ব্যাকরণ অংশ ও নির্মিতি–দুই'ই গুরুত্বপূর্ণ

এসএসসি পরীক্ষা ২০২৩ - বিশেষ পরামর্শ

বিষয়: বাংলা ২য় পত্র

প্রিয় পরীক্ষার্থী, বাংলা ২য় পত্রে মোট ১০০ নম্বর। নির্মিতি বা রচনামূলক অংশে ৭০ নম্বর ও ব্যাকরণ অংশে ৩০ নম্বর।

অনুচ্ছেদ লিখন: নম্বর ১০

উত্তর করতে হবে ২টির থেকে ১টি 

অনুচ্ছেদ লিখন বলতে যেকোনো বিষয় সম্পর্কে একটি অনুচ্ছেদ লিখতে দেবে। ওই বিষয়ের সামগ্রিক পরিচিতিমূলক একটি প্যারা বা অনুচ্ছেদ লিখবে। কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো তথ্য লেখার দরকার নেই। বিষয়টি কী, এর প্রেক্ষাপট কী, কীভাবে উত্পত্তি হলো, এর বিষয়বস্তু, প্রয়োজনীয়তা, আমাদের জীবনে এর প্রভাব, অর্থাৎ উপকারিতা বা অপকারিতা ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে একটি প্যারা বা অনুচ্ছেদ লিখবে। একাধিক প্যারা না করাই ভালো। অনুচ্ছেদের বিষয়টিকে কেন্দ্রে রেখে চারপাশে তার সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়ে অনুচ্ছেদটি লিখবে।

সারাংশ বা সারমর্ম লিখন: নম্বর ১০ 

উত্তর করতে হবে ২টির থেকে ১টি

সাধারণত গদ্যে লিখিত কোনো উদ্ধৃতির মূলভাব লিখনকে সারাংশ এবং কবিতায় লিখিত কোনো উদ্ধৃতির মূলভাব লিখনকে সারমর্ম বলে। সারাংশের জন্য প্রদত্ত উদ্ধৃতিতে সাধারণত মূলভাবটি প্রকাশিতই থাকে এবং সঙ্গে বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক, উদাহরণ, উপমা, দৃষ্টান্ত ইত্যাদি উল্লিখিত থাকে। আর সারমমের্র জন্য প্রদত্ত উদ্ধৃতিতে সাধারণত মূলভাবটি লুকায়িত থাকে এবং লেখক বিভিন্ন রূপক, প্রতীক বা উদাহরণ, উপমা দিয়ে সেই মূলভাবটি ব্যক্ত করার চেষ্টা করেন। সারমর্ম লেখার সময় আমাদের কবির মর্মে বা অন্তরে লুকিয়ে থাকা ওই গোপন কথাটি, অর্থাৎ মূলভাবটি খুঁজে বের করতে হয়। সারাংশ/সারমর্ম লেখার কতগুলো সাধারণ সূত্র রয়েছে। যেমন—

ক. সারাংশ/সারমর্মের আয়তন ২/৩ বাক্যের বেশি হবে না। প্রথম বাক্যটিতে সাধারণত কোনো দার্শনিক তত্ত্ব বা সত্য প্রকাশ পায় এবং অবশিষ্ট বাক্য প্রথম বাক্যের সহযোগী হিসেবে থাকে।

খ. সারাংশ/সারমর্মে সব প্রকার বাহুল্য বর্জনীয়, অর্থাৎ মূল উদ্ধৃতির সব উদাহরণ, উপমা, যুক্তি-তর্ক, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ইত্যাদি বাদ দিতে হয়।

গ. একই ভাবের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না এবং নতুন কোনো ভাবের অবতারণাও করা যাবে না।

ঘ. সারাংশ/সারমর্ম লিখনের উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি উদ্ধৃতি পড়ে তার মূলসুরটি ধরতে পারা এবং অল্প কথায় শব্দ ব্যবহার করে মূলকথা তুলে ধরা। এখানে বিস্তৃতভাবে লেখার সুযোগ নেই।

ঙ. সারাংশ/সারমর্ম সাধারণত ভাববাচ্যে বা পরোক্ষ ভঙ্গিতে লিখতে হয়। সরাসরি প্রত্যক্ষ ভঙ্গিতে উত্তমপুরুষ ব্যবহার করে লেখা যায় না।

প্রতিবেদন লিখন: নম্বর ১০

উত্তর করতে হবে ২টির থেকে ১টি  

ইংরেজি ‘Report writing’-এর পারিভাষিক রূপ ‘প্রতিবেদন লিখন’। আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে তথ্যমূলক বিবৃতি লিখনকেই বলে প্রতিবেদন লিখন। এসএসসি পরীক্ষায় শুধু সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে হবে।

সংবাদ প্রতিবেদন কী: সাধারণত নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, কোথাও ঘটে যাওয়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা বা বিষয়/প্রসঙ্গ সম্পর্কে তথ্যমূলক বিবৃতি তুলে ধরে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই সংবাদ প্রতিবেদনের লক্ষ্য। একজন রিপোর্টার হিসেবে সংবাদপত্রে প্রকাশ উপযোগী করে আমাদের এ ধরনের প্রতিবেদন লিখতে হয়। সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে কর্তৃপক্ষের কাছে/সম্পাদকের কাছে কোনো আবেদনপত্র লিখতে হয় না। হেডলাইন (শিরোনাম) লিখে এরপর ডেটলাইন (নিজস্ব প্রতিবেদক, তারিখ, স্থান) লিখতে হয় এবং তারপর মূল প্রতিবেদন।

প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি:

  • যে ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখতে বলা হয়, প্রথমেই সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিবেদন লেখার মূলকথাই হলো তথ্য, তথ্য এবং তথ্য।

  • এরপর সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ‘5W1H Formula’ ব্যবহার করে প্রতিবেদনের প্রথম প্যারা লিখতে পারলে সবচেয়ে ভালো। অর্থাৎ W= What, W= Where, W= When, W= Who, W= Why এবং H= How—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একত্র করে প্রথম প্যারা এবং পরে এই তথ্যগুলোই বিস্তারিতভাবে অন্যান্য প্যারায় লিখতে পারো।

  • সুন্দর শিরোনাম দিতে হবে। শিরোনামটি পড়েই ওই সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে প্রতিবেদন লিখতে হবে।

  • প্রতিবেদনের ভাষা সহজ-সরল হওয়া উচিত। কারণ, সমাজের সর্বস্তরের মানুষই প্রতিবেদনের পাঠক হয়ে থাকে। আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ও বর্ণনাকৌশল প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

  • প্রতিবেদন লেখায় কোনো খাম দিতে হয় না। দেখা যায়, প্রতিবেদন শেষে একটি বক্স করে সেখানে প্রতিবেদনের শিরোনাম, নাম, জমাদানের তারিখ, তৈরির স্থান—এসব কথা লেখা থাকে, যা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক ও বাহুল্যদোষ।

পত্রলিখন: নম্বর ১০ 

উত্তর করতে হবে ২টির থেকে ১টি 

এসএসসি পরীক্ষায় সাধারণত আবেদনপত্র, ব্যক্তিগতপত্র, সংবাদপত্রে প্রকাশিতপত্র, ব্যবসায়িকপত্র ইত্যাদি থেকে যেকোনো ২ ধরনের পত্র থাকে, একটির উত্তর লিখতে বলা হয়। প্রতিটি পত্রেরই নিয়মকানুন আলাদা। যেমন—

ব্যক্তিগত পত্র: একান্ত ব্যক্তিগত বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে মা–বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে যে পত্র লেখা হয়, সেটিই ব্যক্তিগত পত্র। বাংলার নিজস্ব রীতিতে ব্যক্তিগত পত্র লিখতে হয়। অর্থাৎ লেখার ক্রম অনুসারে ব্যক্তিগত পত্রের ৫টি অংশ থাকে। যেমন—১. প্রথমেই পত্রের ওপরে ডান দিকে পত্র লেখার তারিখ ও প্রেরকের সংক্ষিপ্ত ঠিকানা, ২. পত্রের শুরুতেই প্রাপকের উদ্দেশ্যে সম্ভাষণ/সম্বোধন, ৩. মূলচিঠি/পত্রগর্ভ, ৪. পত্রের শেষে নিচে ডান দিকে ইতি/বিদায় সম্ভাষণ এবং সবশেষে ৫. শিরোনাম/খাম।

অনেকেরই একটা ভুল ধারণা, শুধু খাতার বাঁ পৃষ্ঠা থেকেই পত্র লিখতে হয়। আসলে যেকোনো জায়গা থেকেই পত্র লেখা শুরু করা যায়। মূলত ২/৩ পৃষ্ঠার মধ্যে ভালো একটি ব্যক্তিগতপত্র লিখতে পারো।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত পত্র: সাধারণত নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তার প্রতিকার চেয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য সম্পাদকের কাছে পত্র লিখতে হয়। আবার কখনো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো সমস্যার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষেও সংবাদপত্রে পত্র লিখতে হয়। এ ধরনের পত্র লেখার জন্য প্রথমেই পত্রিকার সম্পাদকের কাছে একটি সাধারণ আবেদনপত্র লিখবে, যেখানে পত্রটি ছাপানোর জন্য সম্পাদক সাহেবকে অনুরোধ করা হবে। এরপর শিরোনাম লিখে সমস্যাসংবলিত মূল পত্রটি লিখতে হবে। মূলপত্রের শেষে কোনো ইতি/বিনীত নিবেদক এসব কথা লেখা যাবে না, শুধু ...(অমুক) এলাকাবাসীর পক্ষে ...(অমুক) লিখতে হবে। আর সবশেষে শিরোনাম বা খাম এঁকে ডান পাশে সম্পাদক ও পত্রিকার ঠিকানা এবং বাঁ পাশে তোমার ঠিকানা লিখতে হবে। সাধারণত এক পৃষ্ঠায় সম্পাদকের কাছে আবেদনপত্র এবং বাকি ২/৩ পৃষ্ঠায় মূলপত্র লিখতে পারো।

আবেদনপত্র: বিভিন্ন বিষয়/প্রসঙ্গে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন ধরনের আবেদনপত্র লিখতে হয়। আবেদনপত্রের মূল বিষয় হলো—তুমি যে বিষয়ে আবেদন করছ, সেটি তথ্য-উপাত্তের সাহায্যে যুক্তিগ্রাহ্য করে মানবিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আবেদনপত্র লিখতে পত্রের সব অংশগুলোই বাঁ দিক থেকে শুরু করতে হবে।

ভাবসম্প্রসারণ লিখন: নম্বর ১০

উত্তর করতে হবে ২টির থেকে ১টি 

ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ভাবকে সহজবোধ্য করে তোলার নামই ভাবসম্প্রসারণ। ভাবসম্প্রসারণ করার কতগুলো রীতি রয়েছে। যেমন—

ক. যে উক্তি বা অংশের ভাবসম্প্রসারণ করতে হবে, তা পড়ে মূলভাবটি উদ্‌ঘাটন করতে হবে।

খ. যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ভাবটিকে বিশ্লেষণ করতে হবে, অর্থাৎ প্রাসঙ্গিক উদাহরণ/উপমা দিতে হবে।

ঘ. কথার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে না।

ঙ. রচনা সহজ, সরল ও সহজবোধ্য করতে হবে।

চ. ভাবটি সম্প্রসারিত হলেই উত্তর শেষ করবে। তবে ৩/৩.৫ পৃষ্ঠার মধ্যে একটি ভালো মানের ভাবসম্প্রসারণ লেখা যায়। মূলভাব, সম্প্রসারিত ভাব, মন্তব্য–এগুলো লেখার প্রয়োজন নেই।

প্রবন্ধ লিখন: নম্বর ২০

উত্তর করতে হবে ৩টির থেকে ১টি 

তিনটি বিষয় থেকে যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ লিখতে হবে। কোনো সংকেত দেওয়া থাকবে না। তুমি তোমার সুবিধা অনুযায়ী সংকেত ব্যবহার করে প্রবন্ধটি লিখতে পারো। মনে রেখো, ‘রচনা লিখন’ ও ‘প্রবন্ধ লিখন’–এর মধ্যে অনেক পার্থক্য। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লিখতে হয় রচনা, এসএসসিতে লিখতে হয় প্রবন্ধ। অর্থাৎ তথ্যমূলক, জ্ঞানগর্ভ, যুক্তিগ্রাহ্য বক্তব্যের সাহায্যে প্রকৃষ্টরূপে বন্ধনকৃত রচনাই প্রবন্ধ। যেমন: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক, চিন্তামূলক, সমস্যা ও প্রতিকারবিষয়ক, ঋতু ও প্রকৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যবিষয়ক, সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহবিষয়ক ইত্যাদি। প্রবন্ধে প্রয়োজনমতো শিরোনাম করা যাবে, প্যারা করা যাবে।

মো. হুমায়ূন কবীর, প্রভাষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা