অষ্টম শ্রেণি – বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় | অধ্যায় ১ : সৃজনশীল প্রশ্ন (৪)

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

অধ্যায়

সাভার গ্রামটি শিক্ষাদীক্ষায় অনেক পিছিয়ে। ফলে গ্রামবাসী শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ সব দিক থেকে পশ্চাৎপদ। এ গ্রামেরই এক শিক্ষিত, বিত্তবান ও প্রভাবশালী যুবক রাশেদ। তিনি গ্রামটিকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে এলাকাবাসীর মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এলাকাবাসী সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রাশেদের অবিরত প্রচেষ্টায় গ্রামবাসী নারীশিক্ষা, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে।

ক. কত সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়?

খ. ভাস্কো ডা-গামা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন কেন?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত পরিস্থিতির আলোকে ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় কিসের উদ্ভব হয়েছিল, এ সম্পর্কে তোমার মতামত ব্যক্ত করো।

ঘ. ‘রাশেদের মতো উন্নয়নকামী ও সংস্কারবাদী ব্যক্তিদের কর্মতত্পরতার ফলেই ভারতের স্বাধীনতার পথ সুগম হয়েছে’—উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর

ক. ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

খ. পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো ডা-গামা ১৪৯৮ সালে ইউরোপ থেকে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কার করেন। আর এ জলপথ আবিষ্কারের ফলে ভারতবর্ষের সঙ্গে ইউরোপের সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এর ফলে ভারতবর্ষের সঙ্গে ইউরোেপর বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড সহজ হয়ে যায়। এ জলপথ আবিষ্কারের কারণে ভাস্কো ডা-গামা ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

গ. উদ্দীপকে রাশেদ তাঁর গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একজন শিক্ষিত, বিত্তবান ও প্রভাবশালী সমাজসংস্কারক হিসেবে গ্রামবাসীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাদের দায়িত্ব সচেতন করেছেন। নারীশিক্ষা, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার এসব গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়ে গ্রামবাসীকে সচেতন করেছেন। ঠিক তেমনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় নবজাগরণের উদ্ভব ঘটেছিল। রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ইংরেজদের সহযোগিতায় সমাজসংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ইংরেজদের দ্বারা দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও কলেজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নতুন চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটে। বহুকালের প্রচলিত বিশ্বাস, নানা সংস্কার ও বিধান সম্পর্কে তাদের মনে সংশয় ও প্রশ্ন জাগতে থাকে। হিন্দু সমাজ থেকেই সতীদাহের মতো প্রথার বিরুদ্ধে রীতিমতো আন্দোলন শুরু হলো। বিধবা বিবাহের পক্ষে জনমত তৈরি হলো। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক শিক্ষা ও জাগরণের ফলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে।

ঘ. ‘রাশেদের মতো উন্নয়নকামী ও সংস্কারবাদী ব্যক্তিবর্গের কর্মতত্পরতার ফলেই ভারতের স্বাধীনতার পথ সুগম হয়েছে’—উদ্দীপকের এ উক্তির বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, রাশেদ যেমন গ্রামবাসীকে নারীশিক্ষা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে সচেতন করেন, তত্কালীন সময়ে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ সংস্কারপন্থী ব্যক্তির অগ্রণী ভূমিকায় সারা ভারতবাসী জেগে ওঠে। তারা ইংরেজদের জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। ইংরেজদের আধুনিক শিক্ষার সংস্পর্শে এসে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটে। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বিধবা বিবাহের পক্ষে মত তৈরি হয়। মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন ও সংবাদপত্র প্রকাশের মাধ্যমে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হয়। ফলে সমাজের অনাচার নিয়ে যেমন তাঁরা আত্মসমালোচনা করেছেন, তেমনি শাসকদের অবিচারের বিরুদ্ধেও কঠোর সমালোচনা করেছেন। এর ফলে সমাজের সংবেদনশীল মানুষের নজর যায় সমাজের দিকে। ডিরোজিও, বিদ্যাসাগর প্রমুখ অবাধে মুক্তমনা জ্ঞানচর্চার ধারা তৈরি করেন। বাঙালির এই নবজাগরণ কলকাতা মহানগরীতে ঘটলেও এর প্রভাব সারা বাংলাতেই পড়ে। বাংলায় দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক চেতনার জোয়ার আসে। এরই ধারাবাহিকতায় দেখা দেয় বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন। এ সময় অনেক তরুণ সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মুসলমানদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বতন্ত্র মুসলিম লীগ। ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়ে সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের।

মো. আবুল হাছান, সিনিয়র শিক্ষক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, ঢাকা

◀ সৃজনশীল প্রশ্ন (৩)