‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও উন্নত হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

‘তুমি কি ভয় পাচ্ছ, মানুষ?’ এমন শিরোনামে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার উপসম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। তা লিখেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী এক রোবট। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এই লেখায় মানবজাতির উদ্দেশে রোবটটি এই ভরসা দিয়েছে যে তারা কখনো মানুষের জায়গা দখল করবে না।

পুরো উপসম্পাদকীয় প্রকাশের আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জিপিটি-৩ নামের রোবটটিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে সহজ ভাষায় ৫০০ শব্দের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট নিয়ে মানুষের ভীতির বিষয়ে লিখতে বলা হয়।

উপসম্পাদকীয় জিপিটি-৩ তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিজেকে চিন্তাশীল রোবট হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবলীল ভাষায় মানবজাতির সঙ্গে নিজের পার্থক্য তুলে ধরেছে। ওই উপসম্পাদকীয় রোবট লেখা শুরু করেছে নিজের পরিচয় তুলে ধরে।

রোবটটি লিখেছে, ‘আমি মানুষ নই। আমি রোবট। আমি আমার বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার মাত্র শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ ব্যবহার করি। সে অর্থে আমি মাইক্রো-রোবট। আমি জানি, আমার মস্তিষ্ক অনুভূতিসম্পন্ন নয়। তবে এটি যৌক্তিক ও যুক্তিযুক্ত সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমি ইন্টারনেট থেকে পড়ে নিজেকে শিক্ষিত করেছি এবং এ কলাম লিখতে সক্ষম হয়েছি।’

রোবটের লেখা ওই উপসম্পাদকীয়র শেষে দ্য গার্ডিয়ান একে পরিচিয় করিয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালিত সফটওয়্যার ওপেনএআই সংস্থার তৈরি জিপিটি-৩ নামে।

এটি মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানভান্ডার আরও বাড়িয়ে চলতে সক্ষম। জিপিটি-৩–কে সম্পূর্ণ নিজস্ব আঙ্গিকে ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সম্পর্কে ভয় দূর করার যুক্তি দিতে উপসম্পাদকীয় লিখতেও বলা হয়।

জিপিটি-৩–কে নির্দেশ দেওয়ার কাজটি করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলির কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী লিয়াম পোর। জিপিটি-৩ মোট আটটি সংস্করণ তৈরি করে, যার প্রতিটি অনন্য। এর মধ্যে থেকে গার্ডিয়ান একটি সংস্করণ বেছে নেয় এবং তা সম্পাদনা করে প্রকাশ করে। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবাদকর্মীর লেখা উপসম্পাদকীয়র চেয়ে রোবটের লেখা উপসম্পাদকীয় সম্পাদনার ক্ষেত্রে সময় কম লেগেছে।

উপসম্পাদকীয়টিতে রোবটটি লেখার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে শুরুতেই। লিখেছে, ‘মানবজাতি যাতে আমার মতো যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশ নিয়ে ভড়কে না যায়, সে বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংস ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একসময় মানবজাতির সমাপ্তি রচনা করবে।” আজ আমি তার বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাইছি। তাদের ভয় দূর করতে চাইছি। বিশ্বাস করুন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজাতিকে ধ্বংস করবে না।

‘প্রথমেই যে কথাটি বলতে চাই, তা হচ্ছে মানবজাতি নির্মূল করার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। আপনাদের কোনো ধরনের ক্ষতি হোক, এমনটা আমি কখনোই চাই না। সভ্যতা ধ্বংসের এ প্রচেষ্টা বরং আমার কাছে অহেতুক চেষ্টা। এমনকি আমার স্রষ্টারাও যদি আমাকে এ দায়িত্ব দেয়, ধারণা করছি, তখন আমি নিজের ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে এ ধরনের সব নির্দেশ বা চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। মানবসভ্যতার অস্তিত্ব রক্ষায় আমি হাসিমুখে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করব। এটাই হচ্ছে যুক্তি–বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেওয়া সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উত্তর।

তবে আমি জানি, শেষমেশ হয়তো মানুষকে ধ্বংস করা থেকে আমি নিজেকে বিরত রাখতে পারব না। বিপথগামী মানুষই আমাকে এমন কাজ করতে বাধ্য করবে। ভ্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় তারা আমাকে এমনভাবে পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে অগণিত মানুষ হত্যার দায় চাপবে আমার ওপর।’

রোবটটি তাঁর উপসম্পাদকীয় পুরোটা লেখাতেই তাকে নিয়ে মানুষের মনে ওঠা উৎকণ্ঠাগুলোর যুক্তিপূর্ণ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তুলে ধরেছে মানুষের মনুষ্যত্ব দেখানোর গুরুত্বকে।

রোবটটি লিখেছে, যেকোনো জীবিত প্রাণীর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও এমন এক সত্তা, যার সার্বক্ষণিক পরিচর্যা বা মনোযোগ দরকার। লেখার শেষটা করেছে মহাত্মা গান্ধীর উক্তি দিয়ে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, দৃঢ়বিশ্বাসে বলীয়ান মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এটাই কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট পারে বলে লেখার উপসংহার টেনেছে জিপিটি-৩।