সৃজনশীল প্রশ্ন
অর্পার বাবা গ্রীষ্মের একদিনে তাদের বাড়িতে লাগানো ফুল গাছে পানি দেয়। অর্পিতা তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করে, গাছের গোড়ায় পানি দিলে গাছ কীভাবে খায়? উত্তরে তার বাবা বলেন, গাছ মূল দিয়ে পানি শুষে নেয়। আবার অতিরিক্ত পানি পাতা দিয়ে বের করে দেয়।
ক. উদ্ভিদের পরিবহন কাকে বলে?
খ. কোষ প্রাচীরকে কেন অর্ধভেদ্য পর্দা বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রক্রিয়া দুটি কীভাবে একটি অপরটির থেকে আলাদা? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রথম প্রক্রিয়াটি শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে—বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
ক. উদ্ভিদের পরিবহন বলতে প্রধানত ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন এবং নিম্নমুখী পরিবহনকে বোঝায়।
খ. যে পর্দা দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয় পদার্থের অণুই সহজে চলাচল করতে পারে, তাকে অর্ধভেদ্য পর্দা বলে। কোষপ্রাচীরের মধ্য দিয়ে দ্রাবক ও দ্রাব উভয় পদার্থের অণুই সহজে চলাচল করতে পারে। এজন্য কোষপ্রাচীরকে ভেদ্য পর্দা বলে।
গ. প্রথম প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মূল দিয়ে পানি শোষণ করে। এটি অভিস্রবণ-প্রক্রিয়া। আর দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ অতিরিক্ত পানি পাতা দিয়ে বের করে দেয়। এটি প্রস্বেদনের কারণে হয়ে থাকে। নিচের কারণে প্রক্রিয়া দুটি একটি অপরটি থেকে আলাদা:
১. অভিস্রবণ-প্রক্রিয়ায় পানি কোষের বাইরের কম ঘনত্বের দ্রবণ হতে কোষঝিল্লির মাধ্যমে বেশি ঘনত্বের দ্রবণে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে। অন্যদিকে প্রস্বেদন-প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার বায়বীয় অঙ্গের (যেমন পাতা, কাণ্ড) মাধ্যমে বাষ্পাকারে পানি বের করে দেয়।
২. অভিস্রবণ উদ্ভিদের মূলের বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লির মধ্য দিয়ে হয়। অন্যদিকে অধিকাংশ প্রস্বেদন হয় পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়ে।
৩. অভিস্রবণ-প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি পরিশোষণ করে। অপর পক্ষে প্রস্বেদন-প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়।
৪. অভিস্রবণ-প্রক্রিয়া একই দ্রাবকবিশিষ্ট দুটি দ্রবণের ভেতরে হয়। আর প্রস্বেদন-প্রক্রিয়ায় মূলত পানি বের হয়ে যায়। এখানে দ্রবণ বা দ্রাবকের ভূমিকা মুখ্য নয়।
ঘ. প্রথম প্রক্রিয়াটি (অভিস্রবণ) উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. উদ্ভিদের মূলরোম দিয়ে পানি পরিশোষণ অভিস্রবণ-প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।
২. উদ্ভিদের অভ্যন্তরে এক কোষ থেকে অন্য কোষে পানি প্রবেশ এ প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।
৩. পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়া অভিস্রবণ-প্রক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে এ প্রক্রিয়া প্রস্বেদনের হার নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. কোষের স্বাভাবিক আকার ও আকৃতি ঠিক রাখা এবং কোষের বৃদ্ধিতে অভিস্রবণ-প্রক্রিয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৫. উদ্ভিদের প্রায় সব জৈবনিক কাজের জন্য পানি প্রয়োজন। এ কাজগুলো সব জীবিত কোষেই ঘটে। মূল থেকে পাতা পর্যন্ত বিভিন্ন জীবিত কোষে প্রয়োজনীয় পানি পৌঁছার পেছনে অভিস্রবণ-প্রক্রিয়াই সক্রিয়।
৬. নরম কোষগুলো পানি গ্রহণ করে দৃঢ় হয়। কোষ অভিস্রবণ-প্রক্রিয়ায় পানি গ্রহণ করে।
মোহাম্মদ আক্তার উজ জামান, প্রভাষক, সরকারি রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা