বেশি সাবধানতা কি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে

অনেকের মনের কিছু প্রশ্নের উত্তর মেডিকেল নিউজ টুডে, নিউজলেটারে (২১ অক্টোবর ২০২০) প্রকাশিত হয়েছে। যেমন ধরা যাক অতি সতর্কতার বিষয়টি। সব সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে, খুব সাবধানে চলাফেরা করলে কি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যেতে পারে? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকের মনে স্বাভাবিকভাবেই উঠতে পারে। কারণ, আমরা দেখেছি, বিদেশ থেকে দেশে বেড়াতে এসে প্রবাসীদের অনেকে প্রথমেই পেটের অসুখ বা ধূলিধূসর দূষিত বাতাসের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই আবার সুস্থ হয়ে যান। আমরা ভাবি, বিদেশে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার  খেয়ে, পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস গ্রহণ করে এবং বেশি সাবধানে থেকে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন বলেই দেশে এসে সামান্য হেরফের হলেই অসুস্থ হয়ে যান। কথায় বলি, অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস! অর্থাৎ এ ধরনের পরিস্থিতির একটা ব্যাখ্যা হিসেবে আমরা ধরে নিই, অসুখ–বিসুখের পরিবেশে থাকার দরকার আছে। না হলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং সামান্য কারণেই কেউ রোগাক্রান্ত হতে পারেন। এটা আমাদের অনেকের একটি ধারণা। অবশ্য ঋতু পরিবর্তনের সময় কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ জ্বর, সর্দি–কাশি প্রভৃতি ধরনের অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এবং যারা অসুখ–বিসুখের পরিবেশে থাকতে অভ্যস্ত, তাদের হয়তো সাধারণ জ্বর তেমন হয় না। এর ভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে অতি সতর্কতা পরিহারের ফর্মুলা খাটাতে গেলে মহা বিপদে পড়তে হবে।

এটা প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বাইরে চলাফেরায় সব সময় একে অপরের থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরে থাকতে হবে, বেশি ভিড়ের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না, বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক পরতে হবে, কিছু সময় পরপর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। তাহলেই কেবল আমরা মোটামুটি নিরাপদ থাকতে পারি।

বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের সমস্যা বেশি। হাঁপানি, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের যথাসম্ভব ঘরে থাকা উচিত। তাহলে কোভিড–১৯ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তখন হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে এবং আক্রান্তদের সুচিকিৎসা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন হয়তো সবার কাছে এসে যাবে এবং বেশির ভাগ মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। এই সুযোগ লাভের জন্যই এত লকডাউন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়। একে অতি সাবধানতা বলে হালকাভাবে দেখা ঠিক নয়। এই সাবধানতা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমাবে না, বরং কোভিড–১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাবে।

ভিটামিন ডি কীভাবে পাব

সাধারণত সামুদ্রিক মাছের তেল, ডিম, বিশেষভাবে ডিমের কুসুম, দুধ ও দুধের তৈরি খাদ্যদ্রব্য, মাখন, পনির, সয়া দুধ, কমলা, গরুর কলিজা প্রভৃতি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য। তবে সমস্যা হলো, সবাই সমান হারে এই সব খাদ্যদ্রব্য থেকে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করতে পারেন না। সূর্যের আলো থেকে শরীরে ভিটামিন ডি সংশ্লেষণের হারও সবার জন্য সমান নয়। বয়স বাড়লে ভিটামিন ডি–এর ঘাটতি দেখা দেয়। তখন হয়তো ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ দরকার। তবে এসব বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

টিকা আসছে

সরকার আপাতত যে তিন কোটি ডোজ টিকাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করেছে, তা জনপ্রতি দুই ডোজ হিসাবে দেড় কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে। অগ্রাধিকার দেওয়া হবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের। আমাদের আরও টিকার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। যেন অল্প সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করে রাখতে পারি। তাহলে আমরা হয়তো আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে করোনাভাইরাসমুক্ত থাকতে পারব।

আব্দুল কাইয়ুম: মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
[email protected]