জাপান সরকার ও বিশ্বব্যাংকের বৃত্তি নিয়ে কিছু কথা

বিশ্বব্যাংক

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ সম্মানজনক একটি বৃত্তি হলো ‘জয়েন্ট জাপান/ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ’। ১৯৮৭ সাল থেকে এই প্রোগ্রামের আওতায় ১০০ টির বেশি দেশ থেকে ৬ হাজারের অধিক পেশাজীবীদের এই বৃত্তি দেওয়া হয়েছে।

উন্নয়নশীল বিশ্বে মানবসম্পদ ও তাদের সক্ষমতা বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিকাশ এবং অংশীদারত্ব ভিত্তিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এ প্রোগ্রামটি অবদান রাখতে পারে। এ বৃত্তির আওতায় বিভিন্ন দেশের কিছু নির্ধারিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পাওয়া যায়। এ বৃত্তির অর্থায়ন করে জাপান সরকার এবং সার্বিক পরিচালনা করে থাকে বিশ্বব্যাংক।

আবেদনে সাধারণ শর্তাবলি

*উন্নত বিশ্বের নাগরিকেরা এ বৃত্তির আবেদন করতে পারবেন না
*স্নাতক (বা সমতুল্য) ডিগ্রি অর্জনের পরে নিজ দেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজে (সরকারি ও বেসরকারি) কমপক্ষে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
*আবেদনের সময় অবশ্যই চাকরিতে কর্মরত থাকতে হবে (সরকারি বা বেসরকারি)

বৃত্তির আবেদন প্রক্রিয়া

সাধারণত প্রতি বছর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ হতে অনলাইনে আবেদন শুরু হয়। ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ থাকে। আবেদনের সময় যে বিষয়গুলো প্রয়োজন হয়—
*প্রোগ্রামের প্রদানকৃত ফরম্যাট মোতাবেক ফরম পূরণ করতে হবে
*নির্দিষ্ট ফরম্যাটে সিভি তৈরি করে আপলোড করতে হবে
*২ জন সুপারিশকারী যারা নির্দিষ্ট ফরম্যাটে অনলাইনে রেফারেন্স লেটার দেবেন
*পেশাদার জীবনের/কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা সনদ প্রদান করতে হবে

আবেদনপত্র যাচাই

আবেদনের পর বিশ্বব্যাংক সেক্রেটারিয়েট মনোনীত দুজন মূল্যায়নকারী পেশাদার অভিজ্ঞতা ও অবদান (৩০%), কর্মক্ষেত্রের ২ জন সুপারভাইজারের রেফারেন্স লেটারের গুণমান (৩০%), নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ৩-৪ টি প্রশ্নের উত্তর/মোটিভেশনাল লেটারের গুণমান (৩০%) ও শিক্ষার মান/ব্যাকগ্রাউন্ড (১০%)। তবে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, মোটিভেশনাল লেটার এবং রেফারেন্স লেটার মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ সম্মানজনক বৃত্তি হলো ‘জয়েন্ট জাপান/ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ’
ছবি: সংগৃহীত

যেসব বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি

গত ৩৩ বছরে (১৯৮৭-২০১৯) বাংলাদেশ থেকে ১৩৮ জন এই বৃত্তি পেয়েছেন। এ তথ্যটি থেকে অনুধাবন করা যায় এটি অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক এবং একই সাথে অনেক মর্যাদাপূর্ণ। নিজের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পরামর্শ হচ্ছে, আবেদনের সময় প্রতিটি বিষয় সমভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিছু বিষয়ে কৌশলী হওয়া প্রয়োজন। নির্দিষ্ট ফরম্যাটের মোটিভেশনাল লেটারে প্রশ্নের উত্তর এমনভাবে দেওয়া উচিত যেন নিজ দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। পেশাগত জীবনের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো কীভাবে দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে তা অল্প কথায় গুছিয়ে উপস্থাপন করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, অল্প কথায় কার্যকরভাবে যেকোনো বিষয়কে উপস্থাপন করা একটি বিশেষ গুণ। যেহেতু মোটিভেশনাল লেটার নির্দিষ্ট শব্দের মধ্যে লিখতে হয়, তাই এসব গুণ দরকারি বলেই মনে হয়।

ছবি: লেখক

সুপারিশকারী নির্ধারণে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ রেফারেন্স লেটার কে দিচ্ছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কতটা ভালোভাবে সেটি বিশ্বব্যাংকে জমা দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়- সুপারিশকারীকে প্রোগ্রামটি সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত করা এবং মোটিভেশনাল লেটারটি পড়তে দেওয়া যাতে করে এই দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকে। বৃত্তি পাওয়ার এই প্রচেষ্টায় একজন পরামর্শক (মেন্টর) থাকলে ভালো হয় যিনি আপনাকে তার অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করবেন। এ প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে প্রাসঙ্গিক অনেক তথ্য ও রিপোর্ট রয়েছে, যা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে ভালো একটি ধারণা হবে এবং আবেদনের সময় কাজে লাগবে।

শেষ করতে চাই-বৃত্তি পাওয়ার এই যাত্রাটি সময়সাপেক্ষ এবং পরিশ্রমের। এই যাত্রায় আপনার হারানোর কিছু নেই কিন্তু শেখার এবং পাওয়ার আছে অনেক কিছু। বৃত্তির বিস্তারিত https://www.worldbank.org/en/programs/scholarships এ ঢুঁ মারতে হবে।


*লেখক: জয়েন্ট জাপান/ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ (২০২০-২১) অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ও ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি রটারড্যাম, নেদারল্যান্ডস