সিঙ্গাপুর কেন টানছে তাদের

উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা নতুন কোম্পানিগুলোকে সিঙ্গাপুরে টেনে আনছে
ছবি: রয়টার্স

চীনের বড় কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের এখনকার ঠিকানা হচ্ছে সিঙ্গাপুর। বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার বাণিজ্য সংঘাত উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সিঙ্গাপুরনির্ভর হয়ে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে টেনসেন্ট ও আলিবাবাকে সিঙ্গাপুরে তাদের উপস্থিতি আরও জোরদার করতে দেখা যাচ্ছে। পিছিয়ে নেই চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সও। তারাও সিঙ্গাপুরে কোটি কোটি ডলার খরচ করছে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিরপেক্ষ অঞ্চল হিসেবে সিঙ্গাপুর তার অবস্থান ধরে রেখে লাভ করছে সিঙ্গাপুর। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেছে দেশটি। সুসম্পর্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক তেতো হয়ে উঠেছে। দুটি দেশের মধ্যে প্রযুক্তি নিয়ে বৈরিতা এখন সহজেই চোখে পড়ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে ওয়াশিংটন।

গত সপ্তাহে টেনসেন্ট ঘোষণা করেছে, তারা সিঙ্গাপুরে তাদের উপস্থিতি আরও জোরদার করবে এবং দক্ষিণ এশিয়াসহ বাইরের দেশে তাদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কাজ করবে। এ জন্য সিঙ্গাপুরে তারা আঞ্চলিক অফিস খুলছে। এটি দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় তাদের কৌশলগত সংযুক্তি হিসেবে কাজ করবে।

চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের তৈরি টিকটকের সঙ্গে টেনসেন্টের উইচ্যাট মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনও এখন যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন চীনা অ্যাপ ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যে দমননীতি গ্রহণ করেছে তার শিকার টিকটক ও বাইটড্যান্স। এর বাইরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশ্লেষক টমি ইয়ু বলেন, বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় ধরলে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চীন থেকে ব্যবসা আলাদা করে ফেলা বা চীনের বাইরে যাওয়ার পেছনে যুক্তি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর তাদের আদর্শ জায়গা হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে দেশটির প্রযুক্তিতে অগ্রগতি বিবেচনায় থাকবে। এর বাইরে চীনের সঙ্গে ভৌগোলিক মিল এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার উদ্ভাবনী হাব হিসেবেও এটি উপযুক্ত জায়গা।

অন্যদিকে উন্নত আর্থিক ও আইনি ব্যবস্থার কারণে সিঙ্গাপুরের ওপর ভরসা করতে পারছে পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অনেক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে সেখানে। তাই চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন সিঙ্গাপুরমুখী।

সিঙ্গাপুরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার যে সুবিধা আছে, তা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশে নেই
নিক রেডফার্ন, ডেপুটি প্রধান নির্বাহী, যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রাউজ

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবদেন অনুযায়ী, হংকংয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও চীনের বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের ফলে অনেক ব্যবসায়ী এশিয়ার মধ্যে স্থিতিশীল ব্যবসার পরিবেশ খুঁজছেন। সে ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের ওপরে ভরসা রাখছেন তাঁরা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রাউজ–এর ডেপুটি প্রধান নির্বাহী নিক রেডফার্ন বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার যে সুবিধা আছে, তা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনো দেশে নেই। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম বা অন্য দেশের বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা রয়েছে এখানে। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এ সুযোগ নিতে পারে।

রেডফার্নের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে ২০২০ সালে চীনের বৃহত্তম আঞ্চলিক বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।

চীনা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিনিয়োগকারী রুই মা বলেন, পশ্চিমা প্রতিষ্ঠান গুগল, ফেসবুক, লিংকডইন তাদের কার্যালয় স্থাপনে যে কারণে সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছে সে কারণেই চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সিঙ্গাপুরে দৌড়াচ্ছে। এখনকার মার্কিন-চীন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা সিঙ্গাপুরকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

তবে এর বাইরে বিশ্বায়নও একটি বড় কারণ হতে পারে। পশ্চিমা কোম্পানিগুলো যদি বৈশ্বিক কোম্পানি হতে পারে, তবে চীনারা কেন পিছিয়ে থাকবে? চীনা সংস্থাগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং ভবিষ্যৎ সুযোগের বিষয়টি পেছনে ফেলে রেখে সন্তুষ্ট হবে না তারা।