করোনা হওয়ার পরও কি টিকা নিতে হবে?

করোনা টিকা
ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও আগামী জানুয়ারি মাসে টিকা দেওয়া শুরু হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তিরা প্রাধান্য পাবেন। এরপর কয়েক ধাপে টিকা দেওয়া হবে। এ অবস্থায় অনেকের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দেয়। যেমন: আমার যদি আগে কোভিড (করোনা) হয়ে থাকে এবং সুস্থ হয়ে উঠি, তাহলেও কি টিকা নিতে হবে? এ ধরনের প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন নিয়ে সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইন ভার্সনে অপূর্ভা ম্যান্ডাভিলি (Apoorva Mandavilli <https://www. nytimes. com/by/apoorva-mandavilli> ৫ ও ৮ ডিসেম্বর) দুটি নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি ভাইরোলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন।

যেমন ধরা যাক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: একবার আক্রান্ত হয়ে কোভিডমুক্ত হলে তো দেহে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করে। অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এ অবস্থায় আমার বয়স যা-ই হোক, বেশি বা কম, আমার টিকা নেওয়া কতটা জরুরি। আমার কি আদৌ টিকা নেওয়া দরকার? জটিল প্রশ্ন। এ বিষয়ে কারও কারও মতে একবার কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর যেহেতু তাঁর রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা সৃষ্টি হয়ে যায়, তাই আর টিকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সবারই টিকা নেওয়া ভালো।

কারণ, আক্রান্ত ব্যক্তি কী মাত্রায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তারপর কত দ্রুত সুস্থ হয়েছেন, সে অনুযায়ী তাঁর দেহে প্রতিরোধী ক্ষমতা কার্যকর হয়। হারভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজিস্ট বিল হ্যানেজ এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির করোনাভাইরাস যদি হালকা ধরনের হয় এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাহলে তাঁর দেহে সৃষ্ট প্রতিরোধী ক্ষমতা সাধারণত বেশি দিন সক্রিয় থাকে না। এ অবস্থায় তাঁর টিকা নেওয়া দরকার। সুতরাং, সাধারণভাবে বলা যায়, সবার জন্যই টিকা প্রযোজ্য।

টিকা নিলেও কি মাস্ক পরতে হবে?
প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক। কারণ, টিকা নেওয়ার পর একজন ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটার কথা নয়, কারণ, করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তাঁকে সুরক্ষা দেবে। এ অবস্থায় তাঁর মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা না থাকারই কথা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নিলে একজন নিশ্চয়ই কোভিড-১৯ রোধের সক্ষমতা অর্জন করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাঁরা অন্যের জন্য কতটা নিরাপদ। তাঁরা অন্যদের দেহে কোভিডের সংক্রমণ ছড়াতে পারেন কি না? এটা এখনো পরিষ্কার নয়।

কারণ, টিকা দেওয়া হয় হাতের পেশিতে। এর ফলে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু নাকের গভীরে কোভিড ভাইরাস দমনে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এখন পর্যন্ত যেসব পরীক্ষা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে টিকা সুরক্ষা দেয়। কিন্তু সবার অজান্তে ভাইরাস ছড়ায় কি না, সে পরীক্ষার ফল এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। এমনও হতে পারে, টিকা নিলে নিজে সুরক্ষা পাবেন ঠিকই কিন্তু তারপরও হয়তো অন্যদের দেহে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারেন। টিকা নেওয়ার ফলে নিশ্চয়ই সংক্রমণ ছড়ানোর হার কমে আসবে। কিন্তু তারপরও দেখতে হবে, তাঁরা নিজেরা সংক্রমণমুক্ত অবস্থায়ও অন্যদের সংক্রমিত করেন কি না। সে জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নিয়মিত মাস্ক পরা দরকার। তবে সেটা সাময়িক সময়ের জন্য। এর মধ্যে পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে জানা যাবে টিকার ফলে সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ হয় কি না।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট আকিকো আইওয়াসাকি অবশ্য বলেছেন, টিকা নিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নাকের গভীরেও তা সক্রিয় ভূমিকা রাখে এবং সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ন্ত্রিত হয়।

সবার কি টিকা নিতে হবে?
তরুণ ও যুবাদের কোভিডে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম। কম ঝুঁকিতে থাকেন বলে হয়তো বলতে পারেন, এত টানাটানির মধ্যে তাঁদের টিকা না নিলেও তো চলে। কারণ, তাঁদের তো ঝুঁকি কম, আর আক্রান্ত হলেও খুব বেশি তীব্র হয় না। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। সবারই টিকা নিতে হবে। পর্যায়ক্রমে। না হলে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে। দেশের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশ টিকা নিলে কোভিডের অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না। তাই পাঁচ ভাগের চার ভাগ মানুষের টিকা নেওয়া অবশ্যই দরকার।

আব্দুল কাইুয়ম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]