মাঠের খেলা বড় নাকি কম্পিউটারের?

টিভিতে তখন বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ের খেলা চলছিল। হারারেতে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি। মাঠে দর্শকদের আসনসংখ্যা এমনিতেই কম, তবে সেখানে কোনো দর্শকের দেখা নেই। করোনাকাল শুরুর পর থেকে মাঠের খেলার চালচিত্র এমনই।

অন্যদিকে লকডাউনে ঘরে থাকার সময়টাতে বেড়েছে ভিডিও গেমের বাজার। সেটা জয়স্টিক হাতে টিভির সামনে হোক, মুঠোফোনে হোক কিংবা কম্পিউটারের সামনে। মানুষ গেম খেলার যন্ত্র (কনসোল) কেনায় যেমন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, তেমনই নতুন গেম কেনায় টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেনি।

একই মেয়াদে দুই ধরনের খেলা হেঁটেছে ভিন্ন পথে। হয়তো সে কারণেই মাথায় প্রশ্ন এল, মাঠের খেলার বাজার কি পর্দার খেলার (পড়ুন ভিডিও গেম) বাজারের চেয়ে ছোট হয়ে আসছে? গুগলে খানিকটা ঘাঁটতেই সম্ভাব্য উত্তর মিলেছে। তবে সে উত্তরে যাওয়ার আগে ভিডিও গেমের আরেকটি খবর জেনে নিই চলুন।

ভিডিও গেম এখন হলিউডের চেয়ে বড়

দিন কয়েকের ব্যবধানে দুটি প্রতিবেদনে বলা হলো, ভিডিও গেমের বাজারে পা রাখছে নেটফ্লিক্স। ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মটি তা নিশ্চিতও করেছে। করোনাকালে টিভি সিরিজ আর সিনেমার মতো বিনোদনের বর্ধিঞ্চু খাত থেকে কেন অজানা পথে পা বাড়াল প্রতিষ্ঠানটি? সে উত্তর মিলবে আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদনে।

গত জানুয়ারিতে মার্কেটওয়াচ জানাল, করোনার প্রভাবে ভিডিও গেমের বৈশ্বিক বাজার এখন চলচ্চিত্রের বৈশ্বিক বাজারের চেয়ে বড়। কেবল চলচ্চিত্র নয়, এর সঙ্গে উত্তর আমেরিকার ক্রীড়া খাত যোগ করলেও ভিডিও গেমই এগিয়ে থাকবে।

একই প্রতিবেদনে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসির তথ্য উপস্থাপন করে বলা হলো, গত বছর ভিডিও গেম শিল্প থেকে আয় ২০ শতাংশ বেড়ে ১৮ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২১ সালজুড়ে সে সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে না।

অন্যদিকে মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রশিল্পের আয় ১০ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে। ২০২০ সাল তো মন্দাই গেল। এ বছরও খুব ভালো সাড়া নেই। আর পিডব্লিউসির অনুমান অনুযায়ী, ২০২০ সালে উত্তর আমেরিকার ক্রীড়া খাতের আয় সাড়ে সাত হাজার কোটি ডলারের আশপাশে। এই দুটি খাতেই করোনার বড় প্রভাব পড়েছে।

এখন বলুন, ভিডিও স্ট্রিমিং সেবার পাশাপাশি গেম স্ট্রিমিং সেবায় মনোনিবেশ করলে কি নেটফ্লিক্সকে দোষ দেওয়া যায়?

এবার চলুন আমাদের প্রথম প্রশ্নে

ব্যবসায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেনচার এ বছর এপ্রিলের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক ভিডিও গেমশিল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, এখন গেমিং খাত থেকে মোট আয় ৩০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ আয় ২০ হাজার কোটি, বাকিটা পরোক্ষ। প্রবৃদ্ধির এমন হারের পেছনে মোবাইল গেমিংয়ের বড় ভূমিকার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে দ্য বিজনেস রিসার্চ কোম্পানির ‘স্পোর্টস গ্লোবাল মার্কেট রিপোর্ট ২০২১’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক খেলার বাজার ২০২০ সালের ৩৮ হাজার ৮২৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৭৭ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ কিছুটা পুনরুদ্ধারের পথেই হাঁটছে।

সেদিক থেকে দেখলে মাঠের খেলা এখনো ডিভাইসের খেলার চেয়ে বড়। তবে করোনাকালে পার্থক্যটা ক্রমেই কমে এসেছে। এখন এই ধারা অব্যাহত থাকবে নাকি করোনা–পূর্ব ধারায় ফিরে যাবে, তা-ই দেখার বিষয়।