বারবার হাত ধোয়া দরকার কেন?

এই বাড়তি হাত ধোয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন? কারণ মানুষের ত্বকে করোনাভাইরাস একটু বেশি সময় টিকে থাকতে পারে। অবশ্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ধারা এত বিচিত্র ধরনের যে মানুষের ত্বকে এর টিকে থাকার সময়কাল সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করা কঠিন। তবে একটি বিশেষ মডেল অনুসরণ করে এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন।দেখা গেছে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ ভাইরাসের (আইএভি) তুলনায় করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) মানুষের ত্বকে অনেক বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, কোভিড–১৯ মানুষের ত্বকে প্রায় ৯ ঘন্টা টিকে থাকতে পারে। তাই হাতের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুব জরুরি। কিছু সময় পরপর সাবান পানিতে হাত ধুয়ে নিলে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

সাবান পানিতে হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা আগেও বলতাম। তবে এত ঘন ঘন নয়। আমরা বলতাম খাওয়ার আগে এবং শৌচাগার ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধুলে অসুখবিসুখ, বিশেষত পেটের অসুখ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু এখন করোনার বিপদ। তাই বারবার হাত ধোয়ার কথা বলা হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। এর প্রথম কথা হলো বাইরে চলাচলের সময় মুখে মাস্ক পরতে হবে। এটা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। আর দ্বিতীয়ত, বারবার সাবান পানিতে হাত ধুয়ে নিতে হবে। অন্য আরও অন্তত দুটি বিধি মেনে চলার কথা বলি। একটি হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভিড় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।

নিউ–নরমাল কী?
আমরা যদি অন্তত চারটি প্রচলিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা সম্ভব। তখন হয়তো করোনা মহামারি শুরুর আগের অবস্থার কাছাকাছি আমরা পৌঁছে যেতে পারব। যদিও তখনো কিছু সংক্রমণ থাকবে, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। এই অবস্থাটাই নিউ–নরমাল। এই নাম থেকেই বোঝা যায় নতুন অবস্থায় আমাদের জীবন যাপন প্রণালীতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকা। আরও কিছু দিন মুখে মাস্ক ব্যবহার। হাঁচি–কাশি দিতে সাবধান, যেন অন্য কারও নাকেমুখে সরাসরি হাঁচির ঢেউ না লাগে। ভালো হয় যদি নাক–মুখের সামনে নিজের হাতের কনুই ভাঁজ করে হাঁচি–কাশি দিই। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় জোড়ে কথা বলা বা অট্টোহাসি যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি। এ সব দৈনন্দিন জীবনে চর্চায় নিয়ে আসা কঠিন হলেও নিউ–নর্মাল সময়ে অবশ্য প্রয়োজন। না হলে করোনার আশঙ্কা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন।
জাপানসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মানুষ একে অপরকে অভিবাদন জানায় মাথা নিচু করে। সেখানে হ্যান্ডশেকের চল নেই। এর ফলে ওসব দেশে কিছু ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ কম। আবার জাপানে দেখা যায় কোনো ভবনের করিডোরে চলা ফেরার সময় একজন একটু থেমে অন্যজনের যাওয়ার সুযোগ করে দেন। এটা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার একটি দৃষ্টান্ত। কোভিড–১৯ মহামারির অনেক আগে থেকেই জাপানে দৈনন্দিন জীবনে এ ধরনের স্বাভাবিক পদ্ধতির চল ছিল। হয়তো এসব কারণেই জাপানের মতো দেশগুলোতে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হয়েছে।

কবে আসবে নিউ–নরমাল?
আমাদের দেশে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের হার ওঠানামার মধ্য দিয়ে যদিও কমছে, কিন্তু যে কোনো সময় এই হার আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিগুলো সাধারণ মানুষ খুব একটা মেনে চলছে না। অথচ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা যায় এবং সেটাই দরকার। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে করোনার কার্যকর টিকা আবিষ্কার ও সব দেশের মানুষের কাছে সহজলভ্য না হওয়া পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। সে জন্য হয়তো আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আব্দুল কাইুয়ম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]