ফেসবুকের ব্যবসা এখন ‘ই–কমার্স’ আর ‘খবর’

ই–কমার্সে গুরুত্ব দিচ্ছে ফেসবুক
ছবি: রয়টার্স

অনেকে প্রশ্ন করেন, ফেসবুক ই-কমার্স, নাকি সংবাদমাধ্যম? ফেসবুক কর্তৃপক্ষ একে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বলে থাকে। তবে ফেসবুকের ‘ই-কমার্স’ আর ‘খবর’ নিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর বিষয়টি এখন পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ফেসবুকের মূল অ্যাপে ‘শপ’ নামে একটি বিভাগ চালু হচ্ছে, ইনস্টাগ্রামে ‘লাইভ শপিং’ সুবিধা আরও বড় হচ্ছে। ফেসবুক নিউজ নামের সেবাটি বিস্তৃত হচ্ছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ভারত ও ব্রাজিলে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুক বেশ কিছু নতুন ই-কমার্স ফিচার তাদের মূল অ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামে চালু করছে।

বর্তমানে করোনা মহামারির কারণে অনেক ব্যবসা অনলাইনে চলে গেছে। গত মে মাসে ফেসবুক ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা ব্যবসায়ীদের ফেসবুকে শপ খুলতে দেবে, যা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে দেখা যাবে। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রাম নতুন নকশায় শপ অংশটিকে সাজিয়েছে। এতে ব্যবহারকারী তাঁর প্রিয় ব্র্যান্ডের পণ্য দেখতে পারেন সহজে। ফেসবুক এখন এ ফিচার ফেসবুক অ্যাপে যুক্ত করবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ফিচারটি পরীক্ষা শুরু করেছে তারা। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ফেসবুক শপ’। এ শপে ই-কমার্স সাইটের মতো বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পণ্য প্রদর্শন করবে ফেসবুক।

টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, ই-কমার্সের পাশাপাশি ফেসবুক এখন খবর নিয়ে কাজ করতে মনোযোগী হয়েছে। গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক নিউজ নামে যে বিশেষ বিভাগ তারা চালু করেছে, তা এখন আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আরও পাঁচটি দেশে ফেসবুক নিউজ বিভাগটি বাড়ানো হচ্ছে।

ফেসবুকের পণ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান জর্জ লি বলেন, তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে ফেসবুক অ্যাপে ও ফেসবুক কমিউনিটির জন্য নতুন কিছু যুক্ত করা, যা আগে ছিল না। ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে ফেসবুক কাজ করবে।


ফেসবুকে যাঁরা শপ পরিচালনা করতে চান, তাঁদের সুবিধার জন্য নতুন নকশা, পণ্য সহজে সাজানোর সুযোগ ও স্বয়ংক্রিয় শপ তৈরির সুযোগ রাখছে ফেসবুক। এতে নতুন মেসেজিং অপশন থাকবে, যাতে গ্রাহকেরা মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইনস্টাগ্রাম ডিরেক্ট ব্যবহার করে বিক্রেতাকে বার্তা পাঠাতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইনস্টাগ্রামে চেকআউট বা অর্থ পরিশোধের সুবিধাও যুক্ত হচ্ছে। পণ্য বিক্রির পর সেখান থেকে নির্দিষ্ট ফি কেটে রাখবে ফেসবুক। এর বাইরে ইনস্টাগ্রামে লাইভ শো চালু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, ই-কমার্সের পাশাপাশি ফেসবুক এখন খবর নিয়ে কাজ করতে মনোযোগী হয়েছে। গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক নিউজ নামে যে বিশেষ বিভাগ তারা চালু করেছে, তা এখন আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তৃত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আরও পাঁচটি দেশে ফেসবুক নিউজ বিভাগটি বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এসব দেশে ফেসবুক নিউজ চালু হবে। এ বিভাগ চালু রাখতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও প্রকাশকদের সঙ্গে চুক্তি করবে ফেসবুক। যুক্তরাষ্ট্রে খবর প্রকাশকদের অর্থ দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে অন্য দেশগুলোয় কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোবে, সে তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।

দেশভেদে গ্রাহকের অভ্যাস ও খবর পড়ার ধরন ভিন্ন। আমরা প্রতিটি দেশের সংবাদ অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব, যাতে গ্রাহককে মূল্যবান অভিজ্ঞতা দিতে পারি। পাশাপাশি প্রকাশকদের ব্যবসার মডেলকে সম্মান জানাতে পারি
ক্যাম্পবেল ব্রাউন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফেসবুকের গ্লোবাল নিউজ পার্টনারশিপ

ফেসবুকের গ্লোবাল নিউজ পার্টনারশিপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পবেল ব্রাউন বলেন, ‘দেশভেদে গ্রাহকের অভ্যাস ও খবর পড়ার ধরন ভিন্ন। আমরা প্রতিটি দেশের সংবাদ অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে, যাতে গ্রাহককে মূল্যবান অভিজ্ঞতা দিতে পারি। পাশাপাশি প্রকাশকদের ব্যবসার মডেলকে সম্মান জানাতে পারি।’

তবে ফেসবুক নিউজ নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে গেলে বেশ কিছু নিয়মনীতি ও আইনের মুখোমুখি হতে হবে ফেসবুককে। অস্ট্রেলিয়াতে ইতিমধ্যে ফেসবুক নিউজ নিয়ে বাধার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুক ও গুগল উভয়কেই খবর প্রকাশের জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে নিয়ম করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নেও এ রকম আইন রয়েছে। ফ্রান্সে যেমন গুগলকে সার্চ ও গুগল নিউজে খবর প্রকাশের জন্য অর্থ পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নতুন করে পাঁচটি দেশে ফেসবুক নিউজ বিস্তৃত করার অর্থ হচ্ছে, এসব দেশের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সফলভাবে আলোচনা চালিয়েছে। তবে বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ঘিরে ভুয়া খবর, ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মতো বিষয় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে ফেসবুক নিউজ কতটা সফল হবে, তা দেখার বিষয়।

এর আগে ২০১৮ সালে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছিল, সংবাদমাধ্যম হতে চায় না ফেসবুক। তাই সাইটের বিতর্কিত ‘ট্রেন্ডিং’ ফিচারটিকে তারা বাদ দিয়েছে। ফেসবুকের ট্রেন্ডিং ফিচারটি নিয়ে ওই সময় ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর অ্যালগরিদমে বিভিন্ন খবর নির্বাচন নিয়েই এ বিতর্ক। অ্যালগরিদম নিখুঁতভাবে সংবাদ বাছাই করতে পারে না বলে প্রায়ই ভুয়া খবর ট্রেন্ডিং হয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময়ে ফেসবুক বলেছিল, ভবিষ্যতে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নতুন অভিজ্ঞতা দিতে তারা ট্রেন্ডিং ফিচার বাদ দিয়েছে। এরপর ফেসবুক খবর প্রকাশকদের জন্য ইনস্টাগ্রাম আর্টিকেল আনে। কিন্তু এটি খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি। এরপর ফেসবুক ঝুঁকে পড়ে ভিডিওর দিকে। তারা নিউজ ভিডিওর জন্য নির্দিষ্ট ফিচার ‘ফেসবুক ওয়াচ’কে গুরুত্ব দিতে শুরু করে। এটি মূলত ইউটিউবের মতো ফেসবুকের ভিডিও হাব।

‘ট্রেন্ডিং’ সেকশন নিয়ে বিতর্কের মুখে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ বলেন, ফেসবুক সংবাদমাধ্যম নয়, এটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলেন, গত দুই বছরে ফেসবুকে ভুয়া খবর প্রচার আরও বেড়েছে। ভুয়া খবর প্রচার ঠেকানোর অভিযোগে ফেসবুকের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার মুখে বেশ কিছু পরিবর্তনও এনেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফ্যাক্ট চেকিং, প্রকাশকের তথ্য প্রকাশ, সংশ্লিষ্ট খবর, ভুয়া খবর নিউজ ফিডে দেখানো বন্ধ করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।|


কয়েক বছর আগে ফেসবুকের নিউজ প্রোডাক্টসের প্রধান অ্যালেক্স হার্ডিম্যান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ‘চারপাশে কী ঘটছে, মানুষ সে সম্পর্কে জানতে চায়। মানুষ ফেসবুকে যেসব খবর দেখে, তা যেন উচ্চমানসম্পন্ন হয়, আমরা তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা ব্রেকিং নিউজের ক্ষেত্রে মানুষের আকর্ষণ ধরে রাখতে বিনিয়োগ করছি।’