চলে গেলেন শহীদলিপির সাইফুদ্দাহার শহীদ

সাইফুদ্দাহার শহীদসংগৃহীত

প্রথম বাংলা বাণিজ্যিক সফটওয়্যার শহীদলিপির নির্মাতা সাইফুদ্দাহার শহীদ (সাইফ শহীদ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের আলবুকার্কে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বেলা একটায় মারা গেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী পদার্থবিজ্ঞানী মুনিম হোসেন প্রথম আলোকে এ খবর নিশ্চিত করেন। সাইফুদ্দাহার শহীদের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে আলঝেইমারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার
ছবি: ক্যাডেট কলেজ ব্লগ প্রকাশিত ‘শহীদলিপির ইতিহাস’ ই–বই থেকে নেওয়া

তথ্যপ্রযুক্তির উন্মেষকালে লন্ডনে বসে সাইফুদ্দাহার শহীদ নিজে প্রোগ্রামিং করে কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার ‘শহীদলিপি’ তৈরি করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি এটি বাজারজাত করেন। এটি ছিল অ্যাপল ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার। প্রথমে শহীদলিপির ফন্ট ছিল বিটম্যাপ প্রযুক্তির, যা দিয়ে প্রকাশনার কাজ করা যেত না। পরবর্তী সময়ে শহীদলিপির জন্য ‘লেজার’ প্রযুক্তির ফন্ট তৈরি করেন সাইফুদ্দাহার শহীদ। ফলে শহীদলিপি দিয়ে পাক্ষিক তারকালোক, দৈনিক আজাদসহ কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। শহীদলিপির পাশাপাশি সাইফুদ্দাহার শহীদ সেই সময়ের ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের ইউজার ইন্টারফেসও বাংলায় অনুবাদ করেন। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা ম্যাকের মনিটরে বাংলায় নির্দেশনা দেখতে পেতেন।

শহীদলিপি ফন্ট
ছবি: ক্যাডেট কলেজ ব্লগ প্রকাশিত ‘শহীদলিপির ইতিহাস’ ই–বই থেকে নেওয়া

সাইফুদ্দাহার শহীদকে কম্পিউটারে বাংলা ভাষার প্রচলনের পথিকৃৎ হিসেবে বললেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের নির্মাতা মোস্তাফা জব্বার। আজ সোমবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যত দিন প্রযুক্তিতে বাংলা ব্যবহৃত হবে, তত দিন সাইফুদ্দাহার শহীদ জাগরূক থাকবেন। তিনি কম্পিউটারে বাংলা ভাষা ব্যবহারের পথপ্রদর্শক। কয়েক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক সাইফুদ্দাহার শহীদ ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেট ছিলেন। বেক্সিমকো কম্পিউটারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। এরপর ন্যাশনাল কম্পিউটারস নামে ঢাকায় নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই শহীদলিপি বাজারজাত করা হয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেমে যায় শহীদলিপির যাত্রা।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের প্রথম সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সহসভাপতি ছিলেন সাইফুদ্দাহার শহীদ। ১৯৭৯ সালের ২০ মে তাঁর উদ্যোগ গঠিত হয় বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও লিগ (বিএআরএল)। এই সংগঠনে তাঁর সহকর্মী মুনিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাইফুদ্দাহার শহীদ বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও প্রচলনেরও প্রধান পথপ্রদর্শক। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি।

মূলত সাইফুদ্দাহার শহীদের উদ্যোগে ১৯৮২ সালে বিএআরএল আন্তর্জাতিক অ্যামেচার রেডিও ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে। এরপর ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে উন্মুক্ত হয় অ্যামেচার রেডিও। সাইফুদ্দাহার শহীদ দেশের প্রথম অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্সধারী (কল সাইন S21A)।

সাইফুদ্দাহার শহীদ স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর জানাজা কাল মঙ্গলবার বেলা একটায় আলবুকার্কের ইসলামিক সেন্টার অব নিউ মেক্সিকোতে (১১০০ ইয়েল বুলেভার্ড, এসই আলবুকার্ক) অনুষ্ঠিত হবে।