নবম শ্রেণি - অর্থনীতি | অধ্যায় ৩ : সৃজনশীল প্রশ্ন (৪)

নবম শ্রেণির পড়াশোনা

অধ্যায় ৩

আফিয়া বেগমের স্বামী সৌদি আরবে চাকরি করেন। প্রতি মাসে সংসার খরচ ৪০,০০০ টাকা পাঠান। আফিয়া বেগম সংসার ও সন্তানের লেখাপড়ার জন্য খরচ করেন। ২০,০০০ টাকা ব্যাংকে প্রতি মাসে জমা রাখেন। তিনি ৫ বছর পর ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে তার এলাকার দরিদ্র নারীদের দিয়ে বাঁশ, বেতের একটি কুটির শিল্প গড়ে তোলেন।

প্রশ্ন

ক. মধ্যবর্তী দ্রব্য কাকে বলে?

খ. ‘সূর্যের আলো সম্পদ নয়’—অর্থনীতির ভাষায় ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে আফিয়া বেগমের ব্যাংকে ‘টাকা জমানো’ অর্থনীতির কোন ধারণাকে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. ‘আফিয়া বেগমের দ্বিতীয় পদক্ষেপ বাংলাদেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে—উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. যেসব উৎপাদিত দ্রব্য সরাসরি ভোগের জন্য ব্যবহার না করে উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাকে মধ্যবর্তী দ্রব্য বলে।

খ. সূর্যের আলো সম্পদ নয়, কারণ এর অপ্রাচুর্যতা ও হস্তান্তরযোগ্যতা নেই।

কোনো জিনিসকে অর্থনীতিতে সম্পদ হতে হলে তার উপযোগ, অপ্রাচুর্যতা, হস্তান্তরযোগ্যতা ও বাহ্যিকতা—এই চার বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। এগুলোর কোনো একটা ছাড়া কোনো দ্রব্য বা সেবাকে সম্পদ বলা যাবে না। সূর্যের আলোর উপযোগ ও বাহ্যিকতা রয়েছে। কিন্তু অপ্রাচুর্যতা ও হন্তান্তরযোগ্যতা নেই। তাই সূর্যের আলো অর্থনীতিতে সম্পদ নয়।

গ. উদ্দীপকে আফিয়া বেগমের ‘টাকা জমানো’ অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়কে নির্দেশ করে।

মানুষ ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানে অর্জিত আয়ের পুরোটাই ভোগ করে না। আয়ের একটি অংশ রেখে দেয়। এই রেখে দেওয়া অংশই হলো সঞ্চয়। ব্যক্তির সঞ্চয় নির্ভর করে তার আয়, দায়িত্ববোধ ও ব্যাংকের সুদের হারের ওপর।

সঞ্চয়ের গাণিতিক সূত্র হলো—

S= Y-C, এখানে, S= সঞ্চয়, Y= আয়, C= ভোগ।

উদ্দীপকের আফিয়াকে তার স্বামী প্রতি মাসে ৪০,০০০ টাকা পাঠান। তিনি সংসার খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে প্রতি মাসে ২০,০০০ টাকা ব্যাংকে জমা রাখেন। মোট আয় থেকে ভোগ ব্যয় বাদ দিলে সঞ্চয় পাওয়া যায়। অর্থাৎ আফিয়া বেগম তার বর্তমান ভোগের জন্য ২০,০০০ টাকা ব্যয় করেন। বাকি ২০,০০০ টাকা ব্যাংকে জমা রাখেন। সুতরাং বলা যায় আফিয়া বেগমের ব্যয় বাদ দিয়ে টাকা জমানো অর্থনীতিতে সঞ্চয় ধারণাকেই নির্দেশ করছে।

ঘ. আফিয়া বেগমের দ্বিতীয় পদক্ষেপ তথা কুটির শিল্পে বিনিয়োগ বাংলাদেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

মানুষ তার আয়ের যে অংশ বর্তমানে ভোগের জন্য ব্যয় না করে ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য জমা রাখে তাকে সঞ্চয় বলে। আবার এ সঞ্চিত অর্থকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ করা হলে তাকে বিনিয়োগ বলে। সঞ্চিত অর্থ উৎপাদন কার্যে নিয়োজিত করলে মূলধনী দ্রব্যের উৎপাদন বাড়ে। এটি মূলধন গঠন ত্বরান্বিত করে। মূলধন বাড়লে দেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ফলে জাতীয় আয় বাড়ে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

উদ্দীপকের আফিয়া বেগম পাঁচ বছর ধরে টাকা জমান। তার জমানো টাকা দিয়ে ২০ জন দরিদ্র নারীকে নিয়ে বাঁশ ও বেতের একটা কুটির শিল্প গড়ে তোলেন। এখানে আফিয়া বেগম তার সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তর করেন। এ বিনিয়োগ তাকে লাভবান করার পাশাপাশি অন্য অসহায় নারীদেরও জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করছে।

আফিয়া বেগমের সঞ্চয় কুটির শিল্পে বিনিয়োগ করায় সেটি বাংলাদেশের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আবার সেখানে অনেক অসহায় মহিলা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং অসহায় এ নারীরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয়েছে। সুতরাং আফিয়া বেগমের এ কাজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

মুহাম্মদ শামীম, শিক্ষক, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ঢাকা

◀ সৃজনশীল প্রশ্ন (৩)