কেবল মানুষ নয়, প্রয়োজনে মৌমাছিও ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলে

প্রয়োজনে মৌমাছিও সামাজিক দূরত্ব বঝায় রাখে বলে জানিয়েছেন একদল গবেষক। ছবিটি প্রতীকী
পেক্সেলস

গত দেড় বছরে ‘সামাজিক দূরত্ব’ শব্দ দুটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে। কারণ, দূরত্ব বজায় রাখলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যায়। তবে গবেষকেরা বলছেন, কেবল মানুষই নয়, প্রয়োজনে মৌমাছিরাও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে। তা-ও অনেক আগে থেকেই।

বিজ্ঞানীরা দেখলেন, চাকে যখন ভ্যারোয়া ডেসট্রাক্টর নামের পরজীবী কীটের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে, তখন মৌমাছির আচরণে পরিবর্তন আসে। এই পরজীবী কীট মৌমাছির কলোনি ধ্বংসের কারণ হতে পারে।

এ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেছেন, তাঁদের একজন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ড. আলেসান্দ্রো চিনি। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মস্তিষ্ক আছে, আমরা সচেতন, তবু কোভিড পরিস্থিতিতে আমাদের নিত্যদিনের আচরণে পরিবর্তন আনতে সময় লেগেছে। অথচ অন্যান্য প্রাণীও একই ধরনের কাজ করছে।’

চিনি ও তাঁর সহকর্মীদের লেখা গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে। শুরুতে ইতালির সারদিনিয়ায় মৌচাক পর্যবেক্ষণ করেন তাঁরা। এরপর প্রাকৃতিকভাবে পরজীবী কীটে আক্রান্ত মৌচাকে চোখ রাখেন। সবশেষে সংক্রমণহীন মৌমাছিগুলোর আচরণ বিশ্লেষণ করেন।

মৌচাকগুলোর ধারণকৃত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে গবেষকেরা বুঝলেন, যখন মৌচাকে পরজীবী কীটের সংক্রমণ বেড়ে যায়, তখন খাদ্যের খোঁজে থাকা মৌমাছিগুলো (সচরাচর কলোনির জ্যেষ্ঠ সদস্য) বিশেষ নৃত্য পরিবেশন করে চাকের অন্যান্য মৌমাছিকে খাদ্যের উৎস দেখিয়ে দেয়। এই নৃত্য সাধারণত মৌচাক থেকে খানিকটা দূরে কোথাও পরিবেশন করা হয়। মৌচাকে সে সময় রানি ও তুলনামূলক কম বয়সী মৌমাছি থাকে।

চিনি বলেছেন, এতে হয়তো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে কিংবা ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়। খাদ্যের খোঁজে থাকা মৌমাছিগুলোর মাধ্যমেই মূলত ভ্যারোয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। সুতরাং সেগুলো যতটা দূরে থাকবে, কলোনির মধ্যে পরজীবী কীটের সংক্রমণ তত কম হবে।

এরপর গবেষণাগারে পরীক্ষা করেন তাঁরা। ১২টি কম বয়সী মৌমাছিকে কৃত্রিমভাবে সংক্রমিত করে সংক্রমিত না হওয়া মৌমাছির সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে এবার মৌমাছিগুলোর মধ্যে আর সামাজিক দূরত্ব দেখা না গেলেও সংক্রমিত মৌমাছিগুলোর মধ্যে শরীর পরিষ্কার (গ্রুমিং) করার হার তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়। আর অসংক্রমিত দলটির তুলনায় নিজেদের মধ্যে খাদ্য বেশি ভাগাভাগি করেছে সংক্রমিত দলটি।