বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী তিনি

সানা ম্যারিন
ছবি: সংগৃহীত

সালটা ২০১৯। এই বছরের ১০ ডিসেম্বর ফিনল্যান্ডের ইতিহাসে একটি নতুন ঘটনা ঘটে। ৩৪ বছর বয়সী এক নারী দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তিনি সানা ম্যারিন। বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী তিনি।

সানা ম্যারিনের বর্তমানে চোখ বোলানোর আগে তাঁর অতীতের দিকে একবার ফেরা যাক। জন্ম ১৯৮৫ সালে, রাজধানী হেলসিংকি শহরে। তবে বেড়ে ওঠা তামপেরের পির্ককালায়। ব্রিটানিকা বিশ্বকোষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানই তিনি উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব তামপেরেতে। সেখান থেকে ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর করেন। তাঁর পড়াশোনার বিষয় ছিল প্রশাসন বিজ্ঞান।

পড়াশোনা শেষ করা তাঁর জন্য সহজ ছিল না। কারণ, খুব ছোটবেলায় সানার মা-বাবা আলাদা হয়ে যান। কারণ, বাবা মাদকাসক্ত ছিলেন। এরপর এক নারীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তাঁর মা। এসব কথা ২০১৬ সালে এক ব্লগে ম্যারিন নিজেই লিখেছেন।

বন্ধু মারকুস রাইককোনেনকে সানা বিয়ে করেছেন ২০২০ সালে
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন সানার পরিবারকে ‘রেইনবো ফ্যামিলি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর ম্যারিনের ভাষ্যমতে, তাঁদের অর্থকড়ির অভাব ছিল বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে ছিল ভালোবাসার ‘প্রাচুর্য’। অর্থের যেহেতু প্রাচুর্য নেই, তাই তামপেরে শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পির্ককালায় ভাড়া বাসায় থাকতে হতো। আর এই অর্থের টানাপোড়েন সামাল দিতে ১৫ বছর বয়সে ম্যারিনকে কাজে নেমে পড়তে হয়। সেই সময় গ্রীষ্মের ছুটিতে একটি বেকারিতে কাজ নেন তিনি। এখানেই শেষ নয়। হাইস্কুলে পড়ার সময়ও কাজ করেছেন। অতিরিক্ত দুটি পয়সা রোজগারের জন্য ম্যাগাজিন বিলি করতেন তিনি।

এসব কাজের জন্য পরে তাঁকে অনেক খোঁটাও শুনতে হয়েছে। যেমন পড়াশোনা শেষ করে তিনি ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। আর এই উদাহরণ টেনে পাশের দেশ এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ট হেলমে তাঁকে ‘সেলস গার্ল’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। সানা ম্যারিনের দেশ পরিচালনার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন মার্ট। আর ঝানু রাজনীতিক সানা ম্যারিন এটিকেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এস্তোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে টুইটে লিখেছিলেন, তিনি একজন গর্বিত ফিনল্যান্ডবাসী। সেখানে একটি দরিদ্র পরিবার তাঁর সন্তানদের শিক্ষিত করতে পারে এবং লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হতে পারে একজন ক্যাশিয়ার। এ জন্য পরে অবশ্য ফিনল্যান্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিল এস্তোনিয়া।

সানা ম্যারিন
ছবি: সংগৃহীত

সানা ম্যারিনের রাজনীতিক হয়ে ওঠার যাত্রা অবশ্য বেশ আগে থেকেই শুরু। ২০০৪ সালে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ২০০৬ সালে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন তিনি। দুই বছর পর তামপেরে সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। ২০১২ সালে আবারও নির্বাচন করেন এবং জয়লাভ করেন তিনি। পরের বছর হন প্রধান কাউন্সিলর। অর্থাৎ ২০ বছর বয়সেই রাজনীতি শুরু করেন। ২৭ বছর বয়সে বসেন নগর রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে।

এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়া। ৩০ বছর বয়সে আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন সানা ম্যারিন। দুই বছর পর সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির উপনেতা নির্বাচিত হন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাঁরই দলের নেতা আন্তি রিননে। তিনি সানা ম্যারিনকে পরিবহন ও যোগাযোগবিষয়ক মন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। এরপর রাজনৈতিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে আন্তি পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী হন সানা।

ফিনল্যান্ডের নারীদের মধ্যে সানা ম্যারিন শুধু রাজনীতিতে এগিয়েছেন তা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, তিনি যে জোট সরকার গঠন করে ক্ষমতায় রয়েছেন, সেই জোটে রয়েছে পাঁচটি দল। আর এই পাঁচটি দলের চারটিরই নেতৃত্বে রয়েছে নারী। ২০১৯ সালে এই চার নারীর বয়স ৩৫ বছরের নিচে ছিল। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৩ সালে ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টের ৩০ শতাংশ আসন ছিল নারীদের দখলে। ২০০৭ সালে এই সংখ্যা হয় ৪০। আর ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৪৭ শতাংশ আসন নারীদের দখলে চলে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী পদ নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনো আমার বয়স এবং আমি নারী না পুরুষ, এটা নিয়ে ভাবিনি।’

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০২০ সালের আগস্টে তিনি বিয়ে করেন। এ ঘটনাও সাড়া ফেলেছে। কারণ, বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে করোনাকালে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৪০ জন অতিথি। বর বন্ধু মারকুস রাইককোনেন। সানার সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন মারকুস। এই দম্পতির একটি সন্তানও আছে।