ফিবোনাচ্চি দিয়ে গেলেন | গণিত ইশকুল

বছরব্যপী গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

গণিতপ্রেমী বন্ধুরা, আশা করি তোমরা ভালো আছ। আজ আমরা গণিতের একটি মজার ধারা নিয়ে আলোচনা করব। অনেকে হয়তো নাম দেখেই বুঝে গেছ। আমরা অনেকেই হয়তো ফিবোনাচ্চিকে চিনি, আবার অনেকে না–ও চিনে থাকতে পারি। তবে চিন্তা নেই। আজ আমরা তাঁর সম্পর্কেও একটু জানব, তবে মূল বিষয় হলো তাঁর আবিষ্কার ‘ফিবোনাচ্চি ধারা’ নিয়ে।

তবে মূল লেখায় যাওয়ার আগে বলি, আমার গতবারের লেখাটায় একটা ভুল ছিল, সেটা নিয়ে একটু কথা বলি।

সংশোধনী:

স্বর্ণাক্ষরে সোনালি অনুপাত’ নিয়ে লেখায় সোনালি অনুপাতের যে উদাহরণগুলোর কথা বলা হয়েছিল, তার অনেকগুলোই আসলে মিথ, অর্থাৎ বাস্তব নয়

এজন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং তোমাদের সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। চলো, এবার আসি মূল আলোচনায়।

গণিতপ্রেমীদের কাছে একটি সুন্দর ও মজার বিষয় হলো এই ফিবোনাচ্চি ধারা। এটির আবিষ্কারক ছিলেন বিখ্যাত ইতালীয় (তাঁকে মধ্যযুগের সবচেয়ে প্রতিভাবান গণিতজ্ঞদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হতো) গণিতবিদ লিওনার্দো দ্য পিসা। তাঁর ডাকনাম ছিল ফিবোনাচ্চি এবং পরবর্তী সময়ে তিনি ফিবোনাচ্চি নামেই অধিক পরিচিতি লাভ করেন। প্রথমে আসি ফিবোনাচ্চি ধারা বলতে কী বোঝায়, সে কথায়। কোনো ধারার সংখ্যাগুলোকে তার পূর্ববর্তী দুটি পদের যোগফল আকারে প্রকাশ করা গেলে তাকে ফিবোনাচ্চি ধারা বলে। এই ধারাটি (০) শূন্য থেকে শুরু হয় (তবে সব সময় যে শূন্য থেকে শুরু হবে, এমন কোনো কথা নেই, অন্য কোনো সংখ্যা থেকেও শুরু হতে পারে। যেমন নিচের উদাহরণ দুটো দেখো।

1, 1, 2, 3, 5, 8, ... এই ধারার আগে কিন্তু শূন্য নেই। তবে হিসাবের সময় কিন্তু আমরা মনে মনে শূন্যটা ধরে নিয়েছি। আবার এটা দেখো—

5, 6, 11, 17,.... আশা করি তোমরা এবার বুঝতে পেরেছ। এই ফিবোনাচ্চি পদগুলোকে Fn দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ

F0=0,

F1=1,

F2 = F0+ F1= 0+1=1

F3 = F2+F1=1+1=2

এভাবে কোনো ফিবোনাচ্চি পদকে তার আগের দুইটি পদের সঙ্গে যোগ করার মাধ্যমে পেয়ে যেতে পারি। চলো এবার দেখি, ফিবোনাচ্চি কীভাবে এই ধারা আবিষ্কার করেছিলেন! কথিত আছে, তিনি নাকি খরগোশের বংশতালিকা দেখে এই ধারার ধারণা পেয়েছিলেন! খরগোশ প্রজন্মের পর প্রজন্ম এভাবেই বাড়তে থাকে! চলো নিজের ছবি দেখে বিষয়টা বোঝায় চেষ্টা করি।

প্রথম মাসে এক জোড়া খরগোশ থেকে দুটো (এক জোড়া) বাচ্চার জন্ম হয়। এই দুটো বাচ্চা আবার পরবর্তী কালে দুই জোড়া বাচ্চার জন্ম দেয়। এই দুই জোড়া থেকে আবার পরবর্তী সময়ে তিন জোড়া বাচ্চা হয়। এভাবে এটা চলতেই থাকে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, প্রথমে 1+1=2 আবার 1+2 =3 আবার 2+3=5। আশা করি, তোমরা এটা বুঝতে পেরেছ। ফিবোনাচ্চি ধারার সঙ্গে আবার সোনালি অনুপাতের সুন্দর সম্পর্ক আছে, এটি তোমরা গত সপ্তাহে প্রকাশিত ‘স্বর্ণাক্ষরে সোনালি অনুপাত’ লেখাটা থেকে দেখে নিতে পারো।

তবে একটা মজার তথ্য জানিয়ে রাখি। ফিবোনাচ্চি এই ধারা ১৩ শতকের শুরুর দিকে আবিষ্কার করলেও এটা ভারতীয় গণিতবিদেরা সেই ৬ শতকে থেকেই জানতেন। আমাদের জীবনে এই ফিবোনাচ্চি ধারার অনেক ব্যবহার রয়েছে। তার একটা সুন্দর উদাহরণ দেখি চলো।

আমরা এই ফিবোনাচ্চি ধারার সাহায্যে সহজেই মাইল থেকে কিলোমিটার বা কিলোমিটার থেকে মাইল হিসাব করতে পারি। আমরা প্রথমে চলো ধারার কয়েকটা পদ লিখি।1, 1, 2, 3, 5, 8, 13, 21, 34, 55, 89,...।

এবার মনে করো, তুমি 8 মাইল হেঁটেছ, তাহলে সেটা কত কিলোমিটার হবে? আমরা জানি 1km=0.62 miles (প্রায়)। তাহলে 8 মাইল সমান হবে প্রায় 12.90 বা 13 প্রায়। এবার কি তোমরা বিষয়টা ধরতে পেরেছ?

এটা নিয়ে যদি তোমরা আরও ঘাঁটাঘাঁটি করো, তাহলে আরও মজা পাবে এবং অনেক বিষয় তোমরা নিজেই আবিষ্কার করতে পারবে আশা করি।

আজ এখানেই শেষ করছি, তোমাদের জন্য শুভকামনা রইল।