ভারত সরকার ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, বলছে হোয়াটসঅ্যাপ

ভারত সরকারের ইন্টারনেটবিষয়ক নতুন আইনে হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবায় পাঠানো বার্তার উৎস প্রকাশ করার বিধান যুক্ত করা হয়। সে আইনের বিরুদ্ধে করা মামলার নথিতে আইনটিকে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তায় ভয়ংকর হানা বলে উল্লেখ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। অপ্রকাশিত নথিটি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে পৌঁছেছে।

হোয়াটসঅ্যাপের মতো যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারির সুযোগ চেয়ে আইন করেছে ভারত সরকার। ফাইল ছবি
রয়টার্স

হোয়াটসঅ্যাপের মতো যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারির সুযোগ চেয়ে আইন করেছে ভারত সরকার। তবে তাতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তার লঙ্ঘন হবে উল্লেখ করে গতকাল বুধবার মামলা ঠুকে দেয় হোয়াটসঅ্যাপ। মামলার নথিতে ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভারত সরকার তাদের বৈধ আইনি ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অপ্রকাশিত নথিটি বার্তা সংস্থা রয়টার্স পেয়েছে।

ভারত সরকারের সঙ্গে চলমান সমস্যার ‘কার্যকর সমাধান’ খুঁজে বের করবে বলে গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। সে সঙ্গে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা রক্ষায়ও কাজ করবে তারা। তবে আদালতের নথিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের বিরুদ্ধে অধিকতর শক্ত অবস্থান নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।

হোয়াটসঅ্যাপ যে আইনের বিরোধিতা করছে, সেটি প্রস্তাব করেছেন ভারতের আইন ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। আইনটিতে বলা হয়েছে, বেআইনি মনে হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কোনো পোস্ট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে পারবে ভারতীয় সরকার। সে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল এবং অন্যান্য বার্তা আদান-প্রদানের সেবা ব্যবহার করে পাঠানো সব বার্তার উৎস শনাক্ত করার পূর্ণ ডেটাবেইস ব্যবহারের সুযোগ থাকবে সরকারের হাতে।

আইনটিকে ‘অসাংবিধানিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ
রয়টার্স

২২৪ পৃষ্ঠার মামলার নথিতে হোয়াটসঅ্যাপ যুক্তি দেখায়, রবিশঙ্কর প্রসাদের প্রস্তাবিত আইনটি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার প্রতি ‘ভয়ংকর আক্রমণ’ এবং এটি ‘অসাংবিধানিক’।

ভারতীয় সংবিধানে সরকারের যে নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা, তার বাইরে গিয়ে নতুন আইনটি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। তারা বলছে, এই ধরনের আইন কেবল সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে পাস করা যেতে পারে, কেবল সরকার পারে না।

এদিকে নতুন বিধানটি ভারতের আইন অনুযায়ীই করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। সঙ্গে যোগ করেছে, হোয়াটসঅ্যাপের মামলাটি ‘দুঃখজনক’।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুক, গুগল, টুইটারসহ তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভারত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। অথচ নরেন্দ্র মোদির সরকারের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর লড়াই লেগেই রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের মামলাটি সেই লড়াইয়ে নতুন সংযোজন।

ভারতীয় সরকারের এক সূত্র রয়টার্সকে গতকাল বুধবার বলেছেন, হোয়াটসঅ্যাপ চাইলে এনক্রিপশন না ভেঙেও ‘ভুয়া তথ্যের উৎস’ খুঁজে বের করতে পারে। তবে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা বজায় রেখে নজরদারির সুযোগ তৈরি করা কারিগরি দিক থেকেও সম্ভব না বলে যুক্তি দেখিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।

নতুন আইনটিকে বেআইনি হিসেবে ঘোষণা করতে আদালতের কাছে আরজি জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ আরও বলেছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ ভারতের মতো এমন আইন করেছে বলে তাদের জানা নেই।