গণনাযন্ত্রের ময়নাতদন্ত (পর্ব ৬)

ENIAC 1946 (Electronic Numerical Integrator And Computer)
ছবি: ব্রিটানিকা

মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটরের আলোচনা আমরা আগের পর্বেই শেষ করেছি। তবে এই আলোচনায় খুব সামান্য কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটরের আরও কয়েকটি আপগ্রেড হলো:

এগুলো নিয়ে বিস্তারিত তোমরা লেখার শেষে দেওয়া উইকি লিংকে গেলে জানতে পারবে।

১৯৪৬ সালে যুদ্ধের প্রায় শেষে ENIAC (Electronic Numerical Integrator And Computer) আবিষ্কৃত হয়, যা ছিল প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। এটি একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল আর্টিলারি ফায়ারিং টেবিল ক্যালকুলেটর হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছিল এবং অন্যান্য অনেক সমস্যা সমাধানের জন্যও এটি প্রয়োগ করা যেত। এতে মৌলিক চারটি গাণিতিক ফাংশন (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ) সেট করা ছিল, যা সেই সময়ের বিদ্যমান যেকোনো ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কম্পিউটারের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি দ্রুত ছিল এবং এটির মেমোরিতে দশ অঙ্কের দশমিক সংখ্যা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেত। তবে ২৭ টন ওজনের বিশাল এই কম্পিউটারের প্রয়োজন ছিল অনেক জায়গার।

কালের পরিক্রমায় ১৯৬১ সালে ব্রিটিশ কোম্পানি কন্ট্রোল সিস্টেম লিমিটেড বাজারে নিয়ে আসে A New Inspiration To Arithmetic Accounting (ANITA), যা ভ্যাকুয়াম টিউব ও কোল্ড ক্যাথড ‘ডেকাট্রন’ কাউন্টিং টিউব ব্যবহার করে বৈদ্যুতিকভাবে পরিচালিত এবং অপারেশনের জন্য পুশ বাটন কি-প্যাড ব্যবহার করা বিশ্বের সর্বপ্রথম ইলেকট্রনিক ডেস্কটপ ক্যালকুলেটরের জায়গা নিয়ে নেয়।

১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এটা একচেটিয়া ব্যবসা করলেও পরবর্তী সময়ে ট্রানজিস্টরের আরও উন্নয়নের ফসল হিসেবে বাজারে আসে The American Friden 130 Series, The Italian IME 84, The Sharp Compet CS10A From Japan-এর মতো তিনটি প্রাথমিক ট্রানজিস্টর-ভিত্তিক ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটর।

একই সঙ্গে ক্যানন, ম্যাথাট্রনিকস, স্মিথ-করোনা-মারচেন্ট, সনি, তোশিবার মতো কোম্পানি এই ফিল্ডে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে উঠেপড়ে লাগে এবং এরই ফলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ক্যালকুলেটর জন্মেছিল, যার মধ্যে রয়েছে তোশিবার Toscal BC-1411 ক্যালকুলেটর।

পরবর্তীকালে ১৯৬৫ সালে আনা হয় Olivetti Programma 101, যা একই সঙ্গে ম্যাগনেটিক কার্ড আইডেন্টিফাই করা, ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ফলাফল দেখানোসহ ইনবিল্ট প্রিন্টার ফ্যাসিলিটি নিয়ে আসে। প্রায় একই টাইমলাইনে বুলগেরিয়ার সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর ক্যালকুলেশন টেকনোলজিস নিজেদের ELKA 22 নিয়ে আসে, যার ভর ছিল প্রায় আট কেজি এবং এটিই প্রথম ক্যালকুলেটর, যা বর্গমূল ফাংশন সমাধান করতে পারত।

জাপানি ও মার্কিন সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কাজে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে, টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টসের মতো কোম্পানি ক্যাননের সঙ্গে, জেনারেল ইনস্ট্রুমেন্ট কোম্পানি সানয়োর সঙ্গে কাজ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর বিকাশের পর অবশেষে আমরা পেলাম Sharp QT-8D Micro Compet ডিভাইস। আজকের ক্যালকুলেটরের মান বিবেচনায় তখন এটি Rockwell Chip (যার প্রতিটি ৯০০টি ট্রানজিস্টরের সমতুল্য) ডিসপ্লে, দশমিক বিন্দু, ডিজিটাল সংযোজন ও ইনপুট ম্যানেজমেন্ট করতে ব্যবহার করত।

তবে এটিতেও বাইরে থেকে বিদ্যুতের সংযোগ দিতে হতো, যার সমাধান হিসেবে এর বিকল্প মডেল The QT-8B–এ রিচার্জেবল সেল ব্যবহার করা হয়। এতে এটি সম্পূর্ণ হ্যান্ডি হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় Sharp EL-8, Canon Pocketronic, Sanyo ICC-0081 চলে আসে, যা মাইক্রোচিপ ইলেকট্রনিক ক্যালকুলেটরের জন্য একটা মাইলফলক উন্মোচন করে।

এভাবেই Busicom-এর Mostek MK6010 (Calculator-on-a-Chip) এবং পরবর্তীকালে আরও ছোট LE-120 Handy বাজারে আসে, যাতে একটি LED ডিসপ্লে ফলাফল দেখায় এবং 4AA ব্যাটারিতে চলে।

আমরা মোটামুটি আধুনিক ক্যালকুলেটরের যুগে প্রবেশ করে ফেলেছি। ইতিহাস নিয়ে আর আলোচনা করব না, কেননা এই আলোচনার শেষ হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটারে, যা আমাদের এই সিরিজের মূল আলোচনা নয়। তোমাদের সঙ্গে অন্য কোনো এক সিরিজে এই যাত্রার বাকিটা নিয়ে আলোচনা করব।

উইকি লিংক:

১. interestingengineering.com/innovation/brief-history-calculators

২. en.wikipedia.org/wiki/Mechanical_calculator