করোনা টিকা নিয়ে আরও পাঁচটি জরুরি প্রশ্ন

টিকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

১.ডিজিটাল টিকা পাসপোর্ট কী?

এটা আর কিছু না, টিকা গ্রহণের ‘ডিজিটাল সনদ’। আমাদের দেশে করোনার টিকা গ্রহণের পর টিকা সনদ দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা কি ডিজিটাল হবে? দেশের বাইরেও ডিজিটাল পাসপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে? এটা এখনই চিন্তা করা দরকার। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ করোনা টিকার ডিজিটাল পাসপোর্টের কথা ভাবছে। এখন আমাদের বিদেশে যেতে কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হয়। ঠিক তেমনি, খুব শিগগিরই করোনারভাইরাসের টিকা নেওয়া হয়েছে কি না, তার সনদের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আসবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ একটি বিস্তারিত লেখা ছাপা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পাসপোর্টের মতো করোনা টিকার আন্তর্জাতিক ডিজিটাল পাস বা পাসপোর্টের ধারণাটি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। ব্যাপারটা শুধু বিভিন্ন দেশের সরকারের নীতিই না, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইতিহাদ এয়ার ওয়েজ, এমিরেটস প্রভৃতি বিমান সংস্থা যাত্রীদের জন্য টিকা গ্রহণের ‘ডিজিটাল পাসপোর্ট, বা ‘কোভিড-১৯ নেগেটিভ’ সনদ রাখার নিয়ম করতে যাচ্ছে বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এ ধরনের বিধি এখনো অন্য কয়েকটি রোগের জন্য চালু রয়েছে। যেমন, কোনো কোনো দেশে যেতে ইয়েলো ফিভার, রুবেলা প্রভৃতির টিকার সনদ দেখাতে হয়। করোনার ক্ষেত্রে আরও ভালো হবে যদি ডিজিটাল সনদের ব্যবস্থা করা হয়। ডেনমার্ক সরকার তিন-চার মাসের মধ্যে ‘ডিজিটাল টিকা পাসপোর্ট’ চালু করবে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন ডিজিটাল টিকা পাসপোর্টের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। আমাদেরও এগিয়ে থাকতে হবে। টিকা গ্রহণের পর ডিজিটাল টিকা পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।

২. অ্যান্টিবডি তৈরিতে কত সময় লাগবে?

এটা একটা বড় প্রশ্ন। এ সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিকা গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শরীরে কার্যকর অ্যান্টিবডি কাজ শুরু করে দেয়। ফাইজার ও মডার্নার টিকার ক্লিনিক্যাল টেস্টে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের সপ্তাহখানেকের মধ্যে ৯৫ শতাংশ এফিকেসি (ক্লিনিক্যাল টেস্টে প্রাপ্ত সক্রিয় সাফল্য) অর্জিত হয়। অন্যদিকে প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের ১০ দিন পর মাত্র ৫২ শতাংশ সক্রিয়তা (এফিশিয়েন্সি) পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এখন অক্সফোর্ডের টিকা দেওয়া হচ্ছে। পরে হয়তো অন্য টিকাও আসবে। ওই সব টিকার মাধ্যমে অ্যান্টিবডি সৃষ্টির জন্য সময়ের ভিন্নতা থাকতে পারে।

৩. টিকা গ্রহণের পর ব্যথানাশক ওষুধে কি টিকার কার্যকারিতা কমে যায়?

এ রকম একটি প্রশ্ন আমাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে উল্লেখ করা হয়েছে যে টিকা গ্রহণের পর কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি থাকলে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন নিরাপদ। তবে টিকা গ্রহণের আগে ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।

৪. বেশি বয়স্কদের জন্য টিকা কি কার্যকর?

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যথেষ্ট কার্যকর। পরীক্ষায় তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।

৫. টিকার মেয়াদ কত দিন?

এটা এখনই বলা মুশকিল। ধারণা করা হয়, এক বছর তো বটেই। হয়তো ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো প্রতিবছর টিকার প্রয়োজন হতে পারে। তবে করোনার টিকার মেয়াদ আরও বেশিও হতে পারে। গবেষকেরা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করে দেখছেন।
নবজাতকের অ্যান্টিবডি
অনেক সময় আমরা হয়তো মনে করি সন্তানসম্ভবা নারীদের করোনার টিকা দিলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অন্তঃসত্ত্বাদের টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর ফলে নবজাতকেরা অ্যান্টিবডিসহ জন্মগ্রহণ করবে।

সংক্রমণের হার ৩-এর কম

আরও কয়েক সপ্তাহ যদি আমাদের দেশে সংক্রমণের হার ৩ শতাংশের কাছাকাছি থাকে, তাহলে অনেকটা নিরাপদ বোধ করা যাবে। কিন্তু মাস্ক পরা ও সাবান–পানিতে হাত ধোয়ার অভ্যাসটি আমাদের সব সময় মেনে চলতে হবে। এমনকি টিকা গ্রহণের পরও এসব স্বাস্থ্যবিধি সবার মেনে চলা দরকার।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]