অষ্টম শ্রেণি - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ১ : সৃজনশীল প্রশ্ন (১)

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

অধ্যায় ১

সৃজনশীল প্রশ্ন

তরুণ আরমান আলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম থেকেই কিছু আত্মীয় নিজেদের সুবিধার জন্য আরমান আলীর কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সুযোগ বুঝে একসময় তারা আরমান আলীকে নানা কৌশলে ক্ষমতা থেকে সরায় এবং পরে তাকে হত্যা করে।

প্রশ্ন

ক. সম্রাট আকবরের সেনাপতি কে ছিলেন?

খ. বাংলার নবজাগরণ কী, ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের আরমান আলীর ঘটনার সঙ্গে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত ঘটনা কি বাংলার স্বাধীনতা হারানোর কারণ? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর

ক. সম্রাট আকবরের সেনাপতি ছিলেন মানসিংহ।

খ. বাংলায় ইংরেজ শাসনের প্রভাবে এ দেশের মানুষের মধ্যে যে সচেতনতা তৈরি হয়, তাকেই বাংলার নবজাগরণ বলে।

ইংরেজরা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এলেও একসময় তারা এ দেশে শিক্ষাবিস্তারসহ বিভিন্ন সমাজসংস্কারমূলক কাজ করতে থাকে। আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের ফলে এখানকার মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়। তারা একসময় সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করে ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ইতিহাসের এই ঘটনাই বাংলার নবজাগরণ।

গ. উদ্দীপকের আরমান আলীর ঘটনার সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণ এবং পরবর্তী সময়ে তাঁকে হত্যার ঘটনার মিল রয়েছে।

নবাব আলীবর্দী খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রিয় নাতি সিরাজউদ্দৌলা মাত্র ২২ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। এই সময় তাঁর সামনে একদিকে ছিল চতুর ইংরেজ শক্তি ও হামলাকারী বর্গিরা, অন্যদিকে ছিল বড় খালা ঘসেটি বেগম ও সিপাহসালার মীর জাফর আলী খানের মতো ঘনিষ্ঠজনদের ষড়যন্ত্র। এর ফলে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন এবং পরবর্তী সময়ে নিহত হন। এর ফলে এ দেশের শাসনক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ইংরেজদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা পায়। উদ্দীপকের আরমান আলীর তরুণ বয়সে চেয়ারম্যান হওয়ার সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলার কম বয়সে নবাব হওয়ার সাদৃশ্য দেখা যায়।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্বজনদের মধ্যে তাঁর এই ক্ষমতা গ্রহণকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। পলাশীর যুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ঘটানো হয়। পরবর্তী সময়ে ইংরেজ দোসরদের হাতেই সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে উদ্দীপকের আরমান আলীর ক্ষেত্রেও ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তার আত্মীয়স্বজন নিজেদের স্বার্থে তার বিরোধিতা করতে থাকে। একসময় তারা আরমান আলীকে হত্যাও করে, যার সঙ্গে পারিবারিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সিরাজউদ্দৌলার পতনের ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতাচ্যুতি ও মৃত্যুর ঘটনা বাংলার স্বাধীনতা হারানোর কারণ। উক্ত ঘটনার মাধ্যমে ইংরেজরা মূলত শাসন ক্ষমতায় তাদের প্রভাব রাখতে শুরু করে।

মীর জাফর ও পরবর্তী সময়ে মীর কাশিমকে ইংরেজরা বাংলার নবাব মনোনীত করলেও নানা কারণে তাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে মীর কাশিমকে পরাজিত করে ইংরেজরা বাংলার শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ধূর্ত ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা, বিহার ও ওডিশার দেওয়ানি লাভ করেন। দেওয়ানি লাভের পর ইংরেজরা, অর্থাৎ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি খাজনা ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। অন্যদিকে নবাব মূলত বৃত্তিভোগীতে পরিণত হন। নবাব শাসন ও বিচারের দিকটি দেখার সুযোগ পান। ক্লাইভ কর্তৃক এ অদ্ভুত শাসনই ইতিহাসে দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে শাসনক্ষমতা সুদৃঢ় করে। কিন্তু ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেরাই শাসন শুরু করে। ব্রিটিশদের এই শাসন ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ফলে ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলার শাসনক্ষমতা ছিল ইংরেজদের হাতে। তাই স্পষ্টতই সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যু বাংলার স্বাধীনতা হারানোর কারণ।

মো. আবুল হাছান, সিনিয়র শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা

আরও পড়ুন