যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়তে গেছেন বেশি, ৩ ধাপ এগিয়ে তালিকায় ১৭ বাংলাদেশ

এ বছর মোট ৮ হাজার ৮৩৮ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন
ছবি: মার্কিন দূতাবাস

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছেন। গত বছরের তুলনায় এ হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। আর ২০০৯ সালের তুলনায় এ সংখ্যা তিন গুণ বেশি। এ বছর মোট ৮ হাজার ৮৩৮ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ২৪৯। এর ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশটিতে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে ১৭তম অবস্থানে উন্নীত হলো বাংলাদেশ।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার এসব তথ্য জানিয়ে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ১৬ থেকে ২০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট এবং ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের যৌথ আয়োজনে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সপ্তাহ (আইইডব্লিউ) উদযাপিত হচ্ছে। ২০২০ সালের ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন এক্সচেঞ্জ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত ও বেশি হারে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৭তম। গত বছর বাংলাদেশ ছিল ২০তম। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী প্রেরণে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম থেকে অষ্টম স্থানে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর তালিকার শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে শতাংশ হিসাবে বাংলাদেশের বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। সংখ্যার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সর্বোচ্চ।

উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে ১৭তম অবস্থানে এখন বাংলাদেশ
ছবি: ফেসবুক
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৫ শতাংশ স্টেম ক্ষেত্রে (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) লেখাপড়া করছেন। তাঁদের মধ্যে ৪১ শতাংশের বেশি প্রকৌশল, প্রায় ১৯ শতাংশ গণিত/কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং ১৫ শতাংশের বেশি ভৌত বা জীববিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করছেন। ৭ শতাংশ পড়ছেন ব্যবসায় ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। আর ৬ শতাংশ সমাজবিজ্ঞানে পড়ছেন

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৮ হাজার ৮০০ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য এটিই নতুন সর্বোচ্চ সংখ্যা, যা ২০১৯ সালের প্রতিবেদনের (৮ হাজার ২৪৯ জন) চেয়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি এবং ২০০৯ সালের তুলনায় সংখ্যাটি তিন গুণের বেশি।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের একটি কৌশলগত অগ্রাধিকার হলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শিক্ষামূলক কার্যক্রম বিনিময় উৎসাহিত করা। ২০১৯-২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ৮ হাজার ৮৩৮ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ হাজার ৭৮৭ জন স্নাতক পর্যায়ে লেখাপড়া করেছেন, যা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বে নবম থেকে অষ্টম স্থানে উন্নীত হয়েছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৫ শতাংশ স্টেম ক্ষেত্রে (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) লেখাপড়া করছেন। তাঁদের মধ্যে ৪১ শতাংশের বেশি প্রকৌশল, প্রায় ১৯ শতাংশ গণিত/কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং ১৫ শতাংশের বেশি ভৌত বা জীববিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করছেন। প্রায় ৭ শতাংশ পড়ছেন ব্যবসায় ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে। আর প্রায় ৬ শতাংশ সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নরত।

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১ হাজার ৩০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী (সব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ১৪ শতাংশ) যুক্তরাষ্ট্রে তাঁদের শিক্ষার অংশ হিসেবে নিজ নিজ শিক্ষা বিষয়ে চাকরি পেতে বাস্তব প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে ঐচ্ছিক ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ (ওপিটি) কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন।

এ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের গন্তব্য। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে ১০ লাখের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে গেছেন। এই শিক্ষাবর্ষে আগের তুলনায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমলেও দেশটির মোট শিক্ষার্থীর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী।

যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত ও বেশি হারে শিক্ষার্থী পড়তে যাওয়া দেশগুলোর মধ্য কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৭তম। গত বছরে বাংলাদেশ ছিল ২০তম
ছবি: ফেসবুক

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এডুকেশন ইউএসএ বাংলাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণের জন্য বেশ কিছু ভার্চ্যুয়াল কার্যক্রম আয়োজনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক এডুকেশন উইক (আইইডব্লিউ) উদযাপন করছে। আগামী পাঁচ দিন এডইউএসএ পরামর্শ কেন্দ্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে ওয়েবিনার আয়োজন করবে।

এ অনুষ্ঠানে মিশিগান স্টেট, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, ম্যাকনিসি স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি অ্যাটসান বার্নার্দিনো, এম্ব্রি-রিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাউচার কলেজ, হ্যামিল্টন কলেজ, মিডওয়ে ইউনিভার্সিটি, মিনেসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, মিজৌরি ওয়েস্টার্ন স্টেট ইউনিভার্সিটি, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির (এনওয়াইইউ) অধিভুক্ত ট্যান্ডন স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, নর্দার্ন অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটি, অরেঞ্জ কোস্ট কলেজ, পেপারডাইন ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাটঅসওয়েগো; নিউপালজ, স্টোনিব্রুক ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টোন ভিক্টোরিয়া, ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো, ইউনিভার্সিটি অব নর্দার্ন আইওয়া, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ডাকোটা, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন; সান আন্টোনিও, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন অ্যাটওউক্লেয়ার এবং মিলওয়াওকি ও ভ্যালপ্যারাইসো ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেবেন।