এলিয়েনের খোঁজে মহাবিশ্বে গান পাঠানো হবে

মহাকাশ থেকে শব্দ শোনার জন্য রয়েছে এসইটিআই–এর বিশাল টেলিস্কোপ
ছবি : রয়টার্স

মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন ও ভিনগ্রহের জীবনের খোঁজে দীর্ঘদিন ধরেই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যাসকেড পর্বতমালায় ৪২টি রেডিও টেলিস্কোপ নক্ষত্রের দিকে এ লক্ষ্যেই তাক করা রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সার্চ ফর এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এসইটিআই) ইনস্টিটিউট কয়েক দশক ধরে ভিনগ্রহের রেডিও সংকেত এবং বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় বিকিরণ চিহ্নিত করার জন্য মহাজগৎ স্ক্যান করে চলেছে। ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সেই ১৯৮৪ সাল থেকে এসইটিআই প্রকল্পের মাধ্যমে ভিনগ্রহের প্রাণী অনুসন্ধানের কাজ শুরু করা হয়েছিল। ওই সময় কেবল মহাকাশের ছোট পরিসর নিয়ে কাজের সুযোগ ছিল বিজ্ঞানীদের। তবে এসইটিআই প্রকল্পের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জিল টার্টার ছিলেন অকুতোভয়। তিনি বলেন, তাঁর প্রকল্পের লক্ষ্য শুধু দূরবর্তী সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগ নয়। এটি মহাবিশ্বে মানুষের পরিমিত ও ভঙ্গুর জায়গাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এ কারণেই প্রথমবারের মতো এসইটিআই প্রকল্প থেকে পৃথিবীর দিকে কান খাড়া করা হচ্ছে।

এত দিন এসইটিআই প্রকল্পের মাধ্যমে ভিনগ্রহে নিয়মমাফিক যা খোঁজা হচ্ছিল, তা এখন পৃথিবীতেই খোঁজ করা হবে। মহাকাশে একটি সংকেত পাঠানো হবে, যা প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করবে। মেক্সিকোর সংগীতজ্ঞ ফিলিপ পেরেজ সান্তিয়াগো এ ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে এমন একটি ধারণা দিয়েছেন।

মানুষের কণ্ঠস্বরের মতোই গান যেহেতু সব জাতি ও ভাষার মধ্যে প্রচলিত, তাই গানই হতে পারে সেই সংকেত। পেরেজ ও টার্টার তাই ‘আর্থলিং প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশেই গানের অংশবিশেষ আপলোড করতে হবে। তাঁরা এসব গান ব্যবহার করে সমষ্টিগত কোরাস তৈরি করবেন।

নভোযান ভয়েজার-১
রয়টার্স ফাইল ছবি

এবারের গ্রীষ্মেই উইকিপিডিয়া এবং রোসটা প্রকল্পের পাশাপাশি ভার্চ্যুয়াল অবিনাশযোগ্য ডিস্কে লিখিত এই কোরাস মহাবিশ্বে পাঠানো হবে। ভবিষ্যতে এসব কিছু মঙ্গলগ্রহে পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।

মহাবিশ্বে পৃথিবীর সংগীত পাঠানোর ঘটনা একেবারে নতুন নয়। এর আগে ১৯৭৭ সালে ভয়েজারের দুটি নভোযানে করে গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানো হয়েছে। এগুলো এখন পৃথিবী থেকে ১১ বিলিয়ন মাইল দূরে। ১৯৭৭ সালে ভিনগ্রহবাসীর উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন নাসার গবেষকেরা। ১৯৭৭ সালে মহাকাশে পাঠানো ভয়েজার নভোযানে নাসার গবেষকেরা যে বার্তাগুলো পাঠিয়েছিলেন, সেগুলোকে ‘গোল্ডেন রেকর্ডস’ বলা হচ্ছে।

বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ ও সংস্কৃতি ও যুগ থেকে নির্বাচিত সংগীত এবং বিশ্বের ৫৫টি ভাষায় সম্বোধন রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি ভাষাও রয়েছে। বাংলায় যে বার্তাটি রেকর্ড করা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছে, ‘নমস্কার, বিশ্বে শান্তি হোক’। এ ধরনের বার্তা ছাড়াও পৃথিবী থেকে বৃষ্টির শব্দ, মানুষের হৃৎস্পন্দন ও পাথুরে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের শব্দ রেকর্ড করে ভয়েজারে করে পাঠানো হয়েছিল।

এবারে এসইটিআই প্রকল্পের জন্য নতুন করে চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছেন কম্পোজার পেরেজ সান্তিয়াগো। তাঁর ভাষ্য, এসইটিআই প্রকল্পের জন্য তাঁর তৈরি করা প্রথম সংগীতটিকে ‘শব্দপ্রাচীর’ বা ওয়াল অব সাউন্ড বলা যায়। এতে ১০ হাজার মানুষের অবিচ্ছিন্ন কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হয়েছে। পরে তিনি এ প্রকল্পের জন্য ‘আর্থলিং সিম্ফনি’ নামে একধরনের সংগীত নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেন।ৎ

শান্তিয়োগো বলেছেন, তাঁদের প্রকল্পে যেসব গান জমা পড়বে, সব কটিই তাঁরা ব্যবহার করবেন। আর্থলিং প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান তাঁরা।
শান্তিয়াগো আরও বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি মানুষকে একত্র করেছে।

এই অন্ধকার সময়ে এসইটিআই ও তিনি মিলে মানব সম্প্রদায়কে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে উৎসাহ দিতে কাজ করবেন। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা যদি সমন্বিত বার্তা সবাইকে পাঠাতে পারি, তবেই আমাদের মিশন সম্পন্ন হবে।’