বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা | সৃজনশীল প্রশ্ন

অধ্যায় ২

প্রশ্ন

ক. ‘রসেটা স্টোন’ কী?

খ. প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব কীভাবে গড়ে ওঠে?

গ. উদ্দীপকে ব্যবহৃত চিত্রগুলো কোন সভ্যতার কথা মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘আধুনিক নগর–পরিকল্পনায় উক্ত সভ্যতার প্রভাব বিদ্যমান’—বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. ‘রসেটা স্টোন’ হলো পাথরের একটি বিখ্যাত প্রাচীন ফলক। এতে গ্রিক এবং হায়ারোগ্লিফিক ভাষায় অনেক কিছু লেখা ছিল, যা থেকে প্রাচীন মিসরের অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

খ. অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে ঘিরে প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন গ্রিসের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এখনকার আন্তর্জাতিক অলিম্পিকের মতোই প্রতি চার বছর পরপর এটি অনুষ্ঠিত হতো। এ প্রতিযোগিতায় গ্রিসের বিভিন্ন নগর রাষ্ট্রের ক্রীড়াবিদেরা অংশগ্রহণ করতেন। এর ফলে খেলোয়াড়দের মধ্যে যেমন সম্পর্ক গড়ে উঠত, তেমনি এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে আসা বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ ও শাসকদের মধ্যেও সৌহার্দ্য তৈরি হতো।

গ. উদ্দীপকে ব্যবহৃত বাটখারা ও সুপ্রশস্ত রাস্তার চিত্র প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতার কথা মনে করিয়ে দেয়।

ওজন পরিমাপ পদ্ধতির আবিষ্কার সিন্ধু সভ্যতার উল্লেখযোগ্য অবদান। এ সভ্যতার অধিবাসীরা বিভিন্ন দ্রব্য ওজনের জন্য নানা মাপের ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির বাটখারা ব্যবহার করত। আধুনিক সভ্যতা পরিমাপ পদ্ধতির জন্য সিন্ধু সভ্যতার কাছে অনেকাংশে ঋণী। সিন্ধু সভ্যতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে নগর–পরিকল্পনা। নগর–পরিকল্পনায় আর কোনো সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতার মতো এত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে পারেনি। এ সভ্যতায় নগর–পরিকল্পনার মৌলিক বিষয়গুলো অনেকটাই আধুনিক নগর সভ্যতার অনুরূপ ছিল। সিন্ধু সভ্যতার মানুষের নগর–পরিকল্পনার অন্যতম দিক ছিল সুপ্রশস্ত রাস্তাঘাট। এ রাস্তাগুলো যেমন ছিল পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, তেমনি ছিল সোজা। রাস্তার দুই পাশে ছিল সারিবদ্ধ বাতির ব্যবস্থা। উদ্দীপকে বাটখারা ও সুপ্রশস্ত রাস্তার চিত্র ব্যবহৃত হয়েছে। দুটি চিত্র সিন্ধু সভ্যতার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

ঘ. বিশ্বের আধুনিক যুগের নগর–পরিকল্পনায় সিন্ধু সভ্যতার প্রভাব বিদ্যমান। কেননা আধুনিক নগর–পরিকল্পনার কিছু মূল ধারণা সিন্ধু সভ্যতা থেকেই প্রাপ্ত। সিন্ধু সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলোর অন্যতম। সিন্ধু সভ্যতার যেসব শহর আবিষ্কৃত হয়েছে ,তার মধ্যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সবচেয়ে বড়। সেখানকার সব ঘরবাড়ি ছিল পোড়ামাটি বা রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি। শহরগুলোর বাড়িঘরের নকশা, পথঘাট, পয়ঃপ্রণালী ইত্যাদি থেকে সহজেই বোঝা যায়, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা উন্নত ধরনের নাগরিক সভ্যতায় অভ্যস্ত ছিল।

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নগর–পরিকল্পনা একই রকম ছিল। নগরীর ভেতর দিয়ে ছিল সোজা প্রশস্ত পাকা রাস্তা। রাস্তার পাশে ছিল সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্ট। জল নিষ্কাশনের জন্য ছোট ছোট নর্দমাগুলো বড় মূল নর্দমার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। প্রতিটি বাড়িতে খোলা জায়গা, কূপ ও স্নানাগার ছিল। মহেঞ্জোদারোতে একটি বৃহৎ স্নানাগারের নিদর্শন পাওয়া গেছে, যার মাঝখানে একটি বিশাল চৌবাচ্চা ছিল। এটি ছিল সাঁতার কাটার উপযোগী। সিন্ধু সভ্যতার শহরগুলো পরিকল্পিতভাবে উঁচু ভিতের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহরগুলোর এক পাশে একটি করে নগর দুর্গ নির্মাণ করা হতো।

প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতায় নাগরিক সুবিধার যেসব ব্যবস্থা ও স্থাপত্যকৌশল ছিল, তা পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনুসরণ করা হয়েছে। তাই বলা যায়, আধুনিক নগর–পরিকল্পনায় সিন্ধু সভ্যতার প্রভাব বিদ্যমান।


মিজান চৌধুরী, শিক্ষক
লালমাটিয়া উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা