ভাগশেষ উপপাদ্যের আদ্যোপান্ত | গণিত ইশকুল

বছরজুড়ে গণিত অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি

ছবি: প্রতীকী

এ বছর সাদিক এবং তাসনুভা অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে উঠেছে। আজকে ক্লাসে স্যার তাদের একটা মজার উৎপাদকে বিশ্লেষণ সম্পর্কে শিখিয়েছেন। নাম-ভাগশেষ উপপাদ্য, ইংরেজিতে বলে Remainder Theorem । সেটা নিয়েই তাদের মধ্যে কথা চলছিল।

তাসনুভা বিষয়টা খুব ভালো করে বুঝে গেলেও সাদিকের বোধ হয় কোনো একটা জায়গায় গিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছিল নিয়মটা নিয়ে। সে ক্লাসটা মন দিয়ে করেছে, তবু তাসনুভার সঙ্গে আলোচনার একটা পর্যায়ে ঠিকই আটকে গেলো।এ বছর সাদিক এবং তাসনুভা অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে উঠেছে।

আজকে ক্লাসে স্যার তাদের একটা মজার উৎপাদকে বিশ্লেষণ সম্পর্কে শিখিয়েছেন। নাম-ভাগশেষ উপপাদ্য, ইংরেজিতে বলে Remainder Theorem । সেটা নিয়েই তাদের মধ্যে কথা চলছিল।

আমাদের গণিত ইশকুলের পাঠকের ভেতরও সাদিকের মতো এমন অনেকেই হয়তো আছো। এমনকি এই লেখা শুরু করার আগে আমিও সাদিকের মতোই একজন ছিলাম। এরপর অনেক সময় নিয়ে বিষয়টা বুঝে নিয়ে তারপরই তোমাদের সঙ্গে গল্প করতে হাজির হয়েছি। তো চলো, শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।

একেবারে শুরুতেই আমরা গণিতের কিছু খুঁটিনাটি নিয়ে হালকা আলোচনা করে আসি। ভাগশেষ শব্দটা জড়িত আমাদের চিরচেনা ভাগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে। ভাজ্যকে ভাজক দিয়ে ভাগ করার পরে যে অবশিষ্টাংশ থাকে, সেটাকেই আমরা বলি ভাগশেষ। আর এই ভাগশেষ কোনোক্রমে যদি শূন্য হয়ে যায়, ব্যস কেল্লা ফতে! তখন আমরা ভাজককে বলি ভাজ্যের উৎপাদক বা গুণনীয়ক, ভাজ্যকে বলি ভাজকের গুণিতক।

এই আলোচনায় ভাগশেষ শূন্য হওয়ার ব্যাপারটা আমাদের খুবই কাজে দেবে। তোমরা নিশ্চয়ই জানো, উৎপাদক বলতে কী বোঝায়? কোনো একটা সংখ্যাকে যদি অপর কোনো একটা সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায়, তাহলে এই ‘পরের সংখ্যা’-টিকে ‘প্রথম সংখ্যা’র উৎপাদক বলে। পাটিগণিতে সাধারণ ভাগের ক্ষেত্রে বিষয়টা খুব সহজ হলেও যখন বীজগাণিতিক রাশি, এত্তগুলো চলক চলে আসে, এই সহজ জিনিসটাই বড় দুর্বিষহ হয়ে উঠে।

আরেকটা ব্যাপার মনে করিয়ে দিই তোমাদের। যদি দুই বা ততোধিক রাশির গুণফল শূন্য হলে আমরা বলতে পারি হয়তো তাদের মধ্যে যেকোনো একটা রাশি অবশ্যই শূন্য অথবা দুইটি রাশিই শূন্য (অবশ্যই রাশিটি চলকসংবলিত হতে হবে, চলকবিহীন রাশিকে আমরা এভাবে শূন্য বলতে পারিনা)। আর এই সহজ ব্যাপারটা দিয়েই Middle Term Break বা মধ্যপদ বিভক্তিকরণের মাধ্যমে উৎপাদক বিশ্লেষণ বা তারপর মূল নির্ণয়ের অঙ্ক আমরা কমবেশি সবাই করেছি।

আজকের আলোচনায় প্রয়োজন হবে এমন সবকিছুর নামের সঙ্গে পরিচিত হওয়া শেষ। এবার মূল আলোচনায় আসা যাক। তোমার পছন্দমতো কোনো একটা এক চলকবিশিষ্ট সমীকরণ f(x) নাও। সেটাতে অবশ্যই একটি অজানা চলক, মানে x থাকবে এবং এই x এর যেকোনো একটা মান অবশ্যই থাকবে যার জন্য f(x)=0, এই সমীকরণের সমাধান হয়। অবশ্য, সব সমীকরণের যে সমাধান হয়, সেটাও দাবি করছি না। কিন্তু, আমাদের বোঝার সুবিধার্থে শুরুতে এমন একটি সমীকরণ নিয়েই কাজ করবো যার জন্য f(x)=0 এর সমাধান হয়।

ধরো, ভাজ্য f(x) কে (x-a) ভাজক দিয়ে ভাগ করার ফলে ভাগফল আসবে h(x) এবং ভাগশেষ r । এখানে, ভাজককে হিসাবের সুবিধার্থে (x-a) আকারে নেওয়া হয়েছে, যাতে (x-a) এই পদে x = a বসালে x-a = 0 হয়।

কারন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো, এখান থেকে কোনোভাবে r এর মানটা বের করা। আর সে জন্যই এর নাম ভাগশেষ উপপাদ্য। আমরা জানি, ভাজ্য = (ভাজক × ভাগফল) + ভাগশেষ

অর্থাৎ, f(x) = (x-a).h(x) + r …(1)

এবার খেয়াল করো, f(x) এর প্রথম অংশকে উধাও করে দিতে পারলে আমাদের r থেকে যাবে। এখানে ভাগফল h(x) কে 0 করার কোনো উপায় না থাকায় x = a ধরে x-a = 0 বানিয়ে জোর করে (x-a).h(x)=0 করতে হবে। আমরা কিন্তু এইটার জন্যই সে সময় ভাজক হিসাবে (x-a) নিয়েছিলাম।

উভয়পক্ষে x = a বসিয়ে পাই,

f(a) = (a-a).h(a) + r

বা, f(a) = 0.h(a) + r

বা, f(a) = r

মজার বিষয় দেখো, ভাজ্য f(x) থেকে আমরা সহজেই যেকোনো ভাজকের জন্য ভাগশেষ বের করে ফেলতে পারি। মোদ্দাকথা হলো, আমাদের কাছে থাকা f(x) এ x=c ইনপুট দিলে যে আউটপুট পাব, সেটা হলো f(x) কে (x-c) দ্বারা ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগশেষ। আর এটাই হলো আমাদের চিরপরিচিত ভাগশেষ উপপাদ্যের মূল তত্ত্ব।

আরও পড়ুন