অনলাইনে শিশুর নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন অভিভাবক

ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের এক দিন চলা সম্ভব না। মানুষের সব কাজেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ঘরের কনিষ্ঠতম সদস্যেরও ইন্টারনেট চাই-ই চাই। কিন্তু আপনার প্রিয় সন্তান ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে কী করছে তার খবর অনেকেই রাখে না।

আপনার সন্তান অনলাইনে কী করছে এ বিষয় প্রথম আলো এবং গ্রামীণফোন যৌথভাবে ‘আপনার শিশুর অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে ঠিক লাইনে আছেন তো?’ বিষয়ে এক জরিপ করে। এতে ৪টি আলাদা আলাদা প্রশ্ন করা হয়। এ প্রশ্নগুলো ৪ হাজার ৩২৪ জনের কাছে জানতে চাওয়া হয়।

আপনার সন্তান অনলাইনে সাধারণত কী করে—এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ২ হাজার ৩৮১ জন। ৭৯২ জন উত্তরদাতা বলেছেন চ্যাটিং করে। গেমস খেলে বলেছেন ১ হাজার ৫ জন। ১ হাজার ৮৪ জন জানিয়েছেন, সন্তান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ১ হাজার ৪৪৩ জন উত্তর দিয়েছেন পড়াশোনা ও অনলাইনে ক্লাস করেন।

করোনা মহমারির কারণে সারা বিশ্বে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। গত বছরের মার্চের শেষ থেকে বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কয়েক মাস পর শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। তাই করোনাকালে অনলাইনে ক্লাস করার শিশুর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি।

একই কারণে শিশুরা ঘরবন্দী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি আসক্তি হয়ে যায়।

মাঠে খেলার পরিবর্তনে ঘরে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কাটাতে থাকে। করোনাকালে যেহেতু সামনাসামনি দেখা হতো না, তাই অনেক শিশুর চ্যাটিং করে সময় কাটত।

শিশুর সব অনলাইন বন্ধুকে কি আপনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন—এমন প্রশ্ন করা হয় জরিপে অংশগ্রহণকারীদের। এ প্রশ্নটিতে উত্তর দিয়েছেন ২ হাজার ৩৮১ জন। এতে হ্যাঁ বলেছেন ৭২১ জন আর না বলেছেন ১ হাজার ৬৬০ জন।

এ থেকে বোঝা যায়, শিশু অনলাইনে কাদের সঙ্গে মেলে তা অভিভাবকেরা জানেই না। অভিভাবকেরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে এমনটা হয়ে থাকে বলে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এর ফলে সন্তান বিপথে চলে যেতে পারে। তাই সন্তান অনলাইনে কাদের সঙ্গে মেশে, তাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা উচিত জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

আপনার শিশু তার অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গে কোন ধরনের তথ্য শেয়ার করছে, তা জানেন—এর উত্তরে হ্যাঁ বলেছেন ৭৯২ জন। না বলেছেন ১ হাজার ৫৮৯ জন।

বর্তমানে প্রায়ই শোনা যায় অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে সন্তানেরা। এর ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য জিম্মি করে বা সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে যৌন হয়রানি, টাকা আদায়সহ নানা হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।

সঠিক লাইনে অনলাইনে থাকার জন্য যথেষ্ট তথ্য কি ইন্টারনেটে খুঁজে পান—১ হাজার ১৫৫ জন এ প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বলেছেন। ১ হাজার ২২৬ জন বলেছেন না। ইন্টারনেট একটি ওপেন সোর্স। এখানে ভালো–মন্দ সব তথ্য খুঁজতে আসে ব্যবহারকারীরা। কিন্তু কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় বা ঠিক লাইনে অনলাইন আছে কি না, এ তথ্য বেশির ভাগ উত্তরকারী না বলেছেন। মানে বেশির ভাগ মানুষই সঠিক তথ্য খুঁজে পায় না। তবে খুঁজে পাওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম না।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, দিন দিন অনলাইনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনের অপব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের ঠিক লাইনে অনলাইন পরিচালনা করার জন্য আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

জরিপটি পরিচালনা করতে সহযোগিতা করে ইউনিসেফ, গ্রামীণফোন ও টেলিনর গ্রুপ।