তরুণদের ডেস্কটপে ‘হাজারটা’ ফাইল থাকে কেন

নতুন এই প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহারের ধরন আলাদা। কোনো ফাইলের প্রয়োজন হলে তরুণেরা ফোল্ডার থেকে ফোল্ডারে গিয়ে সেটা বের করেন না। কোন ফাইল কোন ফোল্ডারে রাখা আছে, তা মনে রাখার চেষ্টাও করেন না।

তরুণদের কম্পিউটারের ডেস্কটপের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত আইকনে ভর্তি থাকেমূল ছবি: ফ্রিপিক

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের ফাইল ও ফোল্ডারের পার্থক্য বোঝেন না। এমনকি প্রকৌশল ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষার্থীদেরও এই সাধারণ বিষয়টি নতুন করে শেখাতে হয় বলে তাঁদের শিক্ষকদের ভাষ্য। দ্য ভার্জের প্রতিবেদনে এর কারণ বলা হয়েছে, নতুন এই প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহারের ধরন আলাদা।

কোনো ফাইলের প্রয়োজন হলে তরুণেরা ফোল্ডার থেকে ফোল্ডারে গিয়ে সেটা বের করেন না। কোন ফাইল কোন ফোল্ডারে রাখা আছে, তা মনে রাখার চেষ্টাও করেন না। এর চেয়ে সরাসরি সার্চ অপশন থেকে ফাইলের সম্ভাব্য নাম লিখে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্যাথেরিন গারল্যান্ড এ ব্যাপারে দ্য ভার্জকে বলেছেন, ‘আগে আমি মনে করতাম কোনো ফাইল নির্দিষ্ট কোনো ফোল্ডারে থাকে। অর্থাৎ, সেটা কোনো একটা জায়গায় আছে এবং সেখানে গিয়ে আমাকে তা খুঁজে বের করতে হবে। তাঁরা (শিক্ষার্থীরা) পুরোটাকে একটি বালতির মতো মনে করেন। যেন সবকিছু সেই বালতির মধ্যেই আছে।’

আগের প্রজন্মের কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা ফোল্ডারের ভেতর ফোল্ডার, তার ভেতর সাবফোল্ডার—সব মিলিয়ে জালের মতো বিস্তৃত এক সিস্টেমে ফাইল সাজিয়ে রাখতেন। কারও কারও তো ঘরের জিনিসপত্র টিপটপ করে সাজিয়ে রাখার মতো কম্পিউটারে ফাইল সাজিয়ে রাখার বাতিক ছিল। এখন কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের সার্চ অপশন উন্নত হয়েছে। ক্লাউড স্টোরেজ ও স্মার্টফোনের বেলাতেও সে কথা সত্য। ফলে তরুণেরা আগের ধাঁচে কম্পিউটার ব্যবহার করেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক পিটার প্লাভচ্যান দ্য ভার্জকে বলেছেন, ‘আমার ল্যাবে শিক্ষার্থীদের এই কম্পিউটারগুলো আছে। তাঁরা ডেস্কটপেই হাজারো ফাইল রাখেন, পুরোপুরি অগোছালো। আমি আবার অত্যধিক গোছালো... তবে এক ফোল্ডারে ১০০০ ফাইল থাকলে তাঁদের কোনো সমস্যাই হয় না। ফাইল ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন আসাই সেটার কারণ বলে আমি মনে করি।’

সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী অব্রি ভোগেল মজা করে বলেছেন, ‘আমার কম্পিউটারের পর্দা দেখলে পরিবারের সদস্যরা তিরস্কার করেন। কারণ, সেখানে প্রায় ৫০ হাজার আইকন আছে।’

প্রথম ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করা হয়েছে ১৯৯০-এর দশকে। তবে উইন্ডোজে ‘সার্চ’ ও ম্যাকওএসে ‘স্পটলাইট’–এর মতো সুবিধাগুলো চলতি শতকের শুরুর দিকে তৈরি। বর্তমানের যাঁরা অধ্যাপক, তাঁদের অনেকেরই বেড়ে ওঠার সময়টাতে ফোন বা কম্পিউটারে কার্যকরী সার্চ ফাংশন ছিল না। আর এখন যাঁরা শিক্ষার্থী, তাঁরা সার্চ অপশনহীন বিশ্ব কল্পনাই করতে পারেন না।

এই পরিবর্তনকে খারাপ বলার সুযোগ নেই। কিংবা পেছনে ফিরে যেতে হবে, ব্যাপারটা তা-ও না। প্লাভচ্যান বলেছেন, ‘আমি যখন ছাত্র ছিলাম, নিশ্চিত তখন কোনো অধ্যাপক হয়তো বলেছিলেন, “ওহ, আমি বুঝতেই পারি না কীভাবে এই লোক মাদারবোর্ডে চিপ ঝালাই করতে জানে না!” এ ধরনের প্রজন্মগত সমস্যা সব সময়ই থাকে।’

ক্যাথেরিন গারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশলের বিষয় পড়ান। শিক্ষার্থীদের মতো তিনিও কম্পিউটারের সার্চ অপশন ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। বলেছেন, ‘আমার এখন এই সাবফোল্ডারগুলোর কোনো দরকারই নেই।’