সবার জন্য গণিত: সংখ্যাটি কত?

গণিতে অনেক মজার মজার সমস্যার সহজ সমাধান আছে। তেমনি একটি সমস্যা দেখুন। একটি জটিল প্রশ্ন করছি। আমি যদি বলি, একটি ধনাত্মক সংখ্যার ঘনফলকে সব সময় দুটি বর্গ সংখ্যার পার্থক্য হিসাবে প্রকাশ করা যায়-এর কি কোনো প্রমাণ আছে? যেমন ৪-একটি ধনাত্মক সংখ্যা। এর ঘনফল ৬৪। আবার ৬৪ = (১০০-৩৬)। অর্থাৎ ৪-এর ঘনফলকে ১০-এর বর্গ ও ৬-এর বর্গের পার্থক্য রূপে প্রকাশ করা যায়। এটা প্রমাণ করার একটি মজার উপায় আছে।

আমরা বর্গ সংখ্যাগুলো লিখে প্রতিটি পদ ও পূর্ববর্তী পদের পার্থক্য বের করলে একটি মজার ব্যাপার দেখব। বর্গ সংখ্যাগুলো হলো ০, ১, ৪, ৯, ১৬, ২৫, ৩৬, ৪৯, ৬৪, ৮১,...প্রভৃতি। এবং ধারাবাহিক পদগুলোর মধ্যে পার্থক্য যথাক্রমে ১,৩, ৫, ৭, ৯, ১১, ১৩, ১৫, ১৭,...প্রভৃতি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ক্রমিক বর্গসংখ্যাগুলোর মধ্যে পার্থক্যগুলো সব বিজোড় সংখ্যা। যদি পর পর বর্গ সংখ্যাগুলোর পার্থক্য বের না করে পরের পরের বর্গসংখ্যাটির সঙ্গে পার্থক্য বের করি তাহলে প্রথমে পাব ৪, যেটা (৪-০) এর সমান। তেমনি পরের পার্থক্যগুলো হবে যথাক্রমে (৯-১) = ৮, (১৬-৪) = ১২, (২৫-৯) = ১৬, (৩৬-১৬) = ২০, (৪৯-২৫) = ২৪,...প্রভৃতি। দেখা যাচ্ছে পার্থক্যগুলো সবই ৪ দিয়ে বিভাজ্য। অর্থাৎ ৪-এর সব গুণিতক (মাল্টিপলস) একটি বর্গসংখ্যার পরের পরেরটির মধ্যে পার্থক্য। বলা যায়,৪-এর সব গুণিতক এমন দুটি বর্গসংখ্যার পার্থক্য, যেগুলো একটির পরের পরে অবস্থিত। এখন ‘ক’ যদি একটি ধনাত্মক সংখ্যা হয়, তাহলে (ক + ১) একটি ঋণাত্মক সংখ্যা। আমরা আগেই দেখেছি দুটি পর পর বর্গসংখ্যার পার্থক্য একটি ঋণাত্মক সংখ্যা। তার মানে, (ক + ১)২ - ক = (২ক + ১), অথবা, (ক + ১)২ - (ক-১) = ৪ক, যা একটি বর্গ সংখ্যা, কারণ এটি একটি বর্গসংখ্যার পরের পরের বর্গসংখ্যার মধ্যে পার্থক্য। এখন দেখা যাক এই বর্গসংখ্যাটি ঘনসংখ্যাও কি না।

আমরা জানি, যেকোনো সংখ্যার ঘনফল জোড় অথবা বিজোড়। যদি জোড় সংখ্যা হয়, তাহলে সেটা ৮ এর গুণিতক। কারণ, কোনো সংখ্যার ঘনফল জোড় হতে হলে সংখ্যাটি অবশ্যই জোড় সংখ্যা হবে। ধরা যাক একটি সংখ্যা = (২ক), যা একটি জোড় সংখ্যা। এর ঘনফল = (২ক)= (৮×ক)। এক কথায় বলা যায় যে, কোনো ঘনসংখ্যা ৮-এর গুণিতক। তাহলে সেটা ৪-এরও গুণিতক। এবং সে কারণে সেটা বর্গসংখ্যা হলেও একই সঙ্গে ঘনসংখ্যাও বটে এবং সেটা দুটি বর্গের পার্থক্য। সুতরাং আমরা বলতে পারি কোনো ধনাত্মক সংখ্যার ঘনফলকে সব সময় দুটি বর্গ সংখ্যার পার্থক্য হিসাবে প্রকাশ করা যায়।

এ সপ্তাহের ধাঁধা
একটি সংখ্যাকে ৫ দিয়ে ভাগ করলে ১ অবশিষ্ট থাকে এবং ৬ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট থাকে ২। এখন বলুন তো এ রকম ন্যূনতম সংখ্যাটি কত?
খুব সহজ। অনলাইনে মন্তব্য আকারে অথবা [email protected] ই-মেইলে আপনাদের উত্তর পাঠিয়ে দিন। সঠিক উত্তর দেখুন আগামী রোববার অনলাইনে।

গত সপ্তাহের ধাঁধার উত্তর
ধাঁধাটি ছিল এ রকম: ক্যালকুলেটর বা কাগজ-কলম ব্যবহার না করেই চট করে বলুনতো ২ থেকে ১২ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোকে ধারাবাহিকভাবে গুণ করলে যে সংখ্যাটি পাব তার শেষ অঙ্ক দুটি কত?

উত্তর
গুণফলের শেষে থাকবে দুটি শূন্য।

কীভাবে উত্তর বের করলাম
যেহেতু পুরো গুণফল বের করতে হবে না, তাই আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখি মোট ১১টি সংখ্যার বৈশিষ্ট্য কী। লক্ষ্য করব, এদের মধ্যে একটি সংখ্যা ১০। সুতরাং গুণফলের শেষে একটি শূন্য অবশ্যই থাকবে। আরও লক্ষ্য করি যে সংখ্যাগুলোর মধ্যে একটি ২ ও একটি ৫ আছে, যাদের গুণফল ১০। এর শেষ অঙ্কটিও শূন্য। সুতরাং ২, ৩, . . করে ৫ পর্যন্ত ধারাবাহিক গুণ করলেই শেষ অঙ্কের ঘরে একটি শূন্য পাব। এর পর ৬,৭ . . প্রভৃতি দিয়ে গুণ করতে থাকলে শেষ অঙ্কের ঘরে সেই একটি শূন্য থেকেই যাবে। এই ধারাবাহিকতায় যখন ১০ দিয়ে গুণ করব, তখন গুণফলের শেষে আরেকটি শূন্য যুক্ত হবে। এই পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা বলতে পারি পুরো গুণ ফলের শেষে দুটি শূন্য থাকবে। এটা বের করার জন্য ক্যালকুলেটর বা কাগজ-কলমের দরকার নেই।
উত্তর সঠিক কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য আমরা ক্যালকুলেটরে গুণ করে দেখি: (২×৩×৪×৫×৬×৭×৮×৯ ১০×১১×১২) = ৪৭৯০০১৬০০। শেষে রয়েছে (০০), দুটি শূন্য। উত্তর সঠিক।

আব্দুল কাইয়ুম, সম্পাদক, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা