের বিষয়ে নিকি কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রশ্ন:

আপনি ব্রিটিশ শেভেনিং বৃত্তির খোঁজ কীভাবে পেয়েছিলেন?

নিকি: আমি আসলে ভাগ্যক্রমে বৃত্তিটির খোঁজ পেয়েছিলাম। আমি সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপ করছিলাম। এক সহকর্মীর সঙ্গে আমার পড়াশোনা আরও এগিয়ে নিতে বৃত্তির ব্যাপারে আলোচনা করছিলাম। এরপরই আরও তথ্যের জন্য গুগলে খোঁজা শুরু করি। একপর্যায়ে বুঝতে পারি যে সময়সীমা পেরিয়ে গেছে কয়েক দিন আগেই। তবে আমি বৃত্তিটির খুঁটিনাটি জানলাম। আমার এক বন্ধু ছিল, যার এ ব্যাপারে জানাশোনা ছিল। আমি কয়েক বছর আবেদন করেও সফল হইনি। তবে আমি ব্যর্থতার জন্য মুখ ভার করে থাকিনি। শেষ পর্যন্ত আমিও পেয়ে যাই বৃত্তি।

প্রশ্ন:

কেন শেভেনিংয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন?

নিকি: আমি অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছিলাম। সম্মানে (স্নাতক) পড়ার সময় আমি স্নাতকোত্তরে ভালো কিছু করতে চাইতাম। সব সময় ক্যারিয়ারের প্রশ্নে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতাম। আমি এক দশক ধরে কাজ করার মধ্যে নিজেকে পরিবর্তন করেছি। এ সময়ই আমার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তার খোঁজও আমি করছিলাম। আমি ঠিক করলাম, মাস্টার্স আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে। তবে এ জন্য আমাকে কাজ থেকে বিরতি নিতে হবে এবং ক্যারিয়ারের পরিকল্পনাগুলো নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবার সুযোগ পাব।

প্রশ্ন:

শেভেনিং বৃত্তির আবেদনের প্রক্রিয়াটি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

নিকি: এটা অবশ্যই কঠিন ছিল। আমি জানতাম অনেকেই ওই বৃত্তির জন্য আবেদন করেছেন, আমাকে আবেদনটি একটু আলাদাভাবে করতে হবে। আমার আগের প্রয়াসগুলো ব্যর্থ হওয়ায় আমার মনোনিবেশের জায়গা এবং উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার হয়েছিল। আমি ঠিকই জানতাম, আমি কী নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছিলাম এবং মালয়েশিয়ায় ফিরে ঠিক করেছি, কী করতে পারি।

প্রশ্ন:

আপনার আবেদনটি কীভাবে অনন্য করেছিলেন?

নিকি: এটা এমন নয় যে আপনি সব পূরণ করে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেললেন। আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তাদের অ্যাপ্লিকেশন দেখে ভয় পেয়েছিলাম। আমি আমার পড়াশোনার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে আমার জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ, তা আবেদনে উল্লেখ করেছি। আমার কভার লেটারেও আমি ব্যাখ্যা করেছিলাম, পড়াশোনা কেবল শ্রেণিকক্ষ নয়, আমি জীবনের পাঠের প্রত্যাশায় ছিলাম।

প্রশ্ন:

যুক্তরাজ্য সম্পর্ক প্রথম ধারণাটি কী ছিল?

নিকি: আমার ইউকে ভ্রমণের সময় আমি সংস্কৃতি ও শহরগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছি। প্রথমত, আমি আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বিপদেই পড়েছিলাম। আমি এমন একটি দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছিলাম, যেখানে বাস্তবে কোনো ঋতু নেই। আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন আসার এত মাস পরও নিজেকে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারিনি। আমার আচরণ পুরোটাই বদলে গেছে। আমি ব্রিটেন যাওয়ার কয়েক মাস পর সূর্য দেখেছি। তবে দেখা যায় যে যুক্তরাজ্যে এমন কিছু জিনিস আছে, যা আপনাকে অবাক করে দেবে।

প্রশ্ন:

আপনি কি পড়াশোনার অভিজ্ঞতাটা উপভোগ করেছেন?

নিকি: এটি আমার জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা। আমার পড়াশোনার দিনগুলোতে আমি তাত্ত্বিক ও চিন্তাবিদদের সাহচর্য পেয়েছিলাম, যা আবার আমার অন্তর্দৃষ্টিকে বদলে দিয়েছিল। আমি মনে করি, কিছুটা বেশি বয়সে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়েছি। এই শিক্ষাপর্ব আমার জীবনে বদল এনেছে। শিক্ষকদের সমর্থন ছিল আশ্চর্যজনক এবং আমি দুর্দান্ত কিছু সহপাঠী পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন:

ক্যাম্পাস কি শেখার ধারণা বদলে দিয়েছে?

নিকি: যুক্তরাজ্যে পড়তে যাওয়ার পর বড় বড় শিক্ষাবিদের সঙ্গে দেখা হয়েছে ও কথা বলেছি। ওনারা ভিন্ন ভিন্ন শহরে থাকতেন। যুক্তরাজ্যে পড়াশোনাটা ছিল অনুপ্রেরণামূলক।

প্রশ্ন:

যাঁরা ব্রিটিশ শেভেনিং স্কলারশিপের আশা করেন, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?

নিকি: আমি তো বলব, এর জন্য লেগে থাকেন, এগিয়ে যান। অনেকে মনে করেন, তাঁরা যথেষ্ট ভালো শিক্ষার্থী নন। বিশ্বাস করুন, আমিও একই রকম ভেবেছি এবং এখনো ভাবি। আপনি যদি কোনো আবেদন জমা না দেন বা আবেদন না করেন, তাহলে কখনোই আপনাকে কেউ বিবেচনায় রাখবে না। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটি ঘটতে পারে, তা হলো আপনি আবেদন করে ব্যর্থ হবেন। এটি আমার ক্ষেত্রেও হয়েছিল এবং আমি হতাশায় ডুবে গিয়েছিলাম। আপনি সব ঝেড়ে ফেলুন, আবার চেষ্টা করুন। ব্যর্থতা থেকে শেখার জন্য সব সময়ই কিছু না কিছু থাকেই।

প্রশ্ন:

শেভেনিং বৃত্তি কীভাবে আপনার চাকরি পেতে সহায়তা করেছে?

নিকি: আমি এখন নিজের পরামর্শ প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। আর শেভেনিং স্কলার হওয়ায় সত্যিই আমার প্রোফাইলকে সবাই গুরুত্ব দেন। সবাই সবকিছুতে উত্সাহ দেন। এটি (বৃত্তি) মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি অনেক সম্মানজনক ও অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তি। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তথ্যসূত্র: আইডিপি, শেভেনিং বৃত্তি ওয়েবসাইট

আরও পড়ুন