বাংলা | প্রবন্ধ রচনা

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা

[সংকেত: ভূমিকা, জন্ম ও পরিচয়, মুক্তিযুদ্ধে অবদান, উপসংহার]

ভূমিকা

বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। আগে এই দেশ পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনে ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে সশস্ত্র স্বাধীনতাসংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের অনেক মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন। তেমনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম মুন্সী আব্দুর রউফ।

জন্ম ও পরিচয়

মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪২ সালের ১লা মে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মুন্সী মেহেদী হাসান এবং মায়ের নাম মুকিদুন্নেসা। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তিনি সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিকদের মতো তিনিও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ৮ই এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে আক্রমণের জন্য মহালছড়ির কাছে বুড়িঘাট এলাকার চিংড়ি খালের দুই পাশে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি সেনারা সাতটি স্পিডবোট আর দুটি মোটর লঞ্চ নিয়ে স্বল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার ওপর আক্রমণ করে। মৃত্যু অবধারিত জেনেও তাঁরা রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাননি। আব্দুর রউফ নিজেই দায়িত্ব নিলেন নিজের জীবন দিয়ে সবাইকে রক্ষা করার। হালকা একটা মেশিনগান নিয়ে শত্রুসেনাদের রুখে দিতে থাকলেন। সহযোদ্ধাদের বললেন নিরাপদে সরে যেতে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণে পাকিস্তানিদের সাতটি স্পিডবোটই ডুবে গেল এবং অনেকে মারা গেল। বাকি লঞ্চ দুটো গোলাবর্ষণ আর গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারা পিছু হটতে থাকল। এ রকম মুহূর্তেই হঠাৎ একটা গোলা এসে পড়ল তাঁর ওপর, তিনি শহীদ হলেন। তাঁর পবিত্র রক্তে রঞ্জিত হলো এ দেশের মাটি। এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাঙামাটির বোর্ড বাজারে সমাহিত করা হয়। সেখানে তিনি অন্তিম শয়ানে শায়িত আছেন।

উপসংহার

লাখো প্রাণের বিনিময়ে, বীরের রক্তস্রোত আর মাতার অশ্রুধারায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশের। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। আমরা তাঁকে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব।