গণিতপ্রেমী বন্ধুরা, আশা করি, তোমরা সবাই ভালো আছ। আজ আমি তোমাদের সঙ্গে এমন কিছু মজার গাণিতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব, যা আসলেই জীবন বাঁচানোর মতো বা তোমরা বলতে পারো, হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মতো।
আমরা তো প্রতিদিনের জীবনে কত গাণিতিক বিষয়ের সম্মুখীন হই। কিছু আমরা সহজেই বুঝতে পারি, আবার কিছু বুঝতে কষ্ট হয়। তেমনভাবেই আমরা স্কুল-কলেজে বা বিভিন্ন জায়গায় গাণিতিক সমস্যা পাই। কখনো আমরা সহজেই সমাধান করতে পারি, আবার কখনো চুল ছিঁড়ে ফেলার মতো অবস্থা হয়। বিখ্যাত হাঙ্গেরিয়ান গণিতবিদ পল আরডোস মনে করতেন, গণিতের প্রতিটি সমস্যারই একটি সুন্দর প্রমাণ থাকা সম্ভব। আজ আমরা তেমনই কিছু সুন্দর ও সহজ সমাধান দেখব।
পাগল করা যোগ:
আমরা যারা গণিত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি, তারা হয়তো কার্ল ফ্রেডরিক গাউসের নাম শুনেছি। তিনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের একজন। কথিত আছে, তিনি নাকি কথা বলার আগেই গণিত করতে শুরু করেছিলেন! অনেক ছোট বয়সেই তাঁর এ সুন্দর আবিষ্কারের জন্য বাহ্বা দিতে হয়! অনেক কাল আগের কথা, তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন। একদিন তাঁর স্কুলের শিক্ষক তাঁদের শায়েস্তা করার জন্য ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত যোগফল লিখতে বললেন। ক্লাসের সবাই তো খাতা–কলম ছিঁড়ে ফেলার মতো অবস্থা। কিন্তু ছোট্ট গাউস একটি ফন্দি আঁটলেন। তিনি যোগ শেষ করে অল্প সময়ের মধ্যেই শিক্ষকের কাছে খাতা জমা দিলেন এবং সেটি ছিল সম্পূর্ণ নির্ভুল। শিক্ষক যতক্ষণে এটি করতে দিয়ে নিজের চেয়ারে বসবেন, সেই সময়েই গাউসের সমাধান করা শেষ দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। ক্লাসের বাকি সবাই গাউসের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে ছিল!
এখন তো নিশ্চয়ই সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, গাউস কীভাবে এত সহজে যোগটি করেছিলেন!
কী ছিল তাঁর সমাধানের কৌশল, ছবিতেই দেখে নাও।
এখানে প্রথম সংখ্যা ১ ও শেষ সংখ্যা ১০০। এ দুটো মিলে হয় ১০১। আবার একইভাবে দ্বিতীয়টা হলো ২ ও ৯৯ এবং এদের যোগফল হলো ১০১। একইভাবে তৃতীয়টা ৩ ও ৯৮ এবং এদের যোগফল ১০১। এভাবে মোট ৫০টি ১০১ রয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছ ১ থেকে ১০০–এর যোগফল হবে ৫০×১০১= ৫০৫০।
তো এভাবে সহজেই গাউস ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করেছিলেন!
একটা মজার বিষয় জানিয়ে রাখি। গাউস যে আবিষ্কার করেছিলেন, সেটি নিয়ে যদি আমরা একটু ঘাঁটাঘাঁটি করি, তাহলে একটি বিখ্যাত সূত্র বেরিয়ে আসবে। এটি আমি তোমাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। আপনমনে গণিতচর্চায় তোমরা আশা করি এটা বের করে ফেলতে পারবে!
নিচের ভিডিও থেকে দেখে নিতে পারো গাউসের এই অসাধারণ আবিষ্কারের ঘটনা ও তাঁর ব্যাখ্যা।
শেষ অঙ্কের শেষ কীভাবে?
তোমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ৭৫২৫ এর শেষ অঙ্কটি কত, তাহলে কি বলতে পারবে?
না, ক্যালকুলেটর টিপে লাভ নেই! এটিও একটি মজার ও সুন্দর গাণিতিক সমস্যা।
তো চলো দেখে নিই, এটা কীভাবে করা সম্ভব।
একটু লক্ষ করলেই দেখব—
৭১=৭
৭২=৪৯
৭৩=৩৪৩
৭৪=২৪০১
আবার,
৭৫ = ১৬৮০৭
৭৬ =১১৭৬৪৯
৭৭=৮২৩৫৪৩
৭৮=৫৭৬৪৮০১
এতক্ষণে নিশ্চই তোমরা বুঝে গেছ, প্রতি চারবারে এককের ঘরে ৭,৯,৩ ও ১ এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
যেহেতু প্রতি চারবারে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে, তাই ৫২৫ কে ৪ দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ থাকে ১।
অতএব ৭৫২৫ এর শেষ অঙ্কটি হবে ৭ (শেষ অঙ্কটিই কিন্তু এককের অঙ্ক)!
তো, আজ এ পর্যন্তই। অন্যদিন দেখা হবে নতুন কোনো গাণিতিক আলোচনা নিয়ে। তত দিন চালিয়ে যাও আপনমনে গণিতের চর্চা। সত্যি হোক তোমার গণিতের স্বপ্নযাত্রা।