চলতি বছরের শেষ ভাগে বাজারে অ্যাপলের পর্যাপ্ত পণ্য থাকবে না বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্ভাব্য ঘাটতির ব্যাপারে এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘাটতির মূল কারণ বৈশ্বিক কম্পিউটার চিপ–সংকট। এই চিপ যেকোনো আধুনিক ইলেকট্রনিক পণ্যের মূল উপাদান। করোনা মহামারির প্রভাবে গত বছর থেকে মানুষের মধ্যে ইলেকট্রনিক পণ্য কেনার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে ঘরে থেকে কাজ এবং অনলাইনে ক্লাসের জন্য কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের চাহিদা বাড়ে। গেম খেলার যন্ত্রের মতো হোম এন্টারটেইনমেন্ট পণ্যের চাহিদাও বছরজুড়ে বেশি ছিল।
এদিকে অর্থনৈতিক মন্দার জন্য গাড়ি বিক্রি যতটা কমে যাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, ততটা হয়নি। এতে ফলাফল দাঁড়াল, কম্পিউটার চিপ–সংকটের প্রভাবে গাড়ি, স্মার্টফোনের মতো প্রযুক্তিনির্ভর গ্যাজেট ইত্যাদি যন্ত্রের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে শুরু করল প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন গোটা বিশ্বেই পরিস্থিতি এমন।
অ্যাপলের নিজস্ব চিপসেট ‘এম১’-নির্ভর গ্যাজেটগুলো সরবরাহে সম্ভাব্য সমস্যার কথা বেশি করে বলছেন টিম কুক। এর মধ্যে নতুন মডেলের আইপ্যাড এবং ২০২১ মডেলের আইম্যাক কম্পিউটার রয়েছে।
সরবরাহের এ ঘাটতির প্রভাব অ্যাপলের মুনাফাতেও পড়তে পারে। গত বুধবার জানানো হয়, এক বছর আগের তুলনায় এবার ৫৪ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নির্ধারণের সুযোগ এবার পাবেন না বলে মনে করছেন টিম কুক। বরং উল্টোটা হতে পারে। বিশ্লেষকদের তিনি বলেছেন, ‘এ ঘাটতি মূলত আইপ্যাড এবং ম্যাকে প্রভাব ফেলবে। চাহিদা আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। তবে বাকিরা কী করছে, আমার জানা নেই। আমরা আমাদের সেরাটা দেব, সেটুকু আমি বলতে পারি।’ ঘাটতি কবে মিটবে, তা অনুমান ‘খুব খুব কঠিন’ হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এদিকে চিপ তৈরির কারখানা চালু করাও বেশ কঠিন। প্রথমত এতে বেশ সময় লাগবে। তার ওপর খরচ মেটাতে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় সমহারে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার মতো চাহিদা জারি থাকতে হবে। চিপের এ ঘাটতি তাই সহজে মিটবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা।
কুইল্টার শাভিয়ের শেয়ার বিশ্লেষক বেন ব্যারিংগার বিবিসিকে বলেন, ‘উৎপাদনকারী এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সেমিকন্ডাক্টর ঘাটতির সমাধান করতে খাবি খাচ্ছে। এর শুরুটা ২০১৮ সালে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের সময়।’ সঙ্গে যোগ করেন, করোনা সংকটে সমস্যাটি আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন অত্যধিক চাহিদার মুখোমুখি হয়েছে কিংবা অর্থনীতির চাকা সচল হলে মুখোমুখি হবে।
করোনাকালে অ্যাপলের স্মার্টফোন, অ্যাপ ও অন্যান্য যন্ত্রের চাহিদা বেড়ে গেছে। গত বছর বাজারে আসা অ্যাপলের ফাইভ-জি সমর্থিত আইফোনে গ্রাহকদের আগ্রহ ছিল বেশি। আর ঘরে থেকে কাজ ও পড়াশোনার জন্য ম্যাক কম্পিউটার ও আইপ্যাডের বিক্রিও বেড়েছে বেশ।