মঙ্গলে অভিবাসী হতে চান ১ লাখ মানুষ!

এভাবে গড়ে উঠবে মঙ্গলে বসতি
এভাবে গড়ে উঠবে মঙ্গলে বসতি

এ পৃথিবী ক্রমশ তার আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে, ধীরে ধীরে এই ধরিত্রী তার অধিবাসীদের কাছে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠছে! পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মঙ্গলে যেতে লাখো আবেদন কী তারই প্রমাণ? নতুন গ্রহ আবিষ্কারের নেশা আর পৃথিবীর যাবতীয় আকর্ষণের মায়া তুচ্ছ করে মার্স ওয়ানের মঙ্গল যাত্রায় আগ্রহী মানুষের সংখ্যা ১ লাখে উন্নীত হওয়ার বিষয়টা অন্তত তেমন বিভ্রমই জাগায়।
এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার কোনো নিশ্চয়তা নেই জেনেও এক লাখেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান বরাবর। মঙ্গলে বসতি গড়ার অভিযানে যেখানে চলতি বছরের এপ্রিলে ১০ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল, মাত্র চার মাসে মার্স ওয়ানের দপ্তরে সে আবেদনের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি ছাড়িয়ে গেল।
২০২৩ সাল নাগাদ মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর ও বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে ‘মার্স ওয়ান’। মঙ্গলগ্রহে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। শর্ত ছিল যে, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কেবল চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত চারজন ব্যক্তিকেই শুধু মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে দেওয়া হবে আর তাঁদেরকে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হবে। পরবর্তীতে মঙ্গলগ্রহের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে অভিযাত্রীদের নিজেদেরই চেষ্টা করতে হবে মঙ্গলে বেঁচে থাকার জন্য।

২০১২ সালে মঙ্গলে বসতি গড়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান। এ প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ব্যাস ল্যান্ডসড্রপ। এরমধ্যে মঙ্গল অভিযানে যাওয়ার সব পরিকল্পনা শেষ করে কাজে নেমে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলে মনুষ্যবাহী প্রথম অভিযানের ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ব্যাস ল্যান্ডড্রপসের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে প্রথমে ৪০ জনকে নির্বাচন করা হবে এবং এদের প্রশিক্ষণ শেষে চূড়ান্তভাবে চারজনকে বেছে নেওয়া হবে। ২০২৩ সালে চার নভোচারীর প্রথম দলটি মঙ্গলে যাবে। এরপর প্রতি দুই বছর পরপর নতুন অভিযাত্রীরা যোগ দেবেন তাদের সঙ্গে। এর আগে মঙ্গল গ্রহে চালানো হবে প্রাথমিকভাবে টিকে থাকার উপযোগী পরিবেশ নির্মাণের চেষ্টা। তবে, মার্স ওয়ানের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যাঁরা মঙ্গলে যাবেন তাঁরা আর ফেরার আশা করতে পারবেন না। মহাকাশে মানুষের বসতি ছড়িয়ে দিতে তাদের সেখানে আবাদ করতে হবে, বংশবৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। সেখানে বেঁচে থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশও তাদেরকেই তৈরি করে নিতে হবে।

মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর আগে অবশ্য বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরির ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য মার্স ওয়ান কাজ করবে। মঙ্গল মিশন সফল করতে ২০১৪ সালে একটি যোগাযোগ উপগ্রহ পাঠানো হবে মঙ্গলের কক্ষপথে। ২০১৮ সালে রোবট পাঠিয়ে বসতির উপযুক্ত স্থান নির্ধারণ করা হবে। এরই মধ্যে খাবার, রসদ আর জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম নিয়ে উড়ে যাবে একাধিক নভোযান। মঙ্গলের বুকে প্রথম বসতি স্থাপনকারীদের জন্য শক্তির জোগান দিতে সৌর প্যানেল বসানো এবং গ্রহের পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে পানি ও অক্সিজেন তৈরির আয়োজনও সেরে ফেলা হবে। সব ঠিক থাকলে চারজন নভোচারী মঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা করবেন ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। প্রায় একমাস পর তারা পা রাখবেন মঙ্গলের মাটিতে।

এ অভিযানে অংশ নিতে আবেদন করতে পারছেন কেবল প্রাপ্তবয়স্করা, অর্থাত্ ১৮ বা তার বেশি বয়সী এবং শারীরিকভাবে সক্ষম যে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তবে এজন্য নিজের দেশের মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে পাঁচ থেকে ৭৫ ডলার পর্যন্ত ফি দিতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে আবেদনকারীদের  মধ্যে থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে চার জন করে মোট ছয়টি দল গঠন করা হবে। এরপর মঙ্গল অভিযানের উপযুক্ত করে তুলতে ৮ বছর ধরে প্রশিক্ষণ চলবে তাঁদের।
মার্স ওয়ানের পরিকল্পনার সফলতা নিয়ে অনেক গবেষক সংশয়ে রয়েছেন। তাঁদের যুক্তি নভোচারীদের অতি তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচাতে এখন পর্যন্ত টেকসই কোনো প্রযুক্তি উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলসহ মহাকাশ অভিযানে এটি একটি বড় বাধা। এ ছাড়াও দূর মহাকাশে পাড়ি দিতে যে দ্রুতগতির মহাকাশযান প্রয়োজন এখনও সে পর্যায়ে যেতে পারেনি গবেষকেদের তৈরি মহাকাশযানগুলো।

গবেষকেরা অবশ্য ২০২৩ সালের আগেই মঙ্গল গ্রহে মানুষের পা পড়বে বলে আশাবাদী। ইতিমধ্যে মার্স ওয়ানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সবার আগে মঙ্গল জয় করার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। তড়িঘড়ি  মঙ্গল যাত্রার এ আয়োজন আর পৃথিবীর মায়া কাটানোর জন্য অসহিষ্ণু পৃথিবীবাসীর লাখো আবেদন দেখে বিভ্রম জাগাটাই স্বাভাবিক।

মার্স ওয়ানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা

http://www.mars-one.com/en/