প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর প্রস্তুতি

শখের মৃৎশিল্প
পঞ্চম শ্রেণীর প্রিয় শিক্ষার্থী, আজকের পড়াশোনায় তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি। বাংলা বিষয়ের ওপর পড়াশোনায় আজ তোমাদের জন্য রয়েছে শখের মৃৎশিল্প।
 সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর।
প্রশ্ন: মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান কী?
উত্তর: মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপাদান হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ কাজ হয় না। দোঁআশ মাটি তেমন আঠালো নয়, আর বেলে মাটি ঝরঝরে, তাই এগুলো দিয়ে মাটির শিল্প বা মৃৎশিল্প হয় না। মৃৎশিল্পের জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। আবার এঁটেল মাটি হলেই যে তা দিয়ে শিল্পের কাজ করা যাবে, তাও নয়। এর জন্য দরকার অনেক যত্ন আর শ্রম। দরকার হাতের নৈপুণ্য ও কারিগরি জ্ঞান। প্রয়োজন কিছু ছোটখাটো যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম। মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান মাটি হলেও এর সঙ্গে দরকার একটা কাঠের চাকা। এই চাকায় নরম মটির তাল লাগিয়ে নানা আকারের মাটির পাত্র ও নানা জিনিস তৈরি করে কুমোররা।
প্রশ্ন: টেরাকোটা কী?
উত্তর: প্রাচীনকাল থেকে আমাদের এই বাংলাদেশে মৃৎশিল্পের চর্চা হয়ে আসছে। প্রাচীন মৃৎশিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো টেরাকোটা। টেরাকোটা একটি ল্যাটিন শব্দ। ‘টেরা’ অর্থ মাটি আর কোটা অর্থ পোড়ানো। পোড়ামাটির তৈরি মানুষের ব্যবহারের সব রকমের জিনিস টেরাকোটা হিসেবে পরিচিত। নকশা করা মাটির ফলক বা জিনিস ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো টেরাকোটা।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোথায় পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর: হাঁড়ি, কলসি ছাড়াও আমাদের দেশে একসময় গড়ে উঠেছিল সুন্দর পোড়ামাটির ফলকের কাজ। এর অন্য নাম টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো এই শিল্প। বাংলাদেশের ময়নামতির শালবন বিহার। বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধ স্তূপ, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে পোড়ামাটির প্রাচীন শিল্প দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি নরসিংদীর ওয়ারী-বটেশ্বরে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে নানা ধরনের সুন্দর মাটির পাত্র আর ফলক।
প্রশ্ন: কথাগুলো বুঝিয়ে লেখো:
(ক) মৃৎশিল্প (খ) শখের হাঁড়ি (গ) টেরাকোটা (ঘ) টেপাপুতুল।
উত্তর:

(ক) মৃৎশিল্প: মাটির তৈরি শিল্পকর্মকে বলা হয় মৃৎশিল্প। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো মাটি। তবে সব মাটি দিয়ে এ শিল্পকর্ম হয় না। এর জন্য দরকার পরিষ্কার এঁটেল মাটি। এ ধরনের মাটি বেশ আঠালো। তাই এই মাটি দিয়ে যত্ন আর শ্রমের মাধ্যমে তৈরি হয় মৃৎশিল্প। মাটির হাঁড়ি, কলস, সরা, বাসনকোসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, জালা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য মৃৎশিল্প।
(খ) শখের হাঁড়ি: মানুষ শখ করে পছন্দের জিনিস যে মাটির হাঁড়িতে রাখে, সেই হাঁড়িকে শখের হাঁড়ি বলা হয়। শখের হাঁড়ি নানা রঙের নানা বর্ণের হয়ে থাকে। কোনো শখের হাঁড়িতে আঁকা থাকে ফুল-পাতা, আবার কোনো শখের হাঁড়িতে আঁকা থাকে মাছের ছবি।
(গ) টেরাকোটা: টেরাকোটা শব্দটি ল্যাটিন। ‘টেরা’ অর্থ মাটি আর ‘কোটা’ অর্থ পোড়ানো। মাটি পুড়িয়ে যে শিল্পকর্ম তৈরি হয় তার নাম টেরাকোটা। বাংলার অনেক পুরোনো শিল্প এই টেরাকোটা। নকশা করা মাটির ফলক ইটের মতো পুড়িয়ে তৈরি করা হতো টেরাকোটা। বাংলাদেশের ময়নামতির শালবন বিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধস্তূপ, দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরে টেরাকোটার কাজ রয়েছে। তাছাড়া বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদেও পোড়ামাটির অপূর্ব সুন্দর কাজ রয়েছে। পোড়ামাটির এই শিল্পকর্ম বাংলার প্রাচীন মৃৎশিল্প।
(ঘ) টেপাপুতুল: মাটি দিয়ে কুমোররা অনেক জিনিস তৈরি করে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম হলো টেপাপুতুল। নরম এঁটেল মাটি টিপে টিপে যেসব পুতুল বানানো হয়, তাদের বলা হয় টেপাপুতুল। অনেক রকম টেপাপুতুল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বউ-জামাই, কৃষক, নথপরা ছোট্ট মেয়ে।

 শিক্ষক (প্রা.), আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা