ডিজিটাল প্রযুক্তি - সপ্তম শ্রেণি

সপ্তম শ্রেণির পড়াশোনা

ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার - শিখন অভিজ্ঞতা ২

বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ:

মানুষ তার চিন্তা, দক্ষতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে যখন কোনো সম্পদ তৈরি করে এবং তা মানুষের উপকারের জন্য কোথাও প্রকাশ করে, তখন তাকে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বলে। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদকে কপিরাইট আইনের মাধ্যমে প্রকাশ করলে সবচেয়ে ভালো হয়। কেননা, তখন অন্য কেউ তা নিজের বলে দাবি করতে পারবে না।

হাসির বাবা আফজাল হোসেনের একটি দই তৈরির কারখানা আছে। এই কারখানায় তৈরি দই বাজারে ‘হাসি দই’ নামে বিক্রি হয়। আজ হাসি এই দই কিনে হঠাৎ অবাক হয়ে আবিষ্কার করে দইয়ের স্বাদ অন্য রকম লাগছে। ভালো করে প্যাকেট লক্ষ করে দেখল, সেখানে ‘হাসি দই’–এর পরিবর্তে ‘হাস দই’ লেখা।

অথচ প্যাকেট দেখতে একই রকম, একই রং, একই সাইজ, লেখার ফন্টও একই রকম—সবকিছুই মিল আছে, শুধু ‘হাসি’র জায়গায় ‘হাস’ লেখা।

সেটা খুব ভালো করে খেয়াল না করলে হঠাৎ বোঝার উপায় নেই যে এটা হাসি দই নয়! হাসি খুব চিন্তিত হয়ে বাবার কাছে গিয়ে প্যাকেট দেখিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলল। আফজাল হোসেন সবকিছু শুনে বললেন, ‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ হাসি, ব্যাপারটি লক্ষ করার জন্য। তবে আমাদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাদের হাসি দইয়ের স্বাদ অন্য দইয়ের তুলনায় আলাদা। এর কারণ, এই দই তৈরির ফর্মুলা আমার উদ্ভাবন করা এবং সেটি অন্যগুলোর তুলনায় বেশ আলাদা। এ কারণে এই দই তৈরির কৌশল বা ফর্মুলা একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। যারা আমাদের কোম্পানির দই নকল করে প্রায় হুবহু একই নামে বাজারে ছেড়েছে, আমি দ্রুত আমার এক উকিল বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শ করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যেহেতু আমাদের ট্রেডমার্ক করা আছে, তাই যারা আমাদের এই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ নকল করে বাণিজ্যিকভাবে ছেড়েছে, তাদের অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং বাণিজ্যিকভাবে এই পণ্য বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। হাসি এখন একটু দুশ্চিন্তামুক্ত হলো।

ওপরের গল্পে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আফজাল হোসেন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ তৈরি করেছেন।

আফজাল যেই ফর্মুলা ব্যবহার করে হাসি দই তৈরি করেছেন, সেটি অন্য দইয়ের ফর্মুলা থেকে ভিন্ন। তাই এটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। এরপর তিনি এটি বাজারজাত করেছেন। বাজার থেকে যারা হাসি দই কিনছে, তারা কিন্তু শুধু পণ্য হিসেবে ব্যক্তিগত কাজে এটি কিনছে। অর্থাৎ এই দই কেনার সময় তারা শুধু খাবার অধিকার পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

ব্যক্তিগত কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে কেনার সময় পণ্যটি একজন মানুষ ব্যবহারের সুযোগ পেলেও সেটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের অধিকার পায় না।

অন্যদিকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান, যারা প্রায় হুবহু হাসি দইয়ের আদলে বাজারে হাস দই ছেড়েছে, তারা পণ্যটিকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছে।

বাণিজ্যিক কাজে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবহার করতে গেলে অবশ্যই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদটির যিনি স্বত্বাধিকারী, তাঁর থেকে যথাযথ আনুষ্ঠানিক অনুমতি নিয়ে, তার সঙ্গে চুক্তিপত্র করে তবেই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে।

এবার আমরা একটি কাজ করি, এখানে বেশ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো থেকে আমরা বের করব বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদটি ব্যক্তিগত কাজে নাকি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ব্যবহারটি যথাযথ হচ্ছে কি না।

ক. মিজান একটি বিখ্যাত বাংলা সিনেমা দেখার জন্য একটি ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করল। সেখানে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে তাদের গ্রাহক হলো। কিন্তু ওই ওয়েবসাইটে সিনেমাটি দেখানোর জন্য সিনেমার প্রযোজকের কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করা হয়নি। মিজান এখন খুশি মনে পছন্দের সিনেমা দেখছে।

প্রকাশ কুমার দাস, সহকারী অধ্যাপক, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা