২০১৪ সালের এসএসসির প্রস্তুতি: বাংলা ও জীববিজ্ঞান

 বাংলা ১ম পত্র  অংশ-১
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আজ বাংলা ১ম পত্র থেকে একটি সৃজনশীল পদ্ধতির নমুনা প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো।

রফিকের ছেলেমেয়েরা ইংরেজি স্কুলে পড়ছে। রফিক বিদেশি গান-বাজনা বেশি পছন্দ করেন। কথাও বলেন ইংরেজিতে। অন্যেরা তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতে তাল মেলাতে না পারলে তাদের তিনি অবজ্ঞা করে বলেন, ‘তোরা তো এখনো বাঙাল-ই রয়ে গেলি’। রফিকের মা প্রায়ই ছেলেকে বলেন, ‘তোর সঙ্গে কথা বলে সুখ নাই।’
ক. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ‘তোরা তো এখনো বাঙাল-ই রয়ে গেলি’- —উক্তিটির মাধ্যমে রফিকের যে মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে কবির অভিমত ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘তোর সঙ্গে কথা বলে সুখ নাই’- —রফিকের মায়ের এ উক্তি কবির মানসিকতাকেই সমর্থন করে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
১ (ক) নং নম্বর প্রশ্নের উত্তর:
‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
১ (খ) নং নম্বর প্রশ্নের উত্তর:
‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় হিন্দুর অক্ষর’ বলতে বাংলা ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।
তত্কালীন সময়ে এদেশের রাষ্ট্রভাষা ছিল ফারসি। ধর্মীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন কিছু রক্ষণশীল গোঁড়া মুসলমান তাই তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে আরবি-ফারসির প্রতি গভীর অনুরাগ দেখাতে থাকে। কূপমণ্ডুকতার কারণে তারা মনে করত, কোরআন-হাদিসের ভাষা আরবি। কাজেই আরবি-ফারসি ভাষা ছাড়া আল্লাহ-রাসুূলের সান্নিধ্য লাভ সম্ভব নয়। তা ছাড়া এদেশের প্রাচীন অধিবাসী ছিল হিন্দু এবং তাদের ভাষা ছিল বাংলা। আর বাংলা বর্ণমালাগুলো এসেছে ব্রাহ্মীলিপি থেকে রূপান্তরিতভাবে, যা হিন্দুদের তৈরি করা। ফলে মুসলমান হয়ে এ ভাষাকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। ফলে তারা ভাষাকে অবজ্ঞা করে হিন্দুর অক্ষর বলত।
১ (গ) নং নম্বর প্রশ্নের উত্তর:
‘তোরা এখনো বাঙাল-ই রয়ে গেলি’—এ উক্তির মাধ্যমে রফিকের স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে।
‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি আবদুল হাকিম মাতৃভাষা অবজ্ঞাকারীদের প্রতি চরম ক্ষোভ ও ধিক্কার প্রদর্শন করেছেন। কবির মতে, যারা এদেশে জন্মগ্রহণ করে, এদেশের আলো-বাতাসে বড় হয়ে ভিনদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত এবং মায়ের মুখের ভাষার প্রতি উন্নাসিকতা দেখায়, তারা শিকড়হীন, পরগাছা। কবি মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগহীন সেসব পরগাছাকে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে বলেছেন। আর মাতৃভাষাকে যারা অবজ্ঞা করে বা ঘৃণার চোখে দেখে, কবি তাদের জন্ম পরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেছেন। কবির ভাষায়, ‘যেসবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সেসবে কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’
আলোচ্য উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, রফিক এদেশের সন্তান হয়েও বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি মোহাচ্ছন্ন। কথা বলা, গান শোনা থেকে শুরু করে সকল আচার-আচরণেও তাঁর ভিনদেশি আবহ। শুধু তা-ই নয়, নিজের সন্তানদেরও তিনি বিদেশি ভাষার প্রতি অনুবাগী অনুরাগী করে তুলছেন। ইংরেজির প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধ। তার সঙ্গে ইংরেজিতে তাল মেলাতে না পারলেই তিনি অবজ্ঞার সুরে বলেন, ‘তোরা এখনো বাঙাল-ই রয়ে গেলি।’ তাঁর সামগ্রিক আচরণে স্বদেশ, স্বভাষা এবং স্বজাতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। আর এ মানসিকতার ধারক ও বাহকদের কবি চরম ধিক্কার দিয়েছেন।
# পরবর্তী অংশ ছাপা হবে আগামীকাল

মাস্টার ট্রেইনার, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি, শিক্ষক, সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল, ঢাকা