নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না;
পরের জন্য তোমার হৃদয় কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও।’
ক. সুখের জন্য কবি কী করতে মানা করেছেন?
খ. ‘এ ধরা কি শুধু বিষাদময়’—চরণটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘সুখ’ কবিতার কোন দিকটির মিল রয়েছে, ব্যাখ্যা করো?
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে ‘সুখ’ কবিতার মূলভাব আলোচনা করো।
উত্তর
ক. সুখের জন্য কবি কাঁদতে মানা করেছেন।
খ. ‘সুখ’ কবিতায় কবি সুখ সুখ করে যারা হতাশ, তাদের উদ্দেশ করে এ উক্তিটি করেছেন। যারা সুখের জন্য সব সময়ই আকুল হয়ে থাকেন। তারা সামান্য দুঃখ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যান। তারা মনে করেন, সুখ ছাড়া জীবন ব্যর্থ। তাদের এ ভাবনা ভুল। কারণ, পৃথিবী ফুলশয্যা নয়। এখানে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। এই সংগ্রামের মধ্যেই সুখ নিহিত।
গ. ‘সুখ’ কবিতায় কবি কামিনী রায় বলেছেন, যারা স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক তারা প্রকৃত সুখী নয়। প্রকৃত সুখী তারা, যারা পরার্থপরায়ণ, অন্যের সুখ-দুঃখের অংশীদার হয়, পরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে। কবি প্রকৃত সুখী হতে সেবা, ভালোবাসা এবং কল্যাণের মাধ্যমে অন্যের দুঃখ-ব্যথা দূর করার জন্য বলেছেন। মানুষ শুধু নিজের সুখের জন্য পৃথিবীতে আসেনি। মহৎ ব্যক্তি সব সময় অন্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যান। ফুল যেমন অন্যকে মুগ্ধ করে, তেমনি আমরাও পরের কল্যাণের জন্য আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করব।
উদ্দীপকের মূলভাবও ‘সুখ’ কবিতার মূলভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এখানে বলা হয়েছে, পরের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ফুল কখনো নিজের জন্য ফোটে না। ফুল মানুষকে মুগ্ধ করে। মানুষকে মুগ্ধ করার মাধ্যমেই নিজের জীবনকে সার্থক করে। ঠিক তেমনি মানবজীবনের উদ্দেশ্যও পরোপকার। এই পরোপকারের মাধ্যমে বিধাতাকে সন্তুষ্ট করা যায়।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপক এবং ‘সুখ’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই নিজের স্বার্থ বলি দিয়ে পরের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। তাহলেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে।
ঘ. ‘সুখ’ কবিতায় কবি বলেছেন, নিজের জন্য নয়, অন্যের উপকারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সুখ। এ সংসারকে কবি যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সংগ্রাম করে জয়ী হওয়ার মাঝে রয়েছে প্রকৃত সুখ। নিজের সুখের জন্য যারা ভাবে, পৃথিবীতে তারা সুখী নয়। কবির মতে, সমাজের অন্য সবার কথা ভুলে কেউ যদি কেবল নিজের স্বার্থ দেখে, সে হয়ে যায় আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও সমাজবিচ্ছিন্ন। আর সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষ প্রকৃত সুখ লাভ করতে পারে না। তাই কবি অন্যের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে বলেছেন।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ফুল নিজেকে খুশি করার জন্য সুবাস ছড়ায় না। ফুলের সুবাস পেয়ে মানুষ মুগ্ধ হয়। মানুষকে মুগ্ধ করতে পেরে ফুলের জীবন সার্থক। তেমনি মানুষের জন্ম নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য নয়, নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখা যাবে না। পরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, কবি কামিনী রায় ‘সুখ’ কবিতায় যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন, ঠিক সে বিষয়টিই প্রদত্ত উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম, শিক্ষক, উত্তরা মডেল স্কুল, ঢাকা